বিনোদন ডেস্ক
২২ জুলাই ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
সমসাময়িক ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে সরব থাকেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নিয়েও গলা চড়িয়েছিলেন। গতকাল সোমবারের বিমান বিধ্বস্তের পর থেকে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনায় অনেকেই বিরক্ত। সাদিয়া আয়মানও এই দলে। এ নিয়ে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস। পাঠকদের জন্য সাদিয়া আয়মানের লেখাটি তুলে দেওয়া হলো।
গতকাল অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করছিল, লিখতে পারিনি। বাচ্চাগুলোর জন্য বুক ফেটে যাচ্ছিল। একেকটা বাচ্চার মিসিং পোস্ট দেখেছি আর দোয়া করেছি যেন ওরা বেঁচে ফেরে।
এক সময় আমি নিজেও শিক্ষিকা ছিলাম, টিউশন করতাম, কোচিংয়ে পড়াতাম, ছোট ছোট অনেক বাচ্চাদের পড়িয়েছি। এত নিষ্পাপ, ফুলের মতো পবিত্র, পাখির মতো চঞ্চল ওরা! ইচ্ছা করে সারাদিন বুকের মধ্যে জড়িয়ে বসে থাকি। ওদের সাথে সময় কাটালে মনে হয় পৃথিবীটা এখনও কত সুন্দর! কত সহজ সরল! মনে মনে ভাবতাম, আচ্ছা ওরা বড় হলেও কি এরকম সরলই থাকবে? কত শত অবুঝ প্রশ্ন করবে? ভাবতাম, ওরা বড় না হলেই ভালো, এরকম নিষ্পাপ থাকুক আজীবন।
গত কালকের ঘটনার পর যারা আল্লাহর কাছে পাখি হয়ে উড়ে গেছে, মনে হচ্ছে আল্লাহর ওদেরকে ভালোবেসে নিয়ে গেছে, থাকুক ওরা আল্লাহর কাছে ভালো। আদরে থাকবে, যত্নে থাকবে, জান্নাতের পাখি হয়ে থাকবে সোনা বাচ্চাগুলো। বেঁচে থেকে এমনই একদিন না একদিন কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় ঠিকই মারা যেত, এই দেশের সিস্টেম কখনও ঠিক ছিল না, ঠিক হবেও না, রাজনীতির জন্য যে কেউ যা ইচ্ছা করতে পারে।
এ দেশে সাধারণ মানুষের জীবনের দাম নেই, এ দেশে সাধারণ মানুষের কান্নার দাম নেই। কী লাভ বেঁচে থেকে? কী পাবে বেঁচে থেকে? কয়েক দিন পর পর এই ঝামেলা, ওই ঝামেলা, মারামারি, কাটাকাটি হতেই থাকে। এগুলো কখনও থামেনি, থামবেও না । যত বড় আর ভালো মানুষই বসুক না কেন চেয়ারে, সবাই-ই বদলে যায় ।
গতকাল হাসপাতালে যেখানে একটার পর একটা রোগী আসছে পোড়া শরীর নিয়ে, যেখানে রোগীদের পরিবারের ঠিকমতো ঠাঁই হচ্ছে না, সবাই তাদের আদরের সন্তান কিংবা ভাইবোনকে খুঁজতে অস্থির সেখানে কোনো কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা যাচ্ছে তাদের দলবল নিয়ে!! একজনের সাথে তারা আরও ১০-২০ জন নিয়ে যাচ্ছে! কেন? সামনে ভোট তাই এখনই শো ডাউন (অফ) করতে হবে!
রিকশাওয়ালা, সিএনজি ওয়ালারা ১০০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকা চাইলো, দোকানদাররা পানির দাম ৫০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা চাইলো! এরকম একটা মুমুর্ষ দিনেও তারা মন টা নরম করতে পারল না !
এদিকে কি লাশের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করছে? গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত ২২ জনের নিহতের খবর দেওয়া হয়েছে। এটা কী কোনোভাবেই সত্য মনে হচ্ছে? এখনও অনেক পরিবার তাদের সন্তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। সেই হিসাব কে দেবে? কার কাছে বিচার চাইবে? কার কাছে গেলে তাদের সন্তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে? সেই উত্তর কেউই জানে না। কিছুক্ষণ আগে দেখি আমাদের ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের অফিসিয়াল ভেরিফাইড পেজ থেকে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে একটি পোস্ট দিল (এখন পোস্টটি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে)।
পরিবারগুলো তাদের নিখোঁজ সন্তানদের সন্ধান চায়, অর্থ চায় না । অর্থ দিয়ে যদি তাদের সন্তানদের খুঁজে এনে দিতে পারেন তবে আমরা আপনাদের ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অর্থ দিতে রাজি। বাচ্চাগুলোর পরিবার তাদের সব দিয়ে দেবে, এমনকি যারা তাদের বাচ্চা হারিয়েছে তারাও সাহায্য করবে । তবে কি ফিরিয়ে এনে দিতে পারবেন বাচ্চা গুলোকে? ছোট মুখে একটা বড় কথা বলি,“বাংলাদেশের “রাজনীতি কিংবা রাজনীতিবীদ” সবই এখন হাস্যকর হয়ে গেছে”।