images

বিনোদন

পলিটিক্সের শিকার হয়েও প্রসেনজিৎ আজ মি. ইন্ডাস্ট্রি

বিনোদন ডেস্ক

২৭ মার্চ ২০২২, ১১:০৬ এএম

ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের সবথেকে বড় তারকা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি টলিউডের মি. ইন্ডাস্ট্রি। তার কাঁধে চড়ে মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়ে শহরতলী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।

প্রসেনজিতের সমসাময়িক অনেক নায়ক হারিয়ে গেলেও তিনি যেন অপ্রতিরোধ্য। বয়স তার কাছে সংখ্যা মাত্র। এখনও প্রতি সিনেমায় নিজেকে ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে ওঠেন। চরিত্র যত কঠিন হোক, সব যেন তার কাছে নস্যি।

তবে টলিউডের অনেক তারকার অভিযোগ, নোংরা ফিল্ম পলিটিক্স করে প্রসেনজিৎ তার সময়ের অনেক নায়ক-নায়িকার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছেন। সেই তালিকায় আছেন সদ্য প্রয়াত অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া শ্রীলেখা মিত্রও এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। যদিও প্রসেনজিৎ কখনও সেসব অভিযোগের বিপরীতে মুখ খোলেননি।

Prosenjit
টলিউডের মি. ইন্ডাস্ট্রি প্রসেনজিৎ । ছবি: ফেসবুক

বিষয়টা এমন নয় যে, এসেই টলিউড জয় করেছেন প্রসেনজিৎ। প্রখ্যাত অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে হয়েও সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক পরিচালকের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছেন তিনি।

প্রসেনজিৎ তার আত্মজীবনী বুম্বা— শট রেডিতে লিখেছেন, ‘এখনও ওই পরিচালককে খুব শ্রদ্ধা করি। সেদিন প্রিয়া সিনেমায় একটি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর তাকে গাড়ি অবধি এগিয়ে দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজও ভুলতে পারি না আমার মাকে সেই সময় তিনি কীভাবে অপমান করেছিলেন। মায়ের অপরাধ, আমাকে রোল দিতে বলেছিলেন। পরিচালকের কাছে শুনতে হয়, এই ধরনের ট্যাঁশ দেখতে নায়ক বাংলা সিনেমায় চলবে না। সেই সময় আমি ডেনিম পরতাম। ইংরেজি মিডিয়ামে পড়েছি বলে হয়ত হাবভাবও অন্যরকম ছিল। সেই পরিচালক মাকে বলেছিলেন, ছেলেকে খাকি প্যান্ট পরিয়ে স্টুডিওতে আনবেন। তার সঙ্গে বাংলা শার্ট। তাতে যদি ওর কিছু হয়।’

এর অনেক বছর পর যখন প্রসেনজিৎ তারকা হয়ে উঠেছেন, তখন সেই পরিচালক তার দ্বারস্থ হন নতুন সিনেমার জন্য। ছবির প্রযোজক ছিলেন রবিন আগারওয়াল। ওই পরিচালককে ফেরাননি তিনি। বরং সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন।

Prosenjit Rituporna
টলিউডের জনপ্রিয় জুটি প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা । ছবি: ফেসবুক

প্রসেনজিৎ বলেন, ‘আমি ততদিনে বড় স্টার। রবিনদা লম্বা কনট্র্যাক্ট নিয়ে আসলেন। তার নিচে সই করতে হবে। আমি বেঁকে বসলাম। কনট্র্যাক্ট হবে আমার টার্মসে। ওই পরিচালকের টার্মসে নয়। কেটে নতুন করে চুক্তি হলো। ছবির পারিশ্রমিক হিসেবে আমাকে গাড়ি দেওয়া হয়েছিল। গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে নীরবে হেসেছিলাম। ট্যাঁশ দেখতে নায়ক তাহলে কাজের হতে পারে!’

আরও এক নামজাদা পরিচালক এক দুপুরে প্রসেনজিতের ক্যারিয়ার ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এবার যে পরিচালকের কথা বলছি, তিনি বেঁচে নেই। একসঙ্গে তার সাতটি সিনেমা থেকে আমি বাদ হয়ে যাই। সবগুলো সিনেমা যে তিনি পরিচালনা করেছিলেন, তা নয়। কোনোটায় তার স্ক্রিপ্ট ছিল। কিন্তু শর্ত দিতেন, বুম্বাকে (প্রসেনজিতের আরেক নাম) নেওয়া যাবে না। আমার অপরাধ ছিল, তার কিছু পেশাদারি আবদার না শোনা। প্রায় প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, দেখি তুমি কী করে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করো! তখন শ্রীকান্ত গুহঠাকুরতা একটি ছবি করছিলেন। মাল্টি স্টার কাস্টিং। শতাব্দী, দেবশ্রী আর আমি। তিন জন প্রথম একসঙ্গে। ছবিটা শুরু হয়েও বহু দিন বন্ধ রইল। কারণ, সেই পারিচালক বললেন, আমি কাজ করলে স্কিপ্ট দেবেন না। এমন অচলাবস্থা তৈরি হয়ে যে, জটিলতা মেটাতে অনুপ কুমার ও উৎপল দত্তকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।’

Prosenjit
এখনও অপ্রতিরোধ্য প্রসেনজিৎ । ছবি: ফেসবুক

ভাগ্যের কী খেলা! সেই পরিচালক যখন খারাপ সময় পার করছিলেন তখন তিনিও প্রসেনজিতের কাছে এসেছিলেন। সেই দিনটির কথা মনে করে বুম্বাদা বলেন, ‘তখন শিলিগুড়িতে শ্যুটিং করছি। স্বপন সাহার পিক টাইম। সেই সঙ্গে আমারও। ওই ভদ্রলোক তখন ভাটার মধ্যে পড়েছেন। হাতে কোনো কাজ নেই। আজ ভাবলে হাসি পায়, শিলিগুড়িতে একটি বাসের উপর শ্যুটিং করছি। নিচ থেকে অ্যাটেন্ডেন্ট বলল, অমুক ফোন করেছেন। বুম্বাদা, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান। তখন সদ্য মোবাইল এসেছে। বড় বড় সাইজের ফোন। সেই ফোন ছাদের উপর আমার হাতে এগিয়ে দিল। ভদ্রলোক বললেন, তার স্ক্রিপ্টে রাম লক্ষণ ছবিটা করার জন্য প্রডিউসারকে বলেছেন। প্রডিউসার একটাই শর্ত দিচ্ছেন, আমাকে করতে হবে। আমি বুঝলাম, ওঁর হাতে কোনো কাজ নেই। আমার হ্যাঁ-টাই একমাত্র লাইফলাইন হতে পারে। ওই বাসের ছাদের উপর থেকেই আমি বলে দিলাম, হ্যাঁ করব।’

সেদিন হোটেলে ফিরে দারুণ প্রশান্তি পেয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। ক্যারিয়ারে যারা দুর্ব্যবহার করেছেন, তাদের সঙ্গে প্রতিহিংসার আগুন দিয়ে লড়েননি। বরং ভালো ব্যবহার করে সেই সব বিবেক জাগ্রত করতে চেয়েছেন। এখনও সেটাই করে যাচ্ছেন দুই বাংলার এই জনপ্রিয় তারকা।

আরএসও