রাফিউজ্জামান রাফি
১৬ জুন ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম
ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘নীলচক্র’। আরিফিন শুভ ও মন্দিরা চক্রবর্তী অভিনীত ছবিটি দর্শকের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। পাশাপাশি ছড়াচ্ছে সচেতনতার বার্তা। ছবিটির পরিচালক মিঠু খান। ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথোপকথনে মনের আগল খুলেছেন তিনি।
‘নীলচক্র’ কী আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে?
সিনেমাটি একজন দর্শককেও যদি সন্তুষ্ট করতে পারে সেটাই আমার অর্জন। তাছাড়া আমাদের টার্গেট অডিয়েন্স অন্যরকম। এই সিনেমা বোদ্ধাদের জন্য না। অভিভাবক ও জেন-জি জেনারেশনকে সচেতন করার গল্প। আগে-পেছনে, ফিকশনে কোথায় দুর্বলতা— ভাবতে যাইনি। যে মেসেজ দিতে চেয়েছি দর্শকরা তা নিতে পারছেন কি না সেটাই মূল বিষয়। দর্শকরা গ্রহণ করছেন। এমনও দর্শক পেয়েছি যিনি ছবিটা দেখতে ২০ বছর পর হলে এসেছেন। স্ট্রোক করে একজন দশ বছর শয্যাশয়ী ছিলেন। তিনি এই সিনেমা দেখতে এসেছেন। এর থেকে বড় পাওয়া একজন নির্মাতার কী হতে পারে।

ঠিক কি কারণে সিনেমার জন্য এই গল্প বেছে নেওয়া?
দেশের এক সেলিব্রিটির জীবনের ওপর দিয়ে এরকম ঝড় গিয়েছিল। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত। তাছাড়া এটা একটা গ্লোবাল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু বাংলাদেশ না, আশেপাশের দেশ থেকে শুরু করে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত পাবেন। অনেকে এই ট্র্যাপে পড়ছেন। সেই জায়গা থেকে আরও কী কী যোগ করলে একটি সিনেমা হতে পারে সেজন্য গবেষণা করা হয়েছিল। আমরা সব জায়গায় গিয়েছি, দেখেছি। এমনও পেয়েছি, ভাইরালের নেশায় শিশুদের পাচার করে দিয়েছে। এরকম বিষয়গুলো নিয়ে আরএনডির মাধ্যমে এই ডিজাইন করেছি। যেন অভিভাবকেরা জানতে পারেন তাদের সন্তানরা কোথায় কী করছে, কীভাবে ধ্বংস হচ্ছে। শুধু যে বাচ্চারা ধ্বংস হচ্ছে তা না পরিবারকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ওই জায়গাটা ফোকাসে রেখে আশেপাশে, ডানে-বামে যা দেখতে পাচ্ছেন সব গল্পের প্রয়োজনে রাখা হয়েছে। এ কারণে অভিভাবকরা বলছেন এটাই একমাত্র সিনেমা যেটা সবার দেখা উচিত।
সিনেমাটি আরও আগে মুক্তির কথা ছিল…
এটা ভুল। গত বছর সিনেমার ফার্স্ট লুক প্রকাশ করেছিলাম। ওই জায়গা থেকে সবাই ধরে নেন ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। কিন্তু ‘নীলচক্র’ ছবির কেউ কোথাও আনুষ্ঠানিকভাবে বলেনি ছবিটি আসছে। কারণ আমরা সেন্সর পেয়েছি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তাছাড়া ছবির কিছু কারেকশনও ছিল। সেগুলো হয়ে আসতে সময় লেগেছে।

৫ আগস্টের পর আরিফিন শুভকে নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছে। বিষয়টি ছবির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে— আশংকা ছিল?
না, আমি আমার প্রযোজক কখনও মাথায় নিইনি বিষয়টি। কারণ শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির চর্চার জায়গা অন্যরকম হয়। শিল্পীরা যে কারও পাবলিক ফিগার হয়ে যেতে পারে। শাকিব খানকে দেখুন। ভারতে তার অনেক ভক্ত। তিনি তো ওই দেশের নাগরিক না। শিল্পীর কোনো সীমানা নেই। তাদের নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু কেন হবে। আরিফিন শুভ ক্যারেক্টারের প্রয়োজনে অভিনয়টা করেছেন। ওই সময় যদি বিএনপি বলত জিয়াউর রহমানের ক্যারেক্টার করতে তিনি করতেন। কারণ তিনি একজন শিল্পী। শিল্পীদের মধ্যে যারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাদের সবাই চেনেন। শুভকে রাজনীতির কোথাও দেখা যায়নি। যদি তার কোনো রাজনৈতিক বিষয় থাকে তবে রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহিতা থাকবে। আমাদের কাছে না। কিন্তু রাষ্ট্র তো তার কোনো অপরাধ পাচ্ছে না। রাজনীতিতে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি শিল্পটাকে চর্চা করেন। মনেপ্রাণে ধারণ করে্ন। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত তাকে আমার কাছে শিল্পী মনে হয়। এর বাইরে তিনি কোনোকিছুতেই থাকেন না। এই মানুষটাকে নিয়ে রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হয়েছে। এটা দুঃখজনক।
সিঙ্গেল স্ক্রিনে কবে আসছে ‘নীলচক্র’?
আগামী সপ্তাহে সিঙ্গেল স্ক্রিনে আসছে ছবিটি। হল মালিকরা সিনেমাটা চাচ্ছেন। আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি জানিয়েছে আগামী সপ্তাহে আমরা সিঙ্গেল স্ক্রিনে দিচ্ছে ছবিটি।

এরইমধ্যে ‘তাণ্ডব’ পাইরেসির শিকার…
খুবই দুঃখের কথা। এরচেয়ে বড় দুঃখ একজন নির্মাতা-প্রযোজকের হতে পারে না। কারণ এটা ব্যবসা। শাকিব খানকে আপনি কখনও নাটক বা অন্য কোনো মাধ্যমে দেখবেন না। ওনাকে দেখতে থিয়েটারে যেতে হয়। সেই মানুষগুলোকে বঞ্চিত করে কে বা কারা ছবিটি ছোটপর্দায় ছেড়ে দিল! ‘তাণ্ডব’-এর পাইরেসির খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ‘নীলচক্র’ টিম প্রতিবাদ করেছি। পাইরেসির বিপক্ষে পেজ থেকে পোস্ট করেছি। পাইরেসি রুখতে সবাইকে এক থাকতে হবে। কেননা ‘নীলচক্র’ও পাইরেসি হতে পারে। সেকারণেই পাইরেসিকে না বলতে হবে।
নতুন কাজ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি…
আগামীতে ট্রু ইভেন্টের ওপর সিনেমা বানাতে যাচ্ছি। স্ক্রিপ্টের কাজ চলছে। আমরা হিরোর সাথে কথা বলেছি৷ স্ক্রিপ্ট শেষ হলে বসব আমরা।