images

বিনোদন

সম্মানী চেয়ে নেওয়ার চেয়ে ভিক্ষা করা ভালো: আইশা খান 

রাফিউজ্জামান রাফি

২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম

ছিমছাম-পরিপাটি অভিনেত্রীদের একজন আইশা খান। উপস্থাপনায়ও  সিদ্ধহস্ত। সম্প্রতি একটি রিয়্যালিটি শো সামলাচ্ছেন। সেই সূত্রে আলাপ জমেছিল ঢাকা মেইলের সঙ্গে।  

কী নিয়ে ব্যস্ত? 

এই মুহূর্তে নাটকের ব্যস্ততা নেই। উপস্থাপনায় ফিরেছি। সেজন্য আগামী দুই মাসের জন্য নাটক থেকে বিরতি নিয়েছি। যে রিয়্যালিটি শোয়ে আমাকে প্রথম উপস্থাপনার সু্যোগ দেওয়া হয়েছিল সেই ম্যাজিক বাউলিয়ানার পুরো আসরজুড়ে থাকছি এবার। টানা দুই মাস ক্যাম্পে থাকতে হবে। এ অবস্থায় নাটকের শুটিং কষ্টদায়ক। সম্পূর্ণভাবে মনোযোগী হওয়া-ও যাবে না। তাই এরকম সিদ্ধান্ত। 

583694336_1152738876843176_505611594965850322_n
আইশা খান, ছবি: আহমেদ তাজ 

‎শিকড়ে ফিরে কেমন লাগছে? 

‎শিকড়ের কাছে ফিরতে সবসময় ভালো লাগে। মাছরাঙা টেলিভিশন আমার দ্বিতীয় বাড়ি। তাদের সঙ্গে টানা ছয় বছর কাজ করেছি। তখন দেখা যেত ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফেরা হতো না। সরাসরি টেলিভিশনে চলে যেতাম। প্রথম ঢাকার বাইরে লম্বা সময়ের জন্য শুটিংও ছিল মাছরাঙার রিয়্যালিটি শোয়ের। সেবার শুধু অডিশন রাউন্ডে উপস্থাপনা করেছিলাম। এবার পুরো শোয়ের দায়িত্ব আমার কাঁধে দেওয়া হয়েছে। 

২০২৫ কেমন গেল? 

২০২৫ আমার ক্যারিয়ারের সুন্দর একটি বছর হয়ে থাকবে। স্মৃতির ঝুলিতে অনেক ভালো কিছু জমা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর নাটকে ভালো গেছে। টরেন্টোতে আমার তৃতীয় সিনেমা শেকড় প্রদর্শিত হলো। ফিডব্যাক খুব ভালো পেয়েছি। বছরের শেষে এসে রিয়্যালিটি শোয়ে যুক্ত হওয়া। সব মিলিয়ে বছরটা একদম-ই খারাপ যায়নি। 

588579175_3257377064437865_6498204755523209799_n
আইশা খান, ছবি: আহমেদ তাজ 

২০২৫-এর কোনো একটি কাজ নিয়ে বলতে বললে কোনটা সামনে রাখবেন? 

‎একটা তুলে আনা কঠিন। বছরের শুরুতে ‘নেক্সট ডোর নেইবার’ নামে একটি কাজ করি। এ ধরণের গল্পে সচারচর কাজের সুযোগ পাই না। হয়তো নির্মাতারা বানাতে চান না কিংবা এরকম গল্প ভাবেন না। পরিচালক মাহমুদা সুলতানা রীমা সেভাবে ভাবতে পেরেছিলেন। তার চিন্তার সঙ্গে আমরাও একমত হতে পেরেছিলাম। তাই হয়তো বছরটা খুব সুন্দরভাবে শুরু করতে পেরেছিলাম। যেটা ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে আরও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। 

কাস্টিং কাউচ নিয়ে কোনো অভিজ্ঞতা আছে আপনার?

‎কাস্টিং কাউচ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না। আমাকে এর সম্মুখীন হতে হয়নি। কারণ ক্যারিয়ারের শুরু দিকে আম্মু আমার সঙ্গে থাকতেন। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে থাকাকালীন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন থেকে মা আমার সঙ্গে যাওয়া-আসা করতে পারেন না। ততদিনে মোটামুটি ইন্ডাস্ট্রির সবাই আমার সম্পর্কে ভালো করে জেনেছেন। ওই জায়গা থেকে এরকম অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত মোকাবেলা করতে হয়নি। সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টও ফেস করতে হয়নি। কারণ আমার চেহারাটা একটু মুডি। হয়তো কেউ কিছু বলার আগে ভাবেন— বলা ঠিক হবে কি না। তবে অনেকের থেকে অনেক ধরনের কথা শুনেছি। আমার সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। এটা শুধু নারী না, নিউ কামার বা স্ট্রাগল পিরিয়ডের সবার সঙ্গে ঘটে। এর সমাধান উচিত। এমন না যে সবাই অর্থের জন্য কাজ করছেন। তবে আমি আমার সময় ও মেধা এখানে খরচ করছি। যেটা আরেকজনের কাছে প্রোডাক্ট। তার পরিবর্তে সম্মাননা। সেটা যদি দিতে না পারেন তাহলে অযথা শুটিং সেট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার মানে হয় না। অনেক আর্টিস্টকে দেখি একটা দৃশ্যের জন্য সারাদিন বসে থাকেন। রাতে গিয়ে সেই দৃশ্যটি ধারণ করা হয়। তারপর যখন তাকে পারিশ্রমিক কম বা দেওয়া-ই হয় না বা বারবার চাইতে হয় সেটা লজ্জাজনক। আমি মনে করি, সম্মানী যদি চেয়ে নিতে হয় তার চেয়ে ভিক্ষা করা ভালো।

472372787_546064595095073_5101866126746748989_n_20250101_135050505
আইশা খান, ছবি: অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত 

অনেককে কর্মঘণ্টা নিয়ে বলতে শোনা যায়। আপনার মন্তব্য কী? 

আর্লি মর্নিং কল না থাকলে সকাল দশটার মধ্যে সেটে ঢুকতে পছন্দ করি। সকাল বা ভোরের কোনো ক্লিপ লাগলে আলাদা কথা। সেরকম না হলে এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে চাই। কিন্তু আমি চাইলে হবে না। সবাইকে চাইতে হবে। কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে যতদূর শুনেছি ওনাদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা থাকে। সেটা হতে পারে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা। সময়মতো সবাই সেটে ঢোকে। কাজ থাকুক আর না থাকুক রাত আটটা বাজলেই চলে যায়। যতটুকু শুনেছি পারিশ্রমিক তারা স্যালারি আকারে পান। কিন্তু আমরা ওনাদের মতো সিরিয়াল করি না। এখানে ফিকশন বা সিঙ্গেল ফিকশন বেশি। দেখা যায় দুই থেকে তিন দিনে শুটিং শেষ হচ্ছে। কিন্তু আমারও মনে হয় সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কর্মঘণ্টা হলে বাসায় ফিরেও ৭-৮ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে পারতাম। এরকম হলে ভালো। উৎসবগুলোতে কাজ তুলতে আমরা নিজ থেকে সময় দিই। কেননা রমজানে সেহরি ও ইফতারে বেশ সময় চলে যায়। সেটা বুঝে লেট নাইটে মিলেমিশে কাজ করি। কিন্তু তা যদি সারা বছর করতে হয় তাহলে সমস্যা। আশা করি এখনে পরিবর্তন আসবে।

অন্যান্য কাজের খবর… 

নতুন কাজে আপাতত যুক্ত হচ্ছি না। মোট তিনটি সিনেমায় কাজ করেছি। এরমধ্যে ‘শেকড়’ খুব ভালো ছিল। প্রসূন ভাইয়ার (প্রসূন রহমান) সঙ্গে কাজ করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পরবর্তী কাজেও এরকম একটা গোছানো টিমের সাথে যুক্ত হতে চাই। ‘ভয়ালে’ কাজ করে ভালো লেগেছিল। আমি নাটকের পরিচালক, সহ-অভিনেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ আমি দুই মাস কাজ করব না শুনেও তারা রাগ করেননি। উল্টো সহযোগিতা করেছেন। জানুয়ারির কাজ নিয়ে কথা চলছে। চূড়ান্ত হলে আবার ব্যস্ত হয়ে যাব। 

আরআর