মাহফুজ উল্লাহ হিমু
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫৮ পিএম
চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশেও ৫টি মৌলিক অধিকারের অন্যতম চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার। বেসরকারি খাতে উচ্চমূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হয়। অপরদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা মেলে, তবে অনেক ভোগান্তির বিনিময়ে। দেশের প্রধান ও সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালও এর ব্যতিক্রম নয়।
রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত এই হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন সেবা নেন অন্তত ৫ হাজার মানুষ। প্রতিটি বিভাগের একাধিক চিকিৎসক সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চিকিৎসা পরামর্শ দেন। তবে লম্বা লাইনে টিকিট কাটার ভোগান্তি, চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশের সিরিয়াল পেতে বিশৃঙ্খলায় রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এত কিছুর পরও অনেক চিকিৎসক সঠিক সময়ে নির্ধারিত কক্ষে না আসায় রোগীদের ভোগান্তির মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। যদিও রোগীদের ভোগান্তি ও দীর্ঘ লাইনের কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি ঢামেকের বহির্বিভাগে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তবে ব্যবস্থাটি তেমন একটা কাজে আসছে না।
সম্প্রতি সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
বরিশাল থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব জমির উদ্দিন ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন। উদ্দেশ্য ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক দেখাবেন। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর সকাল ৮টায় টিকিট কেটে ছেলেকে নিয়ে ইউরোলজির বহির্বিভাগে লাইনে দাঁড়ান। তবে সকাল ৯টা ৫১ মিনিটেও চিকিৎসক তার কক্ষে আসেননি৷ বিভাগটির ২ নম্বর কক্ষের সামনের একইভাবে অপেক্ষায় রয়েছেন আরও ৪০ জন মানুষ।
একই চিত্র পাশের চক্ষু বিভাগেও। সকাল ৮টায় চিকিৎসক আসার কথা থাকলেও দুই ঘণ্টা পরও কোনো কক্ষেই তাদের দেখা নেই। ফলে চক্ষু বিভাগের তিন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের জটলা তৈরি হতে দেখা গেছে। ৪ নম্বর কক্ষের সামনে অবস্থান করা আছিয়া বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা মেইলকে বলেন, সকাল ৮টায় হাসপাতালে এসে টিকিট কেটেছি। এখনও ডাক্তারের দেখা পেলাম না। কখন আসবে— কেউ কিছু বলছে না।
চিকিৎসকরা কখন আসবেন— রোগীদের এমন প্রশ্নের জবাবে ৫ নম্বর কক্ষের অ্যাটেনডেন্ট জানান, ওই কক্ষের চিকিৎসক সাড়ে ১০টায় আসবেন। তবে ৪ নম্বর কক্ষের টিকিট কাটা এই প্রতিবেদককে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আপনার রুমের ম্যাডাম আরও আগেই চলে আসবেন। তিনি আগেই আসেন।
ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের দ্বিতীয় তলায় চক্ষু বিভাগের ৪, ৫ এবং ১১ নম্বর রুমে তিনজন মেডিকেল অফিসার রোগী দেখেন। এর মধ্যে ৪ নম্বর রুমের ডা. সানজিদা পারভীন বেলা ১০টা ২০ মিনিটে কক্ষে প্রবেশ করেন। অপর দুই রুমের চিকিৎসক যথাক্রমে সাড়ে ১০টা ও ১০টা ৪৫ মিনিটে নির্ধারিত কক্ষে আসেন।
তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যখন চক্ষু বিভাগের রোগীরা চিকিৎসকের অপেক্ষায় তখন বহির্বিভাগের অনেক বিভাগের চিকিৎসকরা বহু রোগী দেখে ফেলেছেন। যেমন- চক্ষু বিভাগের পাশের মানসিক স্বাস্থ্য, নাক-কান-গলা ও চর্ম-যৌন রোগ বিভাগের চিকিৎসকরা চক্ষু বিভাগের চিকিৎসকরা নির্ধারিত কক্ষে আসার আগেই রোগী দেখা শুরু করেছেন। যদিও তারা সঠিক সময়ে হাসপাতালে এসেছেন কিনা তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
মনিটরিং করা হচ্ছে, প্রয়োজনে ব্যবস্থা
এসব বিষয়ে ঢাকা মেইলের সাথে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের। তিনি বলেন, বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। কেউ কেউ নিয়মিত থাকেন, আবার কেউ কেউ নিয়মিত থাকেন না। সঠিক সময়ে হাসপাতালে অবস্থানের বিষয়ে মনিটরিং করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এটা একটা কালচারে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসকদের সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসা ও অবস্থান নিশ্চিতে আমরা ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবস্থা করেছি। যারা দেরিতে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণও করা হয়। সেন্ট্রালি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) মাধ্যমে এটি মনিটরিং করা হয়।
বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭০-৮০ শতংশ ফিঙ্গার প্রিন্টের হাজিরা কার্যকর রয়েছে। এটি কার্যকরের জন্য সরকার ও আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে শতভাগ না হলেও কাছাকাছি হচ্ছে। এটি সামনে আরও বাড়বে বলে আশা করি।
এ সময় ঢামেক পরিচালক সঠিক সময়ে কাজে না আসা চিকিৎসকদের তথ্য জানতে চান এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
এমএইচ