ঢাকা মেইল ডেস্ক
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম
ভালোবেসে ভক্তরা তাকে ডাকেন ‘ঢালিউড কুইন’। নানা কর্মকাণ্ডের কারণে কেউ কেউ আবার ‘বিতর্কের রানি’ বলে কটাক্ষও করেন। তিনি বাংলাদেশি সিনেমার অন্যতম সুন্দরী নায়িকা অপু বিশ্বাস। কয়েক মাস আগেও যিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী, সেই তিনিই বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তুলে দিয়েছেন বিতর্কের ঝড়।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়ার খোকসায় আয়োজিত বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শোডাউন, ভোজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন অপু বিশ্বাস। সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়ক নিরব হোসেন। এ নিয়ে এখন সামাজিক মাধ্যমসহ নানা মহলে ছিঃ ছিঃ রব।
বিএনপির অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ তারকা অপু বিশ্বাসের উপস্থিতি হতবাক করেছে সবাইকে। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম রসিয়ে রসিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা কাঠগড়ায় তুলেছেন অপু বিশ্বাসের নীতি নৈতিকতাকে। কয়েক মাস আগেও যিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করেছেন, সেই নামকরা অভিনেত্রী এখন কীভাবে বিএনপির অনুষ্ঠানে যান, উঠেছে সেই প্রশ্ন।
এ ঘটনায় এক নেটিজেন অপু বিশ্বাসের ধর্ম পালন নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তার মন্তব্য, ‘অভিনেত্রী যেভাবে বছরের ছয় মাস হিন্দু আর ছয় মাস মুসলমানের বেশ ধরেন, রাজনীতির ক্ষেত্রেও তিনি ছয় মাস আওয়ামী লীগ, বাকি ছয় মাস বিএনপি।’ অভিনেত্রী নিজের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করেন বলেও মন্তব্য তার।
মো. শামীম খান হৃদয় নামে বিএনপির এক কর্মী ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘এই কারণে আমাদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা মানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা।’
সাদ্দাম আসিফ নামে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আর কোনো শিল্পী কি ছিল না? বাংলাদেশে যারা স্বৈরাচার সরকারের জন্য প্রচার-প্রচারণা করেছে, তাদেরকে বিএনপির প্রচারণায় কেন আনা হলো? আমি ধিক্কার জানাই।’
মো. রফিক নামে একজন লিখেছেন, ‘অপু বিশ্বাসকে বিএনপিতে এনেছে ওরা কারা? তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা জরুরি। অপু বিশ্বাস সারা বাংলাদেশে নৌকা মার্কা প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগ করেছিল। এটা কি কোনো নেতাদের চোখে পড়ে না। তাকে যারা বিএনপির অনুষ্ঠানে এনেছে, তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।’
মো. সাইফুল ইসলাম বুলেট নামে একজনের অভিযোগ, ‘ড্যামি নির্বাচনে এমপি হওয়ার জন্য হাসিনার শাড়ির আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াতো, সেই মহিলাকে বিএনপির প্রোগ্রামে এনে বিগত ১৬ বছর ধরে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে।’
নয়ন সরকার নামে একজন লিখেছেন, ‘বিএনপিতে কি অতিথি করার মতো লোকের অভাব ছিল? এই অনুষ্ঠানের নীতি নির্ধারক যারাই ছিলেন, তাদের প্রতি রইল নিন্দা। আপনাদের মতো লোকদের কারণেই দলের দুর্নাম এবং সাধারণ জনগণ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’
বিএনপির কর্মী দাবি করা মো. মিলন নামে একজনের মন্তব্য, ‘এদেরকে যারা দলে জায়গা করে দিচ্ছে, আমি একজন জাতীয়তাবাদী কর্মী হিসেবে বলতে চাই, আগে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। দেশনায়ক তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, এরা দলের ভেতর লুকিয়ে থাকা বিষাক্ত কিট। যত দ্রুত সম্ভব এদের বহিষ্কার করুন, না হলে এদের কারণে বড় ঝুঁকিতে পড়বে দল এবং নেতাকর্মী।’
এমন শত শত নেতিবাচক মন্তব্য জমা পড়েছে বিএনপির অনুষ্ঠানে অপু বিশ্বাসের অতিথি হয়ে যাওয়া নিয়ে। জানা গেছে, এই অভিনেত্রী ও নায়ক নিরবকে অনুষ্ঠানটিতে আমন্ত্রণ জানান খোকসা পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন হোসেন। সেখানে ভূরিভোজের পাশাপাশি দুই তারকা বক্তব্যও দেন।
এদিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত বিএনপির ওই অনুষ্ঠানে যারা অপু বিশ্বাসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে দলের হাইকমান্ড থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার লক্ষ্যে দুই দফায় মনোনয়নপত্র কেনেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের প্রাক্তন স্ত্রী অপু বিশ্বাস। প্রথমবার ২০১৯ সালে। কিন্তু সে বার শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পাননি আলোচিত এই নায়িকা। অর্থাৎ, তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ফের আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়নপত্র কেনেন অপু বিশ্বাস। সেদিন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অভিনেত্রী জানান, তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু দ্বিতীয় চেষ্টায়ও এমপি হওয়ার খায়েশ পূরণ হয়নি অপু বিশ্বাসের।
তবে শুধু মনোনয়ন চাওয়া নয়, আওয়ামী লীগের পতনের আগ পর্যন্ত দলটির যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং প্রচার-প্রচারণার অগ্রভাগে দেখা গেছে অপু বিশ্বাসকে। এছাড়া মাত্র ১০০ টাকা পারিশ্রমিকে একটি সিনেমায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধও হয়েছিলেন। যদিও পরে সিনেমাটি থেকে সরে দাঁড়ান।
পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে তোলা একটি ছবি বহুদিন ধরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজের প্রোফাইলে দিয়ে রেখেছিলেন অপু বিশ্বাস। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ‘নারী উন্নয়নের প্রতীক’ বলে মুখে ফেনাও তুলতেন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাসিনার সঙ্গের সেই ছবিটি প্রোফাইল থেকে সরিয়ে ফেলেন তিনি।
সেই আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ অপু বিশ্বাসের বিএনপির অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠা খুবই স্বাভাবিক। এ নিয়ে এরইমধ্যে নানা মহলে হইচই শুরু হয়ে গেছে। গালে হাতে দিয়ে ভাবতে বসেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এখন এই জল কতদূর গড়ায়, সেটাই দেখার।
এএইচ