দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১১ পিএম
দীর্ঘ ১৭ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে থাকার পর ছাড়পত্র পেয়েছেন জুয়েল আফরোজ। রাইড শেয়ারিং অ্যাপসে গাড়ি ডাকলেন। হাসপাতালের ‘সি’ ব্লকের সামনে থেকে কাঁথা-বালিশ নিয়ে গড়িতে উঠতে দেখা গেল। হঠাৎ তার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান আজিজুল হক নামের এক আনসার সদস্য। উঁচু গলায় কিছু একটা চাইছেন। পরে বললেন, তা না হলে ‘স্যারের সাথে কথা বলে যান’। একপর্যায়ে দেখা যায়, জুয়েল ওই আনসার সদস্যকে ৫০ টাকা দিচ্ছেন।
কিসের টাকা দিলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল বলেন, গাড়ি ডেকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম কিছু সময়। আমার বিছানাপত্র গুছিয়ে আসতে দেরি হয়েছে। এখানে গাড়ি পার্কিং করায় ওনাকে (আনসার) টাকা দিতে হয়েছে। না হলে ঝামেলা করে। বাইরে রাস্তায় গিয়ে গাড়িতে উঠতে হতো। ঝামেলায় না গিয়ে দিয়ে দিয়েছি, পঞ্চাশ টাকাই তো।
আজিজুল হক নামের ওই আনসার সদস্যকে অনুসরণ করেন এই প্রতিবেদক। দেখা যায়, হাসপাতাল আঙিনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। মাইক্রো কিংবা সিএনজি যেদিকে যাচ্ছে তিনিও ছুটছেন সেদিকে। গাড়িচালকদের সাথে কথা বলছেন উচ্চস্বরে। কেউ টাকা দিতে না চাইলে দম ফেলারও সময় দেন না, বের করে দেন হাসপাতালের আঙিনা থেকে। বেশকিছু গাড়ি থেকে টাকা তুলতে দেখা যায় এ আনসার সদস্যকে। তাকে সহযোগিতা করছেন জন্টু নামে আরেক আনসার সদস্য।
কিসের টাকা তুলছেন— এমন প্রশ্ন করামাত্রই সটকে পড়েন আনসার সদস্য আজিজুল হক। কিছু সময় বন্ধ থাকে আনসার সদস্যদের অবৈধ টাকা আদায়।হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থাকা লাশঘরের পেছনে বাইক পার্কিং করা নিয়ে এক ব্যক্তির সাথে তর্কে জড়িয়েছেন মাহফুজুল নামে এক আনসার সদস্য। কাছে যেতেই দেখা যায়, দুজনের তর্ক থামাতে এগিয়ে এসেছেন আরও দুজন আনসার সদস্য। বাইক পার্কিং করা ব্যক্তি আনসার সদস্য মাহফুজের ভিডিও করছিলেন। বলছিলেন, ১০-২০ টাকার জন্য তোরা এমন করিস। এখানে এতগুলো বাইক পার্ক করা। আমারটা করলে কি সমস্যা? টাকা দেব না তাই?
এসময় লাশঘরের পেছনে খালি জায়গায় দেখা যায় আরও তিনটি বাইক পার্কিং করা রয়েছে। এসব বাইক কার জানতে চাইলে মাহফুজুল নামের ওই আনসার সদস্য কোনো উত্তর দিতে পারেননি। তার দাবি, হাসপাতাল আঙিনায় গাড়ি পার্কিং নিষেধ।
আনসার সদস্যের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ানো ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায় তার নাম সহিদুজ্জামান। এসেছেন হাসপাতালে ভর্তি স্বজনকে দেখতে। আলাপকালে জানান, এই আনসার সদস্যরা টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না। লাশঘরের পেছনে কেউ আসেও না। এটা কোনো যাতায়াতের পথও না। গাছের নিচে আরও বাইক আছে। কিন্তু কিছুতেই এ আনসার বাইক রাখতে দেবে না।
বাইক রাখতে না দেওয়া কারণ জানতে চাইলে সহিদুজ্জামন বলেন, গতকাল আমি হাসপাতালে এসেছিলাম। একই স্থানে বাইক রাখি। গতকাল যাওয়ার সময় এরা বকশিশ চেয়েছিল, দেইনি। তাই আজ রাখতে দেবে না। যদি নিয়মই হয়ে থাকে রাখা যাবে না তাহলে পার্কিং করার জায়গা দেন সেখানে রাখি। তাও তো নেই। এটা মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় করার পায়তারা বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা মেইলের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএসএমএমইউ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, প্রশাসন ব্লক, ‘ডি’ ব্লকের কোথায়ও গাড়ি পার্কিং করার নির্ধারিত কোনো স্থান নেই। যে যার মতো গাড়ি পার্কিং করছেন। ডাক্তার ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ছাড়া যারাই গাড়ি রাখতে চান তাদের দিতে হয় চাঁদা। সিএনজিতে যাত্রী নিতেও টাকা আদায় করছন আনসার সদস্যরা। এসব জেনেও কথা বলতে নারাজ হাসপাতালটির পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা।
এ নিয়ে ‘ডি’ ব্লকের নিচে দায়িত্বরত মাইদুল নামে এক আনসার সদস্য বলেন, এখানে রোগীদের গাড়ি রাখার বা পার্কিং করার মতো জায়গা নেই। ‘ডি’ ব্লকের নিচের পার্কিং অংশে কাদের গাড়ি রাখা জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। যদিও ‘ডি’ ব্লকের পার্কিং গেটে বড় করে দুটি নির্দেশনা চোখে পড়ে প্রতিবেদকের। যেখানে লেখা— মোটর সাইকেল প্রবেশ ও পার্কিং সম্পূর্ণ নিষেধ। চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্টিকার যুক্ত মোটরসাইকেল বেতার ভবনের নির্ধারিত স্থানে পার্কিং করবে। আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমানের সাথে দীর্ঘ অপেক্ষার পর তার কার্যালয়ে কথা বলেন প্রতিবেদক। সমস্যার কথা শুনে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমার মন্তব্য করার অনুমতি নেই।
হাসপাতাল পরিচালকের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না থাকলে কে বলবেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাকে এখানে এসব বলার জন্য বসানো হয়নি। যা বলার বলবে মিডিয়া সেল।
এরপর বিএসএমএমইউ মিডিয়া সেল প্রধান সমন্বয়ক ডা. এসএম ইয়ার ই মাহবুবের রুমে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। দায়িত্বরত অফিস সহকারী জানান, ডা. এসএম ইয়ার ই মাহবুবের আজ অফিসে আসার সম্ভাবনা নেই।
ডিএইচডি/জেএম