বিনোদন প্রতিবেদক
০৮ মার্চ ২০২২, ১১:৩৬ এএম
চলচ্চিত্রের মতো সৃজনশীল একটি কাজে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় কম। বিশেষ করে উপমহাদেশে নারী চলচ্চিত্র নির্মাতার সংখ্যা হাতে গোনা।তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীরাও চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নারী পরিচালকের সংখ্যা আশাজাগানিয়া নয়। রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় কারণে একজন নারীকে প্রতি পদে বাধার সম্মুখিন হতে হয়।
তবে সেইসব বাধা অতিক্রম করে ঢাকাই সিনেমায় প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান রেবেকা। তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্মাণ করেন ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’। ১৯৭০ সালে নির্মিত হয় সিনেমাটি। একজন নারী হিসেবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে অবিভক্ত পাকিস্তানে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
সাক্ষাৎকার নেওয়ার সূত্র ধরে রেবেকাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াত। কীর্তিমান এই নারী সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রেবেকা সবসময় এগিয়ে যাওয়া নারীদের প্রতিনিত্ব করবেন। এ প্রজন্মের যেসকল নারীরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন তাদের পথিকৃৎ তিনি। তখনকার সমাজব্যবস্থার কথা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে, ওই সময়টায় একজন নারীর পক্ষে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা খুব কঠিন কাজ ছিল। বিশেষ করে মুসলিম সমাজে তো এটা কল্পনাও করাই যেত না। কিন্তু রেবেকা সমাজের চাপে পিষ্ট হননি। বরং নিজের ভেতরের শিল্প সত্তাকে বিকশিত করতে সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।’
তিনি জানান, রেবেকা চেষ্টা করেছিলেন একটি নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে। তার সেই চেষ্টায় কাছের অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
এদিকে অনুপম হায়াত মনে করেন, রাষ্ট্র তাকে সেভাবে মূল্যায়ন করেনি। আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে রাষ্ট্র তাকে যথার্থ মূল্যায়ন করেনি। রেবেকা শুধু প্রথম নারী নির্মাতা নন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও। অথচ তিনি সবসময় উপেক্ষিত। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে স্মরণ করতে দেখা যায় না।’
রেবেকাকে নিয়ে ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত: একজন বকুলের আখ্যান’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করছেন মেহজাদ গালিব। ইতোমধ্যে কিছু অংশের শ্যুটিং হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত হচ্ছে এটি।
মেহজাদ মনে করেন, এই তথ্যচিত্রটি রেবেকাকে মূল্যায়নের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম ব্যক্তিজীবন, চলচ্চিত্র ও শিল্পসত্তা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে রেবেকা সেভাবে মূল্যায়িত হননি। সত্তরের দশকে নারী হিসেবে চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো একটি দুঃসাধ্য সাধন করেছেন তিনি। আমাদের উচিত তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানা। সেই লক্ষ্যেই তাকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণে হাত দেওয়া।’
অভিনেত্রী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন রেবেকা। তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘এইতো জীবন’। পরবর্তীকালে ‘বাহানা’, ‘মালা’ ও ‘উলঝন’ নামের তিনটি উর্দু ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেন। এরপর আরও বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। কবি হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে মারা যান এই মহীয়সী নারী।
আরএসও