বিনোদন প্রতিবেদক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:১৪ পিএম
অভিনয় দক্ষতা ও সৌন্দর্যের দ্যুতির তিল পরিমাণ ঘাটতি নেই অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনার মাঝে। তার দর্শকপ্রিয়তাও ঈর্ষণীয়। তবুও প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে মোটেই শামিল হন না তিনি। কাজ করে যান নিজের মতো বেছে বেছে। এভাবেই যাকিছু ভালো তা দিয়ে নিজের ঝুলি পূর্ণ করছেন তিনি। সম্প্রতি শেষ করেছেন একটি সিনেমার কাজ।
শুরুতে সিনেমাটির প্রসঙ্গ টেনে ঢাকা মেইলকে ভাবনা বলেন, “সম্প্রতি ‘দামপাড়া’ নামে একটি সিনেমার কাজ শেষ করলাম। এতে আমি আমাকে দুটি বয়সের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে। দেশের প্রথম ফিমেল অ্যাম্বেসেডর মাহমুদা হকের চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রযোজনায় এটি নির্মাণ করেছেন শুদ্ধমান চৈতন।”
এই মুহূর্তে চার-পাঁচটি সিনেমায় কাজের প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে ভাবনার। তবে কি টিভি নাটককে ভুলে যাবেন— জবাবে তিনি বলেন, ‘কখনও না। কেননা আমার শুরুই টিভি নাটকের মাধ্যমে। আমাকে এতদূর এনেছে নাটক। অতএব নাটককে এড়িয়ে চলার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ব্যস্ততার ভিড়ে কিছুটা হেরফের হতে পারে তবে একেবারে নাটক বিমুখ কখনও হব না।’
সমসাময়িকরা যেখানে প্রতিদিনই কাজে ব্যস্ত, ভাবনা সেখানে বেছে কাজ করেন। তবুও গ্রহণযোগ্যতায় রয়েছেন সামনের সারিতে। এর কারণ কী— জানতে চাইলে এই তারকা বলেন, “আমি চাইলেই কাজের সংখ্যা বাড়াতে পারি, একাধিক সিনেমায় অভিনয় করতে পারি। কিন্তু আমি একটা সিনেমা শেষ করে এমন একটা সিনেমা খুঁজি যা আমার আগের কাজটিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যেমন ‘লাল মোরগের ঝুটি’ সিনেমায় যুক্ত হওয়ার সময় আমি জানতাম এটা বাণিজ্যিক কোনো মুভি না। তবে এটা আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। সেকারণে এই ছবি করতে গিয়ে এমন সিনেমা ছেড়েছি যা আমাকে জনপ্রিয়তা টাকা— দুটিই দিত। আমি চাইলেই ৩০ দিন শুটিং করতে পারি, অর্থও উপার্জন করতে পারি। কিন্তু ভালো কাজের অপেক্ষা ও বেছে কাজ করার জন্যই আমাকে কম পাওয়া যায়।”
এদিকে ভাবনা ফের অভিনয় শিখছেন। যোগ দিয়েছেন একটি অভিনয় কর্মশালায়। নিজেকে প্রতিনিয়ত ভেঙেচুরে নতুন করে গড়ার প্রয়াস থেকেই তার এই উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা টেলিভিশনে কাজ করি তাদের এ সময় এসে নতুন করে অভিনয় শেখার প্রয়োজন হয় না। তবে আমি নিজেকে প্রতিনিয়ত ভাঙতে চাই, অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই বলেই শিখছি।’
রং-তুলির সঙ্গেও ভাবনার সখ্যতা দেখার মতো। ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন নিজের চিন্তাধারা। আঁকাআঁকি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী— জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘বর্তমানে কর্মশালা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আঁকায় নিয়মিত হতে পারছি না। তবে আঁকাআঁকি চলবে। ইচ্ছা আছে আমার চিত্রকর্মগুলো দিয়ে বিশাল পরিসরে একটি প্রদর্শনী করব। তবে গ্যালারীর শিডিউল পাচ্ছি না বলে সময় লাগছে।’
ভাবনা নারীর স্বাধীনতা ও পোশাক বাছাইয়ে নিজস্ব মতের পক্ষে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্যও করা হয় তাকে নিয়ে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন— উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের সমাজে কিন্তু নারী-পুরুষের সমধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পাশাপাশি নারী ও পুরুষকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন। যেমন ধরুন, আমাদের এখানে পুরুষ অভিনয়শিল্পীদের শারীরিক গঠন কোনো বিষয় না। মেদবহুল শরীর নিয়ে অনেকেই নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে তার উল্টো। সৌন্দর্যে কিছুটা ঘাটতি হলেই মা-চাচিদের চরিত্রের জন্য ভাবা হয়। আর পোশাকের ক্ষেত্রে এই মানুষের এই নেতিবাচক চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে আমার মন্তব্য হচ্ছে আমাদের মানসিক বিকাশের অভাব রয়েছে। আজকাল দেখবেন শিশুদের সাংস্কৃতিক চর্চা কম করানো হয়। গান শেখানো হয় না, নাচের ক্লাসে ভর্তি করানো হয় না, আবৃতি শেখানো হয় না। তাহলে মানসিক বিকাশটা হবে কীভাবে?’
সবশেষে ভাবনা মনে করেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুলগুলোতে প্রচুর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালানো উচিত। পাশাপাশি ভালো ও খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া উচিত। তবেই এই নেতিবাচক মনোভাব পাল্টানো সম্ভব। সেইসঙ্গে শৈশব থেকেই মানসিক বিকাশ ঘটবে যা পরবর্তী সময়ে নারীর প্রতি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা তৈরিতে সাহায্য করবে।
আরআর/আরএসও