আলমগীর কবির
০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৩ এএম
হলিউড ও বিশ্ব চলচ্চিত্রের দুই দিকপাল যখন মুখোমুখি হন, তখন যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। সৌদি আরবের জেদ্দায় চলমান রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ঠিক তেমনই এক অভাবনীয় মুহূর্তের সাক্ষী হলো বিশ্ব চলচ্চিত্র জগৎ।
ফরাসি অভিনয় কিংবদন্তি জুলিয়েট বিনোশ এবং গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত ছবি ‘অ্যানোরা’-র পরিচালক শন বেকার দু’জনের মধ্যে ঘটে গেল এমন এক সাক্ষাৎ, যা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে নতুন স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী রাতে চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য জুলিয়েট বিনোশকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। কিন্তু সেই সম্মাননার চেয়েও বেশি মনোযোগ কেড়েছে উৎসবের জুরি প্রধান শন বেকারের একটি অপ্রত্যাশিত স্বীকারোক্তি।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে বেকার জানান, তিনি শুধু বিনোশের অভিনয়ের ভক্ত নন, তার দেওয়ালে টাঙানো আছে বিনোশের ১৯৯১ সালের রোমান্টিক ড্রামা ‘লাভার্স অন দ্য ব্রিজ’-এর ফ্রেম করা পোস্টার! এই স্বীকারোক্তি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
নম্বর বিনিময় ও কাজের আকুতি
শনিবার ভ্যারাইটি লাউঞ্জে কথা বলতে গিয়ে বিনোশ জানান, উৎসবের পর তারা দুজন ফোন নম্বর বিনিময় করেছেন। শুধু তাই নয়, বিনোশ বেকারের ছবিতে কাজ করার জন্য সরাসরি প্রস্তাবও দিয়েছেন।
‘আমি ওঁকে চিৎকার করে বলেছি; আমি তোমার সঙ্গে কাজ করতে চাই!’ হাসতে হাসতে বললেন বিনোশ।
তবে বেকারের উত্তর ছিল কিছুটা অপ্রত্যাশিত। বিনোশ জানান, বেকার তাকে বলেছেন যে তিনি তার আগের ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে সরে এসে এখন অ্যাকশন মুভি বানাতে চান। ২০২৪ সালে ‘অ্যানোরা’ দিয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ সম্মান পাম দ’অর জিতেছেন বেকার। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অ্যাকশন জনরায় পা রাখার ঘোষণা তাই সবাইকে কৌতূহলী করে তুলেছে।
কানে জুরি প্রধান হিসেবে বিনোশ
উল্লেখ্য, এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি প্রধান ছিলেন স্বয়ং জুলিয়েট বিনোশ। উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার কাকে দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত মূলত তার কাঁধেই ছিল। কানের অফিসিয়াল সিলেকশনের বেশ কয়েকটি ছবি যার মধ্যে ‘সিরাত’ ও ‘দ্য মাস্টারমাইন্ড’ রয়েছে; এখন জেদ্দায় প্রদর্শিত হচ্ছে।
‘জুরি হিসেবে আমরা এই ছবিগুলো খুঁজে পেয়ে সত্যিই খুশি ছিলাম। এটা ছিল একটা ভালো বছর!’ গর্বের সঙ্গে বললেন বিনোশ।
জাফর পানাহি ও বিনোশের আবেগঘন স্মৃতি
এ বছর কানে পাম দ’অর জিতেছেন ইরানি পরিচালক জাফর পানাহি তার ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবির জন্য। ছবিটি এখন আসন্ন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করছে। তবে সম্প্রতি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি কোর্ট তাকে ‘প্রচারণামূলক কার্যক্রম’ পরিচালনার অভিযোগে অনুপস্থিতিতে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
বিনোশ পানাহির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি ফিরে যান ২০১০ সালের কান উৎসবের স্মৃতিতে। সে বছর পানাহি জুরি সদস্য হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি তেহরানে কারাবন্দি থাকায় আসতে পারেননি। সেই বছরই ‘সার্টিফায়েড কপি’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পাম জিতেছিলেন বিনোশ।
‘ওঁর অনুপস্থিতি দৃশ্যমান করতে ওঁরা একটা খালি চেয়ারে ওঁর নাম লিখে রেখেছিল। আমি যখন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলাম, আমি সেই নামটা তুলে নিয়ে ক্যামেরার সামনে ধরে জাফরের কথা বললাম,’ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বললেন বিনোশ। ‘তিন দিন পর ওঁকে মুক্তি দেওয়া হলো। আমি মনে করি, কান ওঁকে জুরিতে রাখা এবং সম্ভবত আমার সেই উদ্যোগ এই দুইয়ের সমন্বয়ে সেটা সম্ভব হয়েছিল। তাই ১৫ বছর পর ওঁকে এই পুরস্কার দেওয়াটা ছিল অত্যন্ত অর্থবহ।’
বিনোশ-বেকারের এই সাক্ষাৎ ভবিষ্যতে কোনো প্রকল্পে রূপ নেবে কি না, সেটাই এখন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
/একেবি/