images

বিনোদন

নারীর জন্য এই দেশ কখনও স্বর্গরাজ্য ছিল না: রুনা খান 

রাফিউজ্জামান রাফি

২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

নারীর প্রতি সাইবার সহিংসতার বিরুদ্ধে সরব দেশের অভিনেত্রীরা। ‘মাই নাম্বার, মাই রুলস’ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তারা। শরীরে হয়রানির সংখ্যা লিখে ছবি প্রকাশ করছেন। অভিনেত্রী রুনা খানও তাদের একজন। এ মুভমেন্টসহ সাইবার হেনস্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকা মেইলের।

‘মাই নাম্বার, মাই রুলস’ আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার গল্পটা জানতে চাই। 

আমার সাথে যোগাযোগ করে আলী যাকের ও সারা যাকেরের কন্যা শ্রীয়া সর্বজয়া। ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানায়। আমরা যারা একটু পরিচিত মুখ তারা প্রতিনিয়ত অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হই। ওই জায়গা থেকে সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে ১৫ দিনের এই ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে বলে। হাসতে হাসতে ওকে বলছিলাম যে এমনও দেখা যাবে যে ক্যাম্পেইনের পোস্টের নিচেও হয়তো আমাদের বুলিং করা হবে এবং তাই হচ্ছে। সে বলল সেটা হলেও আমরা চুপ করে বসে থাকব না। চেষ্টা চালিয়ে যাব। ওই জায়গা থেকে এই ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া। কেননা আমরা চাই অনলাইনে নারী হয়রানি বন্ধ হোক। 

495376173_10236382871012603_3285356249382588855_n_20250525_142910251

সামাজিক মাধ্যমে নোংরা মন্তব্যসহ বিভিন্নভাবে পরিচিত নারীদের হেনস্তা করা হয়। আপনার পরিবারের সদস্যদের ওপর কীরকম প্রভাব ফেলে বিষয়টি? 

আমার পরিবারের সদস্যদের এতে কিছুই যায় আসে না। তাছাড়া আমরা এ দেশের নারীরা এর মধ্য দিয়েই জীবন যাপন করি। রাস্তায় বের হলে একজন রিকশাওয়ালাও নারীকে কটূক্তি করে। হকার, সবজি বিক্রেতা, বাস কন্ডাকটর, হেল্পার— প্রত্যেকে নারীদের কটূক্তি করে। সমাজের ওই চিত্রই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। আমার ধারণা শুধু আমি না, কোনো পরিচিত মুখের পরিবারে সদস্যদেরই এগুলো নিয়ে অসুবিধা হয় না। কারণ সমাজের চিত্রটা আমরা জানি। 

ইনবক্সেও হেনস্তার শিকার হয় নারীরা… 

ও মাই গড! শুধু পরিচিত মুখ না, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এরকম নারীদের ইনবক্স ঘাটলে অসংখ্য অপরিচিত অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পাঠানো ছবি পাওয়া যায়। তবে যে প্রসঙ্গগুলোতে কথা বলছি সেগুলোর মুখোমুখি অনেক দিন ধরে হচ্ছি। তাই এখন আর কিছু আসে যায় না। 

515022231_10237401631880988_1822538327174771537_n_20251006_124828303

আপনার দৃষ্টিতে দেশের নারী হেনস্তার চিত্র কেমন?

নারীর জন্য এই দেশ কখনও স্বর্গরাজ্য ছিল না। আগেও সহিংসতা, অসম্মান ছিল। কিন্তু গত এক-দেড় বছরে যে পরিমাণ নারী ধর্ষণ, হেনস্থা ও হত্যার খবর পত্রিকাগুলোতে পেয়েছি সেই সংখ্যা গত ১০ বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। গত এক বছরে এত হত্যা এবং ধর্ষণের খবর দেশের প্রথম সারির পত্রিকায় দেখেছি! তাহলে কী পরিমাণ অনিরাপত্তার মধ্যে দেশের নারীরা বাস করছে! আমি আপনি তো এই দেশের সবচেয়ে নিরাপদ এবং সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা মানুষ। আমি বিশ্বাস করি এদেশের প্রগতিশীল নারী হচ্ছে প্রান্তিক খেটে খাওয়া নারীরা। যারা ইট ভাঙে, গার্মেন্টসে কাজ করে, মজুরের কাজ করে, মাটি কাটে। কালচারাল শিক্ষিত নারীরা প্রগতিশীলতার চাইতে ভান বেশি করে। সত্যিকারের প্রগতিশীলতা ধারণ করে প্রান্তিক নারীরা। তাদের জন্য যখন দেশটা এরকম অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে তখন একজন সুবিধাভোগী নারী হিসেবে মনে করি আমার দায়িত্ব অনলাইন, অফলাইনে চলমান নারী সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। 

প্রচলিত আইনের মাধ্যমে সামাজিকমাধ্যমে নারী হেনস্তা কতটা রোধ করা সম্ভব? 

যেখানে হত্যা, ধর্ষণের বিচার নেই সেখানে অনলাইনে হেনস্তামূলক মন্তব্যের বিচার কে কার কাছে চাবে, কোথায় পাবে— আমি ঠিক জানি না। তাছাড়া জাতিগতভাবে আমাদের ভদ্রতা, সভ্যতাবোধের অভাব আছে। সে কারণে যেকোনো শ্রেণীর পুরুষ যেকোনো নারীকে কটু মন্তব্য করতে পারে। একজন হেলপার ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েকে, মাস্টার্স পাশ, কর্পোরেট চাকরিজীবী নারীকে অসম্মান মূলক কথা বলতে পারে। অধিকাংশ পুরুষ-ই শুধু পুরুষ এ কারণে নারীকে অসম্মানমূলক কথা বলতে পারে। এই ব্যাপারগুলো জাতিগতভাবে আমাদের সভ্যতা ভদ্রতা বোধের তীব্র অভাবের কারণে ঘটে। তবে সেটা অনেকের মধ্যে, সবার মধ্যে না। আমরা নারীরা মানুষ হিসেবে সম্মান চাই। অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা চাই না।

588930161_18387877780180730_9044698054206149417_n

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কীরকম হতে পারে? 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা পরিবার এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এবারের ক্যাম্পেইনটা নারীকেন্দ্রিক বলে বারবার নারী নারী করছি। কিন্তু আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রে বুলিং হয়। কেউ আমার চেয়ে মোটা হলে, শুকনো হলে বুলিং করি। কেউ আমার চেয়ে কালো হলে বুলিং করি। বয়স, রং, উচ্চতা— প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাইকে বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। এগুলো বন্ধে, অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানো বন্ধে পরিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশটা কোনো জেলখানা না। এখানে প্রত্যেক মানুষ একই পোশাক পরবে, একই খাবার খাবে, একই কথা বলবে তা হতে পারে না। সমাজে বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা দর্শন বিশ্বাসের মানুষ থাকবে। তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ভিন্ন হবে। তারপরও তারা একই সমাজে বাস করবে। এটাই সমাজ ও দেশের সৌন্দর্য। সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত ফৌজদারী অপরাধ বলে গণ্য না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কারও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অশালীন আচরণ করা যাবে না। এই বোধ তৈরি করতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। 

গত মাসে ‘স্বপ্ন’ নামে একটি টেলিছবির শুটিং শেষ করেছি। সামনে মাসে আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার শুটিং করার শুরু করার কথা। শুটিং হলে বিস্তারিত জানাতে পারব। মুক্তির অপেক্ষায় আছে মাসুদ পথিকের ‘বক’, কৌশিক শংকর দাসের পরিচালনায় ‘দাফন’ এবং জাহিদ হোসেনের ‘লীলা মন্থন’। সোহেল রানা বয়াতী পরিচালিত ‘নিদ্রাসুর’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার কাজ করেছি। আরও একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার শুটিং শেষ করতে যাচ্ছি। আরেকটি সিনেমা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কথা হচ্ছে।    

আরআর