রাফিউজ্জামান রাফি
২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
৭৪ তম মিস ইউনিভার্সের আসরে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন তানজিয়া জামান মিথিলা। ১২১ দেশের সুন্দরীদের মধ্যে তার ঝলমলে উপস্থিতি নজর কাড়ে সবার। সেরার যুদ্ধে জায়গা করে নেন ত্রিশে। ক্লোজডোর ভোটিংয়ে হারান মিস ইউনিভার্স মুকুটজয়ী মিস ফাতিমা বশকে। গতকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরে ঢাকা মেইলের কাছে মনের আগল খুলেছেন মিথিলা।
সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছিল। বিমানবন্দরে নেমেই উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। কেমন লেগেছে?
ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছে, তাকে আপনারা নিতে এসেছেন— খুব ভালো লেগেছে। বিমানবন্দরে নেমে মনে হয়েছে দেশের মানুষের কাছে আমি বিজয়ী। যদিও মন খারাপ ছিল। গিয়েছিলাম প্রথম স্থানের জন্য। তারপরও ফেরার পর মনে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমি এক নাম্বার।

দেশের অনেকে আপনাকে ভোট দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার পোশাক নিয়ে কটূক্তি করেছেন। বিষয় দুটি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
বাংলাদেশের ও মিস ইউনিভার্সের একজন প্রতিনিধি হিসেবে যেটা করণীয় ও প্রযোজ্য ছিল আমি সেটাই করেছি। কারণ বাংলাদেশিদের যেন তারা ছোট চোখে না দেখে, বাংলাদেশের প্রতিযোগীকে নিয়ে যেন তারা জাজমেন্টে না যায়, বাঁকা চোখে না নেয়। আমার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে বড় করা। সেটা করে এসেছি। তাছাড়া আমার মনে হয় এখনকার তরুণ প্রজন্ম পোশাক নিয়ে একদম জাজমেন্টাল না। তারা যেটা মনে চায় পরে, যেভাবে চায় সেভাবে সবকিছু করে। আর মানুষ হিসেবে স্বাধীনতা আমার হিউম্যান রাইট। আমি কারও জন্য ক্ষতির কারণ না হলেই হয়। কী পরেছি, তাতে তো কারও ক্ষতি হচ্ছে না। আমি মিথ্যা বলছি না, খারাপ কিছু করছি না। দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে যেটা প্রয়োজন সেটা করেছি। কেননা ওখানে কিছু বিষয় উল্লেখ থাকে। সেগুলোর ওপর নাম্বার দেওয়া হয়। আমি সেসবই করেছি এবং আমার কাছে মনে হয় এটাই প্রফেশনালিজম।
১২১ দেশের প্রতিনিধিরা এক হয়েছিলেন। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে। অভিজ্ঞতা জানতে চাইছি।
অনেকগুলো দেশের মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। একসঙ্গে থেকেছি, সুখ-দুঃখ শেয়ার করেছি। সবাই সবার থেকে অনেককিছু শিখেছি। নতুন সংস্কৃতি, নতুন ভাষা। নতুন নতুন বন্ধু বানিয়েছি। ওই জায়গা থেকে এটা আমার জন্য বড় অভিজ্ঞতা। এই শিক্ষাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে যাওয়া একজন প্রতিযোগীর এই অভিজ্ঞতাগুলো আগে থেকে থাকলে তা প্লাস পয়েন্ট।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে যারা মিস ইউনিভার্সে প্রতিনিধিত্ব করতে যাবেন তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
একটি প্রতিযোগিতায় গেলে সেখানে কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। জিততে হলে সেগুলো মানতে হবে। আর যদি ঘুরতে যান তাহলে অসুবিধা নেই। জিততে পারবেন না। উল্টো দেশের নাম ডুবিয়ে আসবেন। সামনে যারা মিস ইউনিভার্সে যাবে তাদের আমরা স্পেশাল ট্রেনিং দেব। প্রথমে শেখাব, প্রফেশনালিজম কীভাবে দেখাতে হয়। কারণ প্রফেশনালিজম না থাকলে প্রথমেই মার্কস কাটবে। কারণ ওখানে আপনার ব্যক্তিত্ব, আচরণ, পেশাদারিত্ব, সময়ানুবর্তিতা, কাজের প্রতি একাগ্রতার পাশাপাশি যারা ম্যানেজার, আমাদের অর্গানাইজ করে রেখেছেন তাদের কথা শুনছেন কি না, তাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছেন— সবকিছুর ওপর বিচার করা হয়। এগুলো ভেতরের জিনিস। আমি অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে এসেছি। অনেক দিন ধরে মডেলিং করায় প্রফেশনালিজম আগে থেকেই ছিল। তাছাড়া আমি কাজের প্রতি বরাবর-ই সিরিয়াস। ওই জায়গা থেকে আমার অনেক সুবিধা হয়েছে। চেষ্টা করব পরবর্তী প্রতিযোগীকে যথাসাধ্য সাহায্য করতে। যেন বাংলাদেশকে ঠিকঠাক রিপ্রেজেন্ট করতে পারে।
মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ফাতিমা বশ সম্পর্কে জানতে চাই।
শি ইজ অ্যা গুড পারসন, গুড কুইন। মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন যেহেতু তাকে সিলেক্ট করছে সেখানে একজন প্রতিযোগী হয়ে কিছু বলতে পারি না। বাট শি ওয়াজ অ্যা গুড ক্যান্ডিডেট।

আপনার অভিনীত মুক্তিপ্রতীক্ষিত ওয়েব ফিল্ম ‘থার্সডে নাইট’ নিয়ে কিছু বলুন।
অনেকদিন পর বাংলাদেশে অভিনয় করেছি। জাহিদ প্রীতম ভাইয়ার সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। এটি শিক্ষামূলক একটি গল্প। অভিনয়ের পরিকল্পনা আমার আগে থেকেই ছিল এবং সেটা নিয়ে কাজ করছিলাম। এবার নিয়মিত হব। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভালো কাজের পাশাপাশি পেশাগত জায়গা থেকে নিয়মিত অভিনয় করব।
ঢালিউডের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সবাই অবগত। এর বাইরে রয়েছে নাটক, ওটিটি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন মাধ্যমকে প্রাধান্য দেবেন?
সিনেমা, ওটিটি— দুটোই করব। কোনোকিছুকে ছোট করে দেখছি না। কারণ বাংলাদেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রি একদমই বড় ছিল না। সেটা যদি বদলে যেতে পারে তাহলে মুভি ইন্ডাস্ট্রিও বদলাবে। অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোতেও পরিবর্তন আসবে। আর আমার কাছে সব কাজই বড় কাজ। এটাই আমার যাত্রার কথা।

কাজ নিয়ে পরিকল্পনা কী?
মিস ইউনিভার্সের জন্য বিরতি নিয়েছিলাম। কেননা এটা সিরিয়াস জিনিস। বাংলাদেশকে যেখানে নেওয়ার সেখানে নিতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। এখন আমার কাজ প্রজেক্ট ডেলিভারি। তাছাড়া বাংলাদেশকে যেন আন্তর্জাতিকভাবে আরও রিপ্রেজেন্ট করা যায় সেই চেষ্টা থাকবে। সেটা হোক বলিউড, নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক, প্যারিস ফ্যাশন উইক থেকে। কেননা এ ধরণের অফার আমি পাচ্ছি। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে আগেও কাজ করেছি এবং সামনেও করব।
আরআর