দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৩ পিএম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ভিক্ষুকের দেখা মিলবে না। হাসপাতালের আঙিনা থেকে শুরু করে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে পর্যন্ত ভিক্ষুক এসে ঘিরে ধরেন রোগী কিংবা রোগীর স্বজনদের। আকুল হয়ে চাইতে থাকেন টাকা। না দেওয়া পর্যন্ত পিছু ছাড়ে না। সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগ কিংবা জরুরি বিভাগ— জনসমাগম আছে এমন প্রায় প্রতিটি স্থানেই দেখা যায় ভিক্ষুকদের। যা রীতিমতো উৎপাতের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ভিক্ষুকের অধিকাংশই মধ্যবয়ষ্ক নারী। তাদের প্রায় সবার সাথে থাকে এক বা একাধিক শিশু। এসব শিশুদেরও ভিক্ষা চাইতে দেখা যায়। এমনকি রোগী বা রোগীর স্বজনদের ব্যাগ ধরে টানাটানি করতেও দেখা যায় এসব শিশুদেরকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১নং ভবনটিতে সবসময় রোগীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। ভবনটির চতুর্থ তলায় রিউমাটোলজি বিভাগের সামনে এক নারীকে হাতে একটি পুরাতন ব্যবস্থাপত্র ও নেবুলাইজার (শ্বাসকষ্টে ব্যবহার) নিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। একই সময়ে ভবনটির নিচতলায় দেখা যায় আরও দুজন ভিক্ষুক। এসময় পাশেই দুজন আনসার সদস্যকে দেখা গেলেও তারা ভিক্ষুকদের কিছুই বলেননি।
বহির্বিভাগের ২নং ভবনের নিচতলায় রোগীদের পুরাতন রিপোর্ট দেওয়া হয়। সেখানে মাঝবয়সী এক অন্ধ লোককে হাঁকডাক দিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। ভিক্ষুক উচ্চস্বরে বলছেন, আমি গরিব অন্ধ, আমাকে দশটা টাকা দিবেন? একবেলা খাবারের টাকা দিবেন? সেখানেও আনসার সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু তারা যেন ভিক্ষুকদের দেখেও না দেখার ভান করছেন।
অন্যদিকে হাসপাতালটির পাঁচটি বহুতল ভবনের ব্লক এ, বি, সি, ডি এবং কেবিন ব্লকেও দেখা গেছে ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য। বিশেষ করে ভবনগুলোর লিফটে প্রবেশের সময় তৈরি হয় জট। এসময় ভিক্ষুকদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে।
বহির্বিভাগ ১নং ভবনের পঞ্চম তলার চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের ডাক্তারের রুমের সামনে লাইনে দাঁড়ানো ফাতেমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, এখানে ভিক্ষুকদের চেনা যায় না। দেখলাম আমার সামনে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎই সবার কাছে ভিক্ষা চাইছেন। এদিক-সেদিক করে কাউকে খুঁজছেন। মূলত তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কিছু টাকার বিনিময়ে লাইনের পেছনে থাকা কাউকে নিজের স্থানে দাঁড় করান। সুযোগ মতো ভিক্ষা করেন। এমনভাবে কাঁদো কাঁদো অবস্থা তৈরি করে বলে, ভিক্ষা না সাহায্য চাই।
হাসপাতালের মসজিদের আঙিনায় দেখা যায় লাইন ধরে বসে আছেন কয়েকজন ভিক্ষুক। বিশেষ করে নামাজের আগে পরে তাদের উপস্থিতি থাকে বেশি। হুইল চেয়ারেও বসে আছেন কেউ কেউ।
‘ডি’ ব্লকের সামনে মোতালেব নামে একজন রোগীর স্বজন বলেন, কে রোগী আর কে ভিক্ষুক বোঝা যায় না। তাদের হাতেও কাগজপত্র থাকে, ওষুধ থাকে। দাবি করে কারও স্বামী, কারও ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। যদিও মোতালেব বলছেন, গত সাতদিন এখানে একজন ভিক্ষুককে দেখছি, যিনি একেকদিন একেক সমস্যার কথা বলেন। কোনোদিন ভাত খেতে চান, কোনোদিন ওষুধের জন্য টাকা চান। কথার ঠিক নাই।
এসব নিয়ে হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্য আফজাল বলেন, ভিক্ষুকদের সাথে পেরে উঠা যায় না। এক দরজা দিয়ে বের করে দিলে আরেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে। তারপরও রোগীদের যেন কোনো প্রকার সমস্যা না হয়, হাসপাতালের ভেতরে যেন ভিক্ষুক প্রবেশ করতে না পারে তা আমরা দেখছি।
হাসপাতালে ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, হাসপাতাল সম্পর্কিত বিষয়ে মিডিয়ায় আমার মন্তব্য করার অনুমতি নেই। যা বলার বলবে মিডিয়া সেল।
তিনি মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক ডা. এসএম ইয়ার ই মাহবুবের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু ডা. এসএম ইয়ার ই মাহবুবের রুমে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
ডিএইচডি/আইএইচ