images

বিনোদন

কখনও ভাবিনি অভিনেতা হব: সৈয়দ এজাজ

রাফিউজ্জামান রাফি

২৯ জুন ২০২৫, ০৬:১৮ পিএম

ঈদের সিনেমা ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’-এর মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয়েছে সৈয়দ এজাজ আহমেদের। বিসমিল্লায় বাজিমাত করেছেন তিনি। ফলে আলোচনার টেবিলে তার নাম। ঢাকা মেইলের সঙ্গে ফোনালাপ জমেছিল এ অভিনেতার। 

দর্শক হিসেবে ডা. আসিফকে আপনার কেমন লেগেছে? 

চরিত্রটি পুরো সিনেমার গতিবিধি পাল্টে দেয়। দর্শকরা যখন ভাবছিলেন— কে খুন করেছে? কী হয়েছে? ঠিক তখন এই চরিত্রটি সিনেমার গতি বাড়িয়ে দেয়। মানুষটাকে দেখে তো এরকম মনে হয়নি, সে এটা কেন করল, ওর পেছনের গল্পটা কী— দর্শক হিসেবে বলব এই আগ্রহগুলো বাড়িয়ে তোলে। আমার কাছে মনে হচ্ছিল খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ক্যারেক্টার। 

506293159_10162285269828961_7487401529512612837_n

সিনেমাটিতে নিজের অভিনয় দেখে কোনো আফসোসবোধ কাজ করছে? 

আফসোসবোধ নেই। তবে কাজের জায়গায় সবসময় ভালো করা যায়। কিছু বিষয়ে তো অবশ্যই চাইলে আরও ভালো করতে পারতাম। যদি একটু রিহার্সাল করা যেত। অ্যাকশন দৃশ্যগুলো দেখে তখন মনে হয়েছে দারুণ।  এখন মনে হচ্ছে আরও ভিন্নভাবে করা যেত। এটা পুরো সিনেমার জন্য প্রযোজ্য। সৃজনশীল কাজে উন্নতির অনেক সুযোগ থাকে। তবে সিনেমাটা এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তাতে আমি খুবই খুশি। দর্শকরা এডিটিং, অ্যাকশন, ক্লাইম্যাক্স— সবকিছুর প্রশংসা করেছে। ওই জায়গা থেকে আমার কোনো আফসোসবোধ নেই। এটা আমার ক্যারিয়ারের প্রথম কমার্শিয়াল সিনেমা। আমি খুবই হ্যাপি। 

‎প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের সঙ্গে অভিনয়শিল্পীদের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ আছে এখন। তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া মনে আছে? 

একজন দর্শক আমার কাছে এসে অনেক কান্নাকাটি করেছেন। এর কারণ আমার ক্যারেক্টারের পেছনের গল্প। অর্থাৎ ডা. আসিফ কেন এমন করল। অন্য কারণ হচ্ছে আমার ক্যারেক্টারের পরিণতি। ওই জায়গায় উনি (দর্শক) ইমোশনাল হয়ে যান। এই দুই জায়গায় বেশি সাড়া পেয়েছি। এছাড়া সিনেমা শেষে আমাকে নিয়ে অনেকে অস্বস্তিতে পড়ে যান। এই লোকটা এত খারাপ কেন, এত হিংস্র কেন— এগুলো ভাবেন। আমার সহকর্মী বলছিলেন, ভাইয়া আপনাকে দেখে কেমন যেন লাগছে। ভয় না ঠিক। আবার ভয়ও লাগে। একটু অস্বস্তিবোধ দিচ্ছে ক্যারেক্টরটা। যেটা আসলে আমার উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ থাকে যাদের বাইরে এক কিন্তু ভেতরের অন্যরকম। অভিনেতা হিসেবে আমি ওই দিকগুলো তুলে আনতে পেরেছি। মানুষজন আমার চরিত্রের দুটি দিকের সঙ্গেই নিজেদের যুক্ত করতে পেরেছেন। এতে আমি সন্তুষ্ট। ‎

511275053_10162356968893961_8571398980065752206_n

‎‘এশা মার্ডার: কর্মফল’-এর শুটিংয়ের সময়ের কোনো অভিজ্ঞতা… 

সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল শীতকালে। ঠান্ডার মধ্যে কাজটা অনেক কঠিন ছিল। ক্লাইম্যাক্সে বেশ কিছু দৃশ্য শীতের মধ্যে পারফর্ম করতে হয়েছে। চ্যালেঞ্জিং ছিল।  তবে এনজয় করেছি। বাঁধন (আজমেরী হক বাঁধন) আপুর সঙ্গে প্রতিটি সিকোয়েন্স এনজয় করেছি। মানুষ হিসেবেও উনি খুব ভালো। আমি যেন ক্যারেক্টার নিয়ে ভাবতে পারি, কাজ করতে পারি সেই স্বাধীনতা পরিচালক সানি সানোয়ার ভাই আমাকে দিয়েছেন। সহশিল্পী হিসেবে বাঁধন আপা আমাকে বিশ্বাস করেছেন। আমি যেভাবে করতে চেয়েছি আপু সেই পালসটা বুঝেছেন। সবকিছু মিলিয়ে সানি ভাই এবং এশা মার্ডারের পুরো টিম তারা আমাকে আগলে রেখেছিল। বুঝতে দেয়নি এটা আমার প্রথম চলচ্চিত্র। 

‎অভিনয়ের শুরুর গল্প জানতে চাচ্ছিলাম… 

১২-১৪ বছর ধরে থিয়েটার করছি। কখনও ভাবিনি অভিনেতা হব। শুরুতে ব্যাকস্টেজে কাজ করতাম। আস্তে আস্তে অভিনয়ে আসি। আরম্ভটা বিজ্ঞাপন দিয়ে। ফিল্মের সুযোগ যখন আসে আমার স্ত্রী অভিনেত্রী তাসলিমা হোসেন নদী অডিশন দিতে বলে আমাকে। আমিও ভাবলাম চেষ্টা করে দেখি কী হয়। এরপর সানি সানোয়ার ভাই আমাকে পছন্দ করলেন। এই জায়গাটা আমি খুব এনজয় করেছি। কেননা আমি ইন্ডাস্ট্রির কেউ না। ফিল্ম করিনি কখনও। বাইরে থেকে এসে অডিশন দিয়ে এরকম ক্রিটিক্যাল ক্যারেক্টারকে ধারণ করা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। 

513837235_4240012749611507_4003770765422010727_n

অভিনেতা হওয়ার পরিকল্পনা না থাকলে থিয়েটারে যুক্ত হয়েছিলেন কেন? 

২০০৬ সালে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ক্লাবে যুক্ত হই। লক্ষ্য ছিল নতুন কিছু করা। সেখান থেকে থিয়েটার আমাকে খুব টানে। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই লজ্জাশীল ও চুপচাপ। কিন্তু থিয়েটারের মাধ্যমে নিজেকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায়। এক মানুষকে এতভাবে প্রকাশ করার লোভ সামলাতে পারিনি। সেকারণে থিয়েটারে ঢুকেছিলাম। প্রাথমিক অবস্থায় ব্যাকস্টেজে কাজ করতে পছন্দ করতাম। আস্তে আস্তে মনে হলো স্টেজে পারফর্ম করি। সেখান থেকে অভিনয়ে ঢুকে পড়া। এরপর অনেক বছর হয়ে গেল। সিনেমাও করে ফেললাম। 

অভিনেতা হিসেবে কোন ধরণের চরিত্রে কাজ করতে চান?

‎ভারতীয় অভিনেতা বোমান ইরানি ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ সিনেমায় প্রফেসরের চরিত্রে ছিলেন। ‘মে হুনা’য়ও প্রফেসরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু চরিত্র দুটিতে তিনি একেবারেই আলাদা। চালচলন, কথাবার্তা— সব। আমারও ইচ্ছা একদম ভিন্ন কিছু করা। যদি খল-চরিত্রের কাজ আসে। আমি হয়তো ভাবব। কিন্তু ইচ্ছা থাকবে ভিন্ন কিছু করার। ব্যক্তিগতভাবে আমার লক্ষ্য সবধরনের চরিত্রে কাজ করা। যেমন এই ঈদে অ্যাকশন, থ্রিলার, ফ্যামিলি ড্রামাসহ  ছয় ধরনের ছবি মুক্তি পেয়েছে। আমি অ্যাকশন সিনেমায় কাজ করতে চাই। ফ্যামিলির ড্রামাও করতে চাই। অভিনেতা হিসেবে আমার সক্ষমতার ৫ ভাগও দিতে পারিনি। আমি মনে করি আমার অনেক আইডিয়া ও সক্ষমতা আছে যেটা পর্দায় দেখাতে পারব। সেই জায়গা থেকে আরও ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টারে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করব। যদি খলচরিত্র আসে তবে চেষ্টা করব খলচরিত্রের বাইরে গিয়ে কতটুকু করা যায়। যাতে মানুষ বোঝে এজাজ সব ধরনের অভিনয় পারে এবং সেই সক্ষমতা তার আছে। 
‎‎196326773_10158846730983961_8453390456819108419_n

অভিনয়ের বাইরে লেখালেখি ও গান করেন। সে সম্পর্কে জানতে চাই।  

‎কলেজ জীবন থেকে কবিতা লিখছি। নিজের প্রায় ১৪-১৫ টি গানের সুর তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬টি তৈরি। তিনটা গানের রেকর্ডিং চলছে৷ আশা করছি, এ বছর ছয়টি গান রিলিজ দিতে পারব। 

বর্তমান ব্যস্ততা…

বিজ্ঞাপনের অফার পাই। কিন্তু আমার অভিনয়ের আগ্রহটা বেশি। অন্যদিকে বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের জায়গা কম। ফিকশনে কাজ করার আগ্রহ বেশি। এরইমধ্যে কয়েকটা অফার এসেছে। আমিও ভাবছি। সবাই এশা মার্ডার-এ আমার চরিত্রটা পছন্দ করেছেন। সে জায়গা থেকে তাদের একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আমি চাই এশা মার্ডারে যা করেছি তাকে ছাপিয়ে আরও ভালো কিছু করতে। একটু যাচাই-বাছাই করে কাজ করব ইচ্ছা আছে।

আরআর