বিনোদন ডেস্ক
০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম
গেল ঈদুল ফিতরের সিনেমা ‘বরবাদ’-এর নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়ের বিরুদ্ধে পারিশ্রমিক না দেয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের বিষয় অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েল জানান, সিনেমাটিতে সরাসরি অভিনয় না করলেও নায়িকা ইধিকা পালের বোনের দৃশ্যে ডাবিং করেছেন তিনি। তবে সেই কাজের কোনো পারিশ্রমিক এখনও পাননি। সংবাদ প্রচারের পর আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। যা নজর এড়ায়নি অভিনেত্রীর।
এ ঘটনার পর আজ রোববার (৩ জুলাই) গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আমি ইন্ডাস্ট্রিতে উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষ না। আমি এখনকার একজন মেয়ে। আপনাদের মেয়ে। আমি কোনোভাবেই তাঁকে (মেহেদী হাসান হৃদয়) ভাইয়কে অভিযুক্ত করিনি। সে যে আমাকে পারিশ্রমিক দেননি এটা নিয়েও আমি কথা বলিনি। আমি এটা বলেছি যে ‘বরবারদ’ সিনেমায় একটি চরিত্রে আমি ডাবিং করেছি। সেটা ইধিকা পালের বোনের চরিত্রের।”
দোয়েল যোগ করেন, “আমি তো ভয়েস আর্টিস্ট না। কেউ তো আমাকে ফোন করে কাজটা করতে বলে বিধায় স্টুডিও পর্যন্ত যাওয়া হয়। আমার সঙ্গে যখন ওই ব্যক্তির কথা হয় তখন সে পরিচয় দেন তিনি ‘বরবাদ’ সিনেমার এডি। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি হৃদয় ভাইয়ের এডি বলছি। ভাইয়া তো এখন ব্যস্ত আছেন আপনাকে ফোন করতে পারছেন না। আপনাকে একটি চরিত্রের ডাবিং করে দিতে হবে।’ তার কথা শুনে আমি বলছিলাম, ‘তোমরা তো বড় বাজেটের ছবি করছো। টাকা পয়সা নিয়ে কার সঙ্গে কথা বলব। তোমার সঙ্গে কথা বলব নাকি হৃদয়ের ভাইয়ের সঙ্গে?’ তখন সে উত্তর দেয়, ‘না আপু আমি কথা বলে জানাচ্ছি।’ তখন ভাইয়া জানতে চায় আমার প্রত্যাশা কত। তখন হৃদয় ভাই বলেন, ‘আপু এতো টাকা তো বাজেট নেই। একটু কমায়ে নিয়েন। আমি তখন হ্যাঁ বলি। কারণ ডাবিংটা করব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি তো ভয়েস আর্টিস্ট না। যদি এত বড় একটা প্রজেক্টের অংশ হতে পারি তাহলে আমার জন্য অবশ্যই ভালো বিষয়। এডির সঙ্গে কথাবার্তা সব ঠিক হলো। হৃদয়ের এডি আমাকে ওইদিন রাতেই ডাবিং করতে যেতে বলে। আমি সেদিন না গিয়ে পরের দিন যাই। সেদিন মোটামুটি চার ঘন্টা ডাবিং করে চলে বাসায় চলে আসি। ডাবিং শেষে মেহেদীর এডি বলেন, ‘ভাই (মেহেদী হাসান হৃদয়) বলেছেন বিকালে আপনাকে টাকা বিকাশ করবেন।”
কথার সুত্র ধরে অভিনেত্রী বলেন, “ডাবিং করার পর আমি তিন-চারদিন আর ফোন করিনি। ও (এডি) আমাকে তিনদিন পর ফোন করে বলেন, ‘আপু আপনার আর একটি লাইন বলতে হবে। ওটা ডাবিং করে আসেন।’ তখন আমি একটি শুটিংয়ের জন্য শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলাম। আমি তখন বললাম, ‘এখন তো যেতে পারব না। আমি তোমাকে চার ঘন্টা সময় দিলাম। তুমি সবকিছু শেষ করে নেবে না। তখন সে বলে আপু যাইতে হবে। আমি বলি দেখেন আমি তো শ্রীমঙ্গলে এসেছি। এখানে আমার শুটিং।’ এ কথা শুনে এডি আমাকে বলেন, ‘আপনি যদি দায়িত্ব নিয়ে ডাবিং শেষ না করেন তাহলে পেমেন্ট দেব কীভাবে। আমার সঠিক মনে নেই কী বলেছিল। রাগ করে ফোন রেখে দিলাম’ এরপর আর কোনোদিন তাঁকে ফোন দেইনি।”
এরপর একদিন আমি হৃদয় ভাইকে ফোন করি কিন্তু সে সময় সিনেমা রিলিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হয়তো ফোন ধরতে পারেননি। ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ।
‘বরবাদে’র পরিচালকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কথা টেনে অভিনেত্রী বলেন, “এর আগে হৃদয় ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। সেখানে পারিশ্রমীক নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। গভীর রাত পর্যন্ত শুটিং করেছি। তাঁর গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। সবকিছু অনেক ভালো ছিল। তাহলে খামকা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কোনো মানে নেই। অভিযোগের কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি তাঁর বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করব?”
দোয়েল আরও জানান, “বরবাদ’ মুক্তির পর আমি হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখেছি। এমনিতেও যেতাম। তবে আমি গিয়েছিলাম এটা দেখতে যে ছবিতে আমার ভয়েসটা রাখা হয়েছে কি না? গিয়ে দেখলাম ভয়েসটা আমার। তখন ভেবেছিলাম হৃদয়ের সঙ্গে দেখা হলে এ বিষয়ে কথা বলব। এসব ঘটনা তো এখানেই শেষ।”
অভিযোগের বিষয় কীভাবে গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে সে প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন দোয়েল। অভিনেত্রী বলেন, “সম্প্রতি ক্যাফে কলম্বিয়াতে আড্ডা দেওয়ার সময় ইন্ডাস্ট্রির নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়। সিনেমার বাজেট প্রসঙ্গে উঠতেই আমি বলি ‘বরবাদ’ সিনেমায় তো বাজেট নিয়ে সমস্যা নেই। আমি ডাবিং করেছি এবং পারিশ্রমিকের টাকা পাই, এটা সত্য। কিন্তু কথাটা হয়তো হৃদয় ভাই বা প্রযোজক পর্যন্ত যায়নি। তবে দিনশেষে আমি তো টাকাগুলো পাই। তাঁরা কেন হিসেব টা রাখেন না। কে কোন চরিত্রে ডাবিং করেছেন। আমি তো এই সিনেমার জন্য চারটি ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যের জন্য ডাবিং করেছি। চার ঘন্টা সময় দিয়েছি। তখন কথা প্রসঙ্গে প্রযোজক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল হওয়ার বিষয়টা উঠে আসে।
ক্যাফেতে আড্ডা দেওয়ার দুইদিন পর এক সাংবাদিক আমাকে ফোন করেন। নাম প্রকাশ করা যাবে না। তারপর উনি পুরো ঘটনাটি শুনতে চান। আমিও সব কিছু নিয়ে খোলামেলা কথা বলি। কথা শেষে আমি ওনাকে বলেছিলাম ‘ভাইয়া এখন তো আসলে ট্রেন্ড যাচ্ছে যত উল্টো পাল্টা ক্যাপশন দেওয়া যায়। আমি কিন্তু এরকম একদম চাচ্ছি না। বা এটাকে আমি খুব ভাইরাল করতে চাচ্ছি না। আপনি নিউজটা করবেন না। কোনোভাবে হয়তো আপনি আমার বিষয়টা জানতে পেরেছেন। তাহলে আপনি হৃদয় ভাইকে একবার ফোন দেন। এই নিউজটা করবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “তখন উনি (সাংবাদিক) বলেন, ‘না আপু একটা নিউজ করি’। তখন আমি বলেছিলেন, নিউজ যদি করেন তাহলে ক্যাপশনের বিষয়ে সচেতন থাকবেন।’ তখন তিনি বলেন, ‘না না আপু। আমি এমন কিছু দেব না। পরে দেখি ‘বরবাদ’-এর পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়ের বিরুদ্ধে আমি নাকি অভিযোগ দিয়েছি। এটা তো খুবই লজ্জা জনক।
ইএইচ/