images

হেলথ

ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে ঢামেক হাসপাতালে

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

১০ জুলাই ২০২৩, ০৯:৪১ পিএম

ঢাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীদের এই চাপ পড়ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ রাজধানীর অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অধিকাংশই ছুটে যান ঢামেক হাসপাতালে। ফলে প্রতিদিনই চাপ বাড়ছে হাসপাতালটিতে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে চাপ সামাল দিতে রোগীদের নির্দিষ্ট কক্ষের বাইরে ফ্লোর বা বারান্দাতেও রাখতে হচ্ছে। তবে রোগীর এত চাপের পরও করা হয়নি আলাদা ইউনিট বা ওয়ার্ড। অন্য রোগীদের সাথে একই সাথে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা।

শুক্রবার রাতে ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের ৬০১ ও ৬০২ ওয়ার্ড ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত ৮২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরের ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৬০৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ২১৭ জন। আর ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১ হাজার ৭৭৩ জন।

ঢামেক হাসপাতালে নতুন করে ৫৮ জন ভর্তি হয়েছে। সব মিলে ঢামেকে ২২৪ জন ভর্তি আছেন। যাদের কেউ কেউ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন।

dmcসরেজমিন দেখা গেছে, ওয়ার্ডের বাইরেও রাখা হয়েছে রোগীদের। রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ঢামেকের চিকিৎসক ও নার্সরা।

দোহার থেকে এসেছেন প্রবাসী জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, গত সোমবার তিনি সৌদি থেকে দেশে ফিরেছেন। পরদিন থেকে তার শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। প্রথমে ওই এলাকায় চিকিৎসক দেখান। পরে স্থানীয় ক্লিনিকে পরীক্ষা করে জানতে পারেন তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। দেরি না করে স্ত্রীকে নিয়ে দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে চলে আসেন। বুধবার থেকে তার চিকিৎসা চলছে। তবে তিনি ওয়ার্ডের ভেতরে সিট পাননি। বাধ্য হয়ে ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডের বাইরে ফ্লোরে মাদুর পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকার সবজি বিক্রেতা শুকুর আলী ঈদের দুইদিন পর থেকে জ্বরে আক্রান্ত। গত রোববার তিনি ঢামেক হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু কোনো সিট পাননি। বাধ্য হয়ে পশ্চিম সিঁড়ির সামনের খালি জায়গায় চাদর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শুধু জসিম উদ্দিন ও শুকুর আলীই নয়, তাদের মতো আরও অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ছুটে এসেছেন ঢামেক হাসপাতালে। যারা সিট পাননি তারা ফ্লোর ও বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জের পাগলা থেকে এসেছেন রবিন। ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতরে নার্সরা যেখানে বসেন তার পাশেই তার বেড। সেখানে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মশারির ভেতরে বসে আছেন।

dmcনাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন নার্স বলেন, কাউকে তো আর ফেরত দেওয়া যায় না। তাই আমরা ফ্লোরে রেখেই চিকিৎসা দিচ্ছি।

তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের রাখা হয়েছে ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায়। তাদেরকে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার রাতে ঢামেকের মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, মেডিসিনের জন্য বরাদ্দ দুটি ওয়ার্ড রোগীতে ভর্তি। প্রতিটি কক্ষের বাইরে বেড পেতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রুমের বাইরে ফ্লোরে রোগীর চিকিৎসা চলছে। দুই ওয়ার্ডের মাঝে ফাঁকা জায়গাটিতেও রোগীতে ভর্তি। লিফট থেকে নেমে পা বাড়ানোর দূরত্বে রোগীরা শুয়ে আছেন। কারও হাতে স্যালাইন চলছে, কেউ ঘুমে আচ্ছন্ন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ও সাধারণ রোগী একাকার

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীতে ভরপুর। কে ডেঙ্গু রোগী আর কে সাধারণ রোগী তা চেনা মুশকিল।

ওয়ারী থেকে আসা আশরাফি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড হলে ভাল হতো।

dmcযা বললেন পরিচালক

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এখনও আলাদাভাবে ডেঙ্গু রোগী রাখার কথা ভাবিনি। তবে রোগীর সংখ্যা বাড়লে সেই চিন্তাও আছে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর জন্য সরকার একটি দারুণ গাইড লাইন দিয়েছে। সেটা মেনে চিকিৎসা দিলে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে। এখানে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে। নতুন ৫৮ জন এসেছে। সারাদেশে যা রোগী তার ১০ ভাগের এক ভাগ আমাদের এখানে।

এমআইকে