রাফিউজ্জামান রাফি
১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
কালচে-লাল আলোয় মাখামাখি কোক স্টুডিও বাংলার আসর। মাখনের কণ্ঠে আকুতি— কৃপা করো দয়াল, ডাকি হে তুমারে…। সে ডাকে সাড়া দিয়েই যেন সুরের দেবীর আগমন। অস্পষ্ট অবয়বে স্পষ্ট হামিং মুহূর্তেই গায়ে কাঁটা দিয়ে গেল!
ভোরের আকাশে সূর্য রঙ ছড়াতেই যেমন রাত ফিকে হতে হতে দিনের আলো গাঁড় হয় তেমনই কালচে রঙ গুটাতে গুটাতে রূপালি আলোয় পরিষ্কার সব। চারপাশে যন্ত্রশিল্পীরা ব্যস্ত। মাঝখানে দু হাত উঁচিয়ে উপমহাদেশের কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লা। কণ্ঠে তার তখন খেলা করছে দামাদাম মাস্ত কালান্দার, আলী দা পেহলা নাম্বার।
সেই সুর, কণ্ঠ, জোশ— কোথাও যেন একটুও ভাটা পড়েনি। কান ও মন বারবার চমকিত হয়েছে। এর আগে গানটির বিভিন্ন ভার্সনে যেভাবে নিজেই সব আলো চম্বুকের মতো টেনেছেন এখানেও তাই। অথচ গায়িকাকে ঘিরে একেকজন খ্যাতিমান যন্ত্রশিল্পী। সুরের খেলা খেলতে যাদের জুড়ি নেই। কিন্তু কারও হাত রুনার গায়কীর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সাহস দেখায়নি।
এখানেই প্রশ্ন। কোক স্টুডিও বাংলার ফিউশন নির্ভর আসর হঠাৎ এমন অচেনা আচরণ করল কেন? তবে কি হাত দেওয়া বারণ ছিল নাকি সাহস হয়নি? সে যাই হোক অর্ণব, শুভেন্দুদের চোখে মুখে শিশুসুলভ তৃপ্তির ছাপ যেন বলছিল— এ বেলা নিজেকে চেনানোর না, সান্নিধ্যে ধন্য হওয়ার।
তবে গানের কোরাস অংশগুলো অন্যরকম আবহ তৈরি করেছে। সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের দুই একটি টোন কানে ধরেছে। এর বাইরে গানটিতে কোক স্টুডিওর কোনো কৃতিত্ব নেই। বরং তারাই যেন নিজেদের ঝুলি সমৃদ্ধ করেছে।
প্রশ্ন থেকে যায়, কোক স্টুডিও বাংলার সংস্করণটি কি দামাদাম মাস্ত কালান্দারের সেরা ভার্সন হতে পারল? মোটেই না। রুনা লায়লা এই গান বিভিন্ন আসরে এতবার চমৎকারভাবে করেছেন যে সেখানে নতুনত্ব আনতে যাওয়া যেন বোকামি। তবে হ্যাঁ, কোনো এক সংগীত প্রতিযোগিতায় রুনা লায়লার সঙ্গে কিংবদন্তি আবিদা পারভীন, আশা ভোঁসলের যোগে গানটি এক স্বর্গীয় আবহ তৈরি করেছিল। আমার কাছে কোনো আয়োজন-ই তা ছুঁতে পারেনি।
যেতে যেতে বলি, শুরু থেকেই কোক স্টুডিও বাংলার আয়োজনে গান ব্যতীত আরও অলংকার থাকে। যা মুগ্ধ করতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় কানে তৃপ্তি না দিলেও চোখ আরাম পেতে বাধ্য হয়। এবার-ই প্রথম কোক স্টুডিওর কোনো আয়োজন শুধু গান দিয়েই উতরে গেল। আনুষঙ্গিক কোনো অলংকার ছাড়া। অবশ্য স্বয়ং রুনা লায়লা যেখানে সেখানে সব অলংকার নিষ্প্রয়োজন।