রাফিউজ্জামান রাফি
০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
স্রোতের জোয়ারে কখনও গা ভাসাননি সৈয়দা তৌহিদা হক তিথী। যা কিছু ভালো তাই নিয়ে চলেছেন পথ। দীর্ঘদিন মডেলিংয়ে দ্যুতি ছড়িয়ে মনোযোগ দিয়েছেন অভিনয়ে। সম্প্রতি কাজ করেছেন একটি বিজ্ঞাপনে। খবর রটেছে সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকা মেইলের।
শরিফুল রাজের সঙ্গে বিজ্ঞাপনে জুটি বেঁধেছেন…
কক্সবাজার, সায়মন হেরিটেজসহ বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন লোকেশনে বিজ্ঞাপনটির দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। সুন্দর একটি কাপল স্টোরি দেখা যাবে। রাজ ভাইয়াকে আগে থেকেই চিনি। ফ্যাশন মিডিয়ায় অনেক কাজও করেছি। ভিজ্যুয়ালি এবার-ই প্রথম। ভালো লেগেছে। উনি খুব কো-অপারেটিভ, সাপোর্টিভ। কাজটি ভালো হওয়ার পেছনে তার অবদান বেশি। শিগগিরই দেখা যাবে বিজ্ঞাপনটি।

খবর রটেছে ‘সোলজার’ সিনেমায় শাকিব খানের সঙ্গে দেখা যাবে আপনাকে।
এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছি না। সময় হলে জানতে পারবেন। তবে এটুকু বলব সামনে আরও ভালো কিছু কাজের সুযোগ আছে। দোয়া করবেন।
‘মাসুদ রানা’র কী খবর?
প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে শুটিং হয়েছে ছবিটির। ওই সময় অনুযায়ী খুব ভালো কিছু হয়েছিল। কিছু দৃশ্য বাকি আছে। দেশের বাইরে করার কথা ছিল। কিন্তু কেন হচ্ছে না, ছবিটি কেন সম্পূর্ণ হচ্ছে না, কখন আসবে— বলতে পারছি না। নিশ্চয়ই প্রযোজনা সংস্থা কাজ শেষ করে ভালো সময় দেখে মুক্তি দেবে।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে আরও দুটি সিনেমার কথা ছিল…
জাজ মাল্টিমিডিয়ার সবার সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। তবে যেহেতু এই মুভিটা (‘মাসুদ রানা’) এখনও রিলিজ হয়নি সেহেতু অন্য ছবিগুলোর ক্ষেত্রে হয়তো সময় লাগবে তাদের।
ইন্দো বাংলা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর লম্বা সময় কেটে গেছে। তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমাধ্যমে আপনাকে কম পাওয়া গেছে। কেন?
আমি খুব ভালো একটি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলাম। এখনও বিষয়টি ভাবতে ভালো লাগে। তারপর-ই ভিজুয়্যালে আসা দরকার ছিল। কিন্তু দৃশ্যমাধ্যমে যুক্ত হতে একজন শিল্পীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শক দরকার। সেটা আমার ছিল না। পাশাপাশি উচ্চতা আছে, ভালো লুক দিতে পারতাম— ফ্যাশন মিডিয়ায় যুক্ত হয়ে পড়ি। বড় বড় সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। ভালো রেমুনারেশনও পেয়েছি। তবে কোন জায়গা আমার জন্য ভালো হবে—ডিসিশনটা ওই সময় নিতে পারিনি। যখন খুব ভালো পর্যায়ের মডেল হলাম তখন মনে হয়েছে আরও আগে কাজ করা দরকার ছিল। তবে ফ্যাশন মিডিয়া থেকে চাইলেই ভিজ্যুয়ালি থিতু হওয়া যায় না। যারা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে চলে যায় তাদের বডি, এক্সপ্রেশন অনেক স্ট্রিক্ট হয়ে যায়। সেগুলো স্বাভাবিক করতে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। আমিও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছি।
শুভাকাঙ্ক্ষীরা সে সময় অভিনয়ে থিতু হতে পরামর্শ দেয়। আস্তে আস্তে কাজ শুরু করি। মাঝে করোনায় প্রায় তিন বছরের গ্যাপ ছিল। শেষ দুই আড়াই বছর ধরে মডেলিংয়ের চেয়ে বেশি ভিজুয়্যালি কাজ করেছি। র্যাম্প করিইনি। এখনও শিখছি। মনে হয় কাজ করতে পারব। এটা আমার খুব ভালো লাগার জায়গা। যখন র্যাম্পে হাঁটতাম, স্টিল ফটোশুট করতাম তখন ওই কাজটাকে খুব ভালোবাসতাম। এখন যত কষ্টই হোক আমি ভিজুয়্যালে কাজ করতে চাই। বিকজ মন থেকে এই কাজটা ভালোবাসি।

ফ্যাশন মিডিয়া থেকে অভিনয়ে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ নাকি কঠিন?
খুব কঠিন। ধৈর্যশক্তি থাকতে হবে। ফ্যাশন মিডিয়ায় আমরা যারা কাজ করি তাদের আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। একটু ডোন্ট কেয়ার টাইপের হয়। আত্মবিশ্বাসী হয়। অন্যদিকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে হতে হয় নিবেদিত প্রাণ ও ধৈর্যশীল। কাজকে যদি ভালোবাসতে পারেন তাহলেই করতে পারবেন।
নাম লেখানোর প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি সিনেমা। হতাশা কাজ করে না?
আমি ফ্রাস্ট্রেশনে পড়িনি। সবসময় কাজের মধ্যে ছিলাম। অনেকে সিনেমায় নাম লেখালে আগের পেশা ছেড়ে দেন। সেটা করিনি। সবসময় ক্যারিয়ারে অপশন রেখেছি। যেমন এখন মডেলিং বন্ধ করে দিলেও সমস্যা নেই। বিজনেস আছে। সে কারণেই হতাশা পেয়ে বসেনি। সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না, এখন কী হবে— বিষয়গুলো আমার মধ্যে কাজ করে না।

শিল্পীদের অনেককে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে দেখা যায়। তবে আপনাকে থাকতে দেখা যায় নিজের মধ্যে। কারণ জানতে পারি?
সোশ্যাল মিডিয়াটা প্রফেশনালি হ্যান্ডেল করি। ইতিবাচক থাকতে পছন্দ করি। নেতিবাচক বিষয়গুলো সরিয়ে রাখি। একেবারেই যে পেশার বাইরে কিছু পোস্ট করি না তা না। ৫ আগস্ট, মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনার মতো বিষয়গুলো নাড়িয়ে দিয়েছে। পোস্টও করেছি। যেগুলো নিয়ে উচিত সেগুলো নিয়ে লিখি। আমাকে দিয়ে কেউ জোরপূর্বক কিছু করাতে পারে না। মন থেকে যেটা আসবে সেটাই পোস্ট করব।
সোশ্যাল মিডিয়া অনেকের আয়ের বিকল্প পথ। আপনার ক্ষেত্রে কেমন?
এটা নিয়ে ভাবিনি। চেষ্টাও করিনি। যারা উপার্জন করছেন তাদের অ্যাপ্রিশিয়েট করি। আমি করতে চাইলে অনেক সময় দিতে হবে। অন্য কাজগুলো ডাউন হয়ে যাবে।

শিখরে উঠতে যোগ্যতা-ই যথেষ্ট নাকি আরও গুণ থাকতে হয়?
যোগ্যতা আগে প্রাধান্য পায়। আনুষঙ্গিক আরও কিছু জিনিস থাকতে পারে। যেমন কারও পিআর খুব ভালো হলে সেটা কাজে লাগাতে পারে। বর্তমানে এটা গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যান-ফলোয়ার, আত্মবিশ্বাস, দক্ষতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ এগুলো যার আছে সে আগে প্রাধান্য পাবে বলে মনে করি।
মিডিয়ায় একজন নারীকে পথ চলতে কতটা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়?
একজন নারীকে অনেক প্রতিবন্ধকতা মেইনটেইন করে কাজ করতে হয়। বিশেষ করে ফ্যাশন মিডিয়ায় আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতে গেলে অনেক ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়। যদিও এগুলোর তোয়াক্কা করি না। নিজের মতো করে সুন্দর লাইফস্টাইল মেনটেইন করি। ফ্যামিলির সাপোর্ট আছে। কিন্তু অন্য জায়গাগুলোতেও নারীর প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই। ছাত্রজীবনে এক ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করেছিলাম। সেখানে নারীদের অনেক হেনস্তার শিকার হতে দেখেছি। মানুষ ভাবে মিডিয়া লাইনে যারা র্যাম্প মডেল বা অন্য পেশায় আছে তাদের প্রবলেম আছে। বোধহয় কাজের বিনিময়ে কিছু করছে। আসলে তা না। এটা নিজের ওপর নির্ভর করে। তবে আমার মনে হয় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন ছেলেমেয়ে উভয়ের-ই হতে হয়। ট্রাস্ট মি, আমি মনে করি ফ্যাশন মিডিয়ায় মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের প্রতিবন্ধকতা বেশি। তবে আমার ক্যারিয়ারে বয়স ১০ বছর। কোনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হইনি। যোগ্যতা সম্পন্নভাবে কাজ করেছি। সবার সাথে ভালো সম্পর্ক। কেউ কোনোরকম নেতিবাচক বা ইঙ্গিতপূর্ণ কথা আজ পর্যন্ত বলেনি।

আগামী ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
এখন ভিজ্যুয়ালি ঢুকে গেছি। দেখি আমাকে আপনারা কীভাবে গ্রহণ করেন। আমার ভক্ত আছে কি না। ভক্ত যদি বাড়ে তাহলে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারব। তবে ভালো অবস্থান যে কারও কাম্য। সেটা মাথায় রেখে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আরআর