images

বিনোদন

মান্না দের গাওয়া ‘কফি হাউস’ গানটির গীতিকার কে

বিনোদন ডেস্ক

৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০১:১৭ পিএম

মান্না দের গাওয়া ‘কফি হাউজ’ গানটি বাঙালি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। যত পুরনো হোক না কেন, এই গান আমাদের জীবনে সবসময় সবুজ পাতার সতেজ উপহার দেয়। ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। নস্টালজিক হয়ে যাই আমরা। 

১৯৮৩ সালে গানটি লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। অথচ সাধারণ মানুষের কাছে এই মানুষটি অচেনাই থেকে গেছেন। মান্না দের গান হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। তবে আড়ালে থাকলেও গানটির সঙ্গে চিরকাল জড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশের পাবনায় জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তির নাম। 

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ছিলেন আধুনিক বাংলা গানের মৌলিকত্ব বহন করা গীতিকার। আশির দশকে তিনি আশা ভোঁসলের জন্য প্রচুর হিট গান লিখছিলেন। কিন্তু তখন মান্না দে’র জন্য কোনো গান লিখতে পারছিলেন না। সব লিখছিলেন পুলক বন্দোপাধ্যায়। এ নিয়ে আক্ষেপ করতেন গৌরী। 

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার । ছবি: সংগৃহীত

একদিন নচিকেতা ঘোষের নিউ আলিপুরের বাড়িতে গিয়েছিলেন গৌরীপ্রসন্ন। উদ্দেশ্য ছিল শক্তি ঠাকুরকে দিয়ে একটি গান তোলা। তখন সেরা জুটি ছিলেন নচিকেতা ও গৌরীপ্রসন্ন। সেই সূত্রে নচিকেতার ছেলে সুপর্ণকান্তির সঙ্গেও বেশ ভালো সম্পর্ক। তবে বাড়িতে আসার অনেকক্ষণ পরে সুপর্ণকান্তিকে দেখতে পেয়ে গৌরীপ্রসন্ন মজা করেই বলেন, “কী বাইরে আড্ডা মেরে সময় কাটাচ্ছ?” এর উত্তরে সুপর্ণকান্তি তার গৌরী কাকাকে বলেন, “কী সব গদগদে প্রেমের গান লিখছ। একটা অন্যরকম গান লিখে দেখাও না। এই আড্ডা নিয়েও তো গান লিখতে পারো।”

এবার গৌরীপ্রসন্ন বলেন, “তুমি তো অক্সফোর্ডের এমএ হয়ে গিয়েছো। আড্ডা নিয়ে বাংলা গান গাইবে?” সুপর্ণ এবার বলেন, “কেন নয়। কফি হাউসের আড্ডা নিয়েও তো একটা গান লিখতে পারো।” গৌরীপ্রসন্ন এবার বলেন, “তোমার বাবা (নচিকেতা ঘোষ) কি আর সে গান গাইবেন?” তর্ক চলছে বটে কিন্তু গৌরীপ্রসন্ন এরইমধ্যে মনে মনে তৈরি করে ফেলেন দুটি লাইন।

এরপরেই সুপর্ণকান্তিকে বললেন, “লিখে নাও- ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই/ কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই।” সুপর্ণও সঙ্গে সঙ্গে দুটো লাইনেই সুর দিয়ে শুনিয়ে দেন। উপস্থিত শক্তি ঠাকুর সেবার পূজায় গানটা গাওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও সুপর্ণ রাজি হননি। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে নিয়েছিলেন মান্না দের কথা।

মান্না দে’র সঙ্গে সুপর্ণকান্তি ঘোষ ছবি: সুপর্ণকান্তি ঘোষের অ্যালবাম থেকে নেওয়া

কিন্তু গানের বাকি লাইনগুলো...? পরের দিন সকালেই গৌরী প্রসন্নের স্ত্রী সুপর্ণকান্তিকে ফোন দিলেন। সারারাত জেগে বহুদিন পরে গান লিখেছেন অসুস্থ গৌরীপ্রসন্ন। তখনই তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। দু’দিন পরে গানটা নিয়ে হাজির। কিন্তু শেষ স্তবক যোগ করার পক্ষপাতী ছিলেন না গৌরীপ্রসন্ন। সুপর্ণকান্তি চান যোগ করুন একটি স্তবক।

শেষ পর্যন্ত রাজি হন। লেখেন দুর্দান্ত সেই লাইন—‘সেই সাতজন নেই, তবুও টেবিলটা আজও আছে।’ কিন্তু শেষ তিনটি লাইন তিনি লিখেছিলেন চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার পথে হাওড়া স্টেশনে বসে একটি সিগারেটের প্যাকেটের উল্টো পিঠে। এক চেনা লোকের মাধ্যমে তা পাঠিয়ে দেন সুপর্ণকান্তির কাছে। তারপর সুপর্ণকান্তির সুরে মুম্বাইয়ে গানটি রেকর্ড করেন মান্না দে। তৈরি হয়ে যায় একটা ইতিহাস। 

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট কলকাতায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি তার জীবদ্দশায় অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। 

আরএসও