images

বিনোদন

আমাকে নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে, ভাইরাল ‘ব্যবসার পরিস্থিতি’র গায়ক

রাফিউজ্জামান রাফি

১৩ আগস্ট ২০২২, ০৫:১৮ পিএম

দেশে র‍্যাপ গানের প্রচলন অনেক আগে হলেও ‘কনভারসেশন র‍্যাপ’ শব্দটি এখানে একেবারেই আনকোরা। বেশ কয়েকজন র‍্যাপার কথোপকথনের মাধ্যমে এই গান পরিবেশন করেন। সম্প্রতি এমনই এক গানে নেট দুনিয়ায় ঝড় তুলেছেন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী আলী হাসান। ‘ব্যবসার পরিস্থিতি’ নামের গানটিতে নিজের জীবনের বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছেন। অলিগলি থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ— সবখানে বাজছে গানটি। ভাইরাল এই শিল্পী কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে। জানিয়েছেন গানটির নেপথ্য গল্পসহ জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের গল্প।

আপনার গাওয়া ‘ব্যবসার পরিস্থিতি’ গানটি সবাই লুফে নিয়েছে। একাধিক সংবাদমাধ্যমেও আপনার নাম এসেছে। স্বপ্ন ছোঁয়ার অনুভূতি কেমন?

ভালো লাগছে। সবাই গানটি শুনছেন, সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দিচ্ছেন। নিজের গান নিয়ে এমন মাতামাতি হলে ভালো তো লাগারই কথা। তবে একটা বিষয় ভালো লাগেনি। আমাকে নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে পত্রিকায়। লেখা হচ্ছে— আমার বাবা অসুস্থ।

ব্যাপারটা তা না। আমি বলেছি, বাবার বয়স হয়েছে বলে আমি ব্যবসার হাল ধরেছি। আর তারা আমার সুস্থ বাবাকে অসুস্থ বানিয়ে দিয়েছেন। হতে পারে তারা আমার কথাটা অন্যভাবে বুঝেছেন। তবে এটা ঠিক না।

গানের শুরুর কথা বলুন…

ছোটবেলা থেকেই গান ভালো লাগত। দুষ্টুমি করে গান গুনগুন করতাম। তখন র‍্যাপ গানের প্রচলন ছিল না আমাদের দেশে। এমনি গানগুলো গাইতাম। এভাবেই গানের প্রতি ঝুঁকে পড়ি।

Ali Hasan

র‍্যাপ গানের প্রতি টান আসলো কীভাবে?

র‍্যাপ গান আমার ভালো লাগত। আমিও গাইতাম। এটা ২০১০ সালের দিকের ঘটনা। নারায়ণগঞ্জে আমার এক কাছের বন্ধু ছিল। সে র‍্যাপ গান গেয়ে পরিচিতি পেয়েছিল। তার গানগুলো ভালো লাগত। আমারও র‍্যাপ করতে ইচ্ছা হতো। একদিন ওকে বলতেই ও বলল, চল শুরু করি। এভাবেই র‍্যাপের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।

এরপরের যাত্রাটা কেমন ছিল?

না, ভালো ছিল না। কারণ সেসময় শুরু করি করি করলেও কাজ আর করা হয়নি। ফাজলামি করেই সময় নষ্ট হয়েছে। এভাবেই কেটে যায় বেশ কয়েকবছর। পরে আমি একসময় জীবিকার সন্ধানে দেশের বাইরে চলে যাই।

তাহলে এই গানের জন্ম হলো কীভাবে?

২০১৭ সালে আমি দেশে ফিরি। আমাদের একটি হার্ডওয়্যারের দোকান ছিল। বাবা চালাতেন। কিন্তু তার বয়স হয়ে গিয়েছিল। আমি তাকে বিশ্রাম দিতে দোকানের হাল ধরি। একসময় ব্যবসার পরিস্থিতি বেশ খারাপ যেতে থাকে। এসব দেখে মনে হতে থাকে আমার জীবন নিয়েই তো লিখতে পারি। তখন ক্রেতাদের সঙ্গে আমার টুকরো ঘটনাগুলো নিয়ে গানটি লিখে।

Ali Hasan

 কতদিন লেগেছিল গানটি তৈরি করতে?

গানটি আমি এক বছর ধরে লিখেছি। এত সময় লাগার কারণ হলো, এতে অনেকগুলো চরিত্র আছে। তাদের সবার সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা তো আমার একদিনে হয়নি। বিভিন্ন সময় ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে এই ঘটনাগুলোর সম্মুখীন হয়েছি। সেসব মিলিয়ে লিখতেই এত সময় লাগে। গানটি আরও বড় ছিল। পরে শ্রোতারা বিরক্ত হতে পারেন ভেবে ছোট করি।

জি-সিরিজের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?

জি-সিরিজের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পুরোনো। এর আগে এখান থেকে আমার দুটি গান প্রকাশ পেয়েছে। তবে এই গানটি নিয়ে প্রথমে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার বনিবনা না হওয়ায় জি-সিরিজে আসি। গানটি প্রথমে ঈশা খান দূরে ভাই শোনেন। তার ভালো লাগে। এরপর আমাকে উপযুক্ত সম্মানী দিয়ে তারা গানটি নেন।

গান তো ভাইরাল। গোটা দেশের মানুষের কাছে আপনি পরিচিত। এমন অবস্থায় এসে গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

গান নিয়ে আমার কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। এ ব্যাপারে কিছু ভাবছিও না। আমি জীবিকার সন্ধানে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছি। তবে যদি গান থেকে কখনও জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় অর্থ আসার সম্ভবনা দেখি তখন পেশা হিসেবে নিতে পারি।

Ali

আমাদের দেশের অনেকেই র‍্যাপ গান পছন্দ করেন না। এর কারণ কী বলে মনে করেন?

র‍্যাপ গান যে সংস্কৃতির তাদের সঙ্গে আমাদের জীবন চিত্র মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। এসব কারণেই হয়ত তারা র‍্যাপ গানের নাম শুনলেই মনে করেন নিশ্চয়ই খোলামেলা কিছু। আমি মনে করি, এজন্যই অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাদের মতো আমিও র‍্যাপের নামে খোলামেলা উপস্থাপন পছন্দ করি না। আমার কাছে এই গানের অর্থ ভিন্ন। র‍্যাপ আমার কাছে প্রতিবাদের ভাষা। সেকারণেই দেশের সংস্কৃতির মিশেলে আমি এই গান করি। জীবনের কথা তুলে ধরি।

আরআর/আরএসও