রাফিউজ্জামান রাফি
১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
হুমায়ূন আহমেদ হাত দিয়ে যা ছুঁতেন তা-ই যেন সোনা হয়ে যেত। অন্যতম উদাহরণ ফারুক আহমেদ। কথার যাদুকরে নাটক-সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকের ঘরের মানুষ হয়ে উঠেছেন তিনি। না থাকার এক যুগের বেশি সময় প্রতি দিন-ই হুমায়ূনকে মনে পড়ে তার। তবে আজ ১৩ নভেম্বর লেখকের জন্মদিনে ফারুক যেন পুরোপুরি বাস করেন হুমায়ূনে।
ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘মন খারাপকে সঙ্গী করে কাটে দিনটি। সারা জীবন ওনার (হুমায়ূন আহমেদ) সঙ্গে কাটালাম। ১৭-১৮ বছর নুহাশ পল্লীতে ছিলাম। তাকে নিয়ে যত স্মৃতি আছে সব মনে পড়ে।’
তার কথায়, ‘এদিন ফেসবুকে হুমায়ূন ভাইকে নিয়ে পোস্ট দিই। আর মনে করি তিনি থাকা অবস্থায় আজকের দিনে কোথায় ছিলাম। নভেম্বর মাসে রিহার্সাল, শুটিং করতাম। নুহাশ পল্লীতে থাকতাম। অনেক সময় ১৩ তারিখ ওনার জন্মদিন পালন হতো। আনন্দ করতাম। এখন আর সেগুলো হচ্ছে না।’
এক জন্মদিনে ফারুক আহমেদের থেকে উপহার পেয়ে শিশুর মতো খুশি হয়েছিলেন লেখক। সাজিয়ে রেখেছিলেন ড্রয়িং রুমে। সেই গল্পের ঝাঁপি খুলে অভিনেতা বলেন, ‘এক জন্মদিনে চিন্তা করলাম হুমায়ূন (হুমায়ূন আহমেদ) ভাইকে কী দেব। এত বড় একজন মানুষ! ওনার তিনটা জিনিস বেশি পছন্দ ছিল। বৃষ্টি, জোছনা, গাছ। ভাবলাম সেখান থেকে একটা দিই। জোছনা আর বৃষ্টি তো দেওয়া যাবে না। তাই ছোট একটি গাছ কিনে ওনার বাসা দখিন হাওয়ায় যাই। হুমায়ূন ভাই বের হলেন। আরও লোকজন ছিল। আমি বললাম, জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আপনার সঙ্গে দেখা করতে এলাম। খুব খুশি হলেন। ছোট টবসহ গাছটি দিয়ে বললাম, আপনার জন্য এনেছি। খুশি হয়ে বললেন, আমার জন্মদিনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। এটা আমি ড্রয়িং রুমে রেখে দেব। নিজ হাতে গাছটি ড্রয়িং রুমে সাজিয়ে রাখলেন। বললেন, এখানে থাক। আমার প্রিয় জিনিস। ওনার আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিল আমি লাখ টাকার জিনিস দিয়েছি। অথচ গাছটার দাম এক হাজার টাকাও ছিল না।’
কাজের সূত্রে হুমায়ুন আহমদের সঙ্গে ফারুক আহমেদের পথচলা শুরু। তবে লেখকের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকায় আগে থেকেই ছিল পারিবারিক সম্পর্ক। তার কথায়, ‘হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সেসময় ও কোনো এক কারণে জাহাঙ্গীরনগরে যেত। দেখা হতো কথা হতো। স্বাধীনতার পর যখন পরিচয় তখন ওরা মোহাম্মদপুর থাকত। পরে সরকার শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে পল্লবীতে জায়গা দিলে ওরা সেখানে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমাদের যোগাযোগটা কম ছিল। একবার নেত্রকোনা শুটিং করতে গেলাম তখন ও ছিল। বেশ গল্প হয়েছিল।’
ডাকসাইটে অভিনেতারাও অপেক্ষায় থাকতেন হুমায়ূন আহমেদের ক্যামেরায় দাঁড়ানোর। সুযোগ না পেয়ে অনেকে করতেন আফসোস। তবে ফারুককে সেটি করতে হয়নি। কেননা টিভিতে নাম লিখিয়েই তিনি ডাক পেয়েছিলেন জাদুকরের। ফারুক বলেন, ‘‘আমি টেলিভিশনে দুটি নাটকের পর-ই হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাই। প্রথম নাটকটি ছিল সেলিম আল দীনের। পরেরটা ইমদাদুল হক মিলনের। তারপর-ই করলাম হুমায়ূন ভাইয়ের। সেসময় তিনি ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘বহুব্রীহি’সহ বেশকিছু নাটক করে সমসাময়িকদের চেয়ে এগিয়ে গেছেন। আগের নাটকগুলো নিয়ে আফসোস ছিল না। কারণ তখন টেলিভিশন নাটক-ই করি না। যদি করতাম তাহলে হয়তো বলতাম, আহারে এত নাটক করি হুমায়ূন আহমেদের নাটক করতে পারি না।’’
জীবনে চলার পথে হুমায়ূন আহমেদের কিছু পরামর্শ সঙ্গে থাকে ফারুকের। সেগুলো হলো, ‘পারতপক্ষে মিথ্যা বলবা না। কাউকে ঠকাবা না। প্রতিদানের শর্তে উপকার করবা না। আর পরিশ্রম করবা।’
হুমায়ূন আহমেদের হাতে গড়া ফারুক কাজ করেছেন লেখকপুত্র নুহাশ হুমায়ূনের সঙ্গেও। বাবার ‘তারা তিনজনে’র আদলে ডা. এজাজ, ফারুক আহমেদ ও স্বাধীন খসরুকে নিয়ে ‘ওরা তিনজন’ বিজ্ঞাপন বানিয়েছে ছেলে।
নুহাশের সেটে দাঁড়িয়ে হুমায়ূন আহমদের ছায়া দেখেছেন তিনি। বলেন, ‘নুহাশ অনেক বুদ্ধিমান। পড়াশোনা করা ছেলে। হুমায়ূন ভাই যেমন লেখাপড়া করতেন। তার আন্তরিকতাও বাবার মতো। সকাল ৬ টায় কলটাইম দিত। দেখতাম আমরা যাওয়ার আগে সে বসে আছে। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করত। বোঝার ক্ষমতা অনেক। এগুলো হুমায়ূন ভাইয়ের মধ্যে ছিল।’
আরআর