আলমগীর কবির
২১ মে ২০২৫, ১১:১৬ পিএম
বিশ্ব সিনেমার অন্যতম বড় আসর কান চলচ্চিত্র উৎসব-এ ২০ বছর পর ফিরে এলেন জাফর পানাহি। এই বিরতির পর, তার নতুন ছবি ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ নিয়ে কানে উপস্থিত হয়ে দর্শকদের কাছ থেকে ১০ মিনিটের করতালি অর্জন করেন। এই ছবিটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন এর ভয়াবহ বাস্তবতার গল্প বলে, যা পুরো পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে।
জাফর পানাহি তার জীবনের চরম সংগ্রাম এবং ইরানি শাসন এর বিরুদ্ধে তার সাহসী লড়াইকে পর্দায় তুলে ধরেছেন। ছবির কাহিনী সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু হয়ে, একটি গভীর রাজনৈতিক থ্রিলারে পরিণত হয়, যেখানে এক দল মানুষ তাদের রাজনৈতিক বন্দিত্বের প্রতিশোধ নিতে ওঠে। ছবিটির কাহিনির মধ্যে রাজনৈতিক বন্দী এবং তাদের সংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে, যা অনেকেরই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
জাফর পানাহি গত কয়েক দশকে ইরানী শাসনের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদের জন্য বারবার গ্রেপ্তার এবং কারাবন্দি হয়েছেন, কিন্তু তার নির্মাণশক্তি কখনোই থেমে থাকেনি। ২০১০ সালে, পানাহি তৎকালীন ইরান সরকার এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার অভিযোগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হন এবং তার পরিচালনা করার অধিকার বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরও তিনি সাহসিকতার সাথে গোপনে সিনেমা বানিয়ে গেছেন, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রদর্শিত হয়।
আরও পড়ুন—

কানে ফিরে আসার পর, পানাহি বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল, হয়তো আমি আর ছবি বানাতে পারব না। কিন্তু সিনেমা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই। এটি আমার জীবন, এটি আমার সংগ্রাম।’ তার নতুন ছবিটি, যা ফ্রান্সের লেস ফিল্ম পেল্লিয়াস প্রযোজনা করেছে এবং ইরানে চিত্রায়িত হলেও, প্যারিসে সম্পাদনা করা হয়েছে, ছবিটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনে তুমুল প্রশংসা অর্জন করেছে।
সিনেমা বানানোর প্রতি তার নিষ্ঠা এবং তার দৃঢ়তার জন্য পানাহি এখনো ইরান-এর রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী কণ্ঠ। তার এই সাহসিকতার মধ্যে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো হিরো নই, আমি কেবল নিজের কাজ করি। আমি যেমন ইরানি মহিলারা নিজেদের অধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম করেন, তেমনি আমি আমার সিনেমা বানানোর জন্য সংগ্রাম করছি।’
আরও পড়ুন—

ছবির মুক্তি কেবল কান-এ নয়, সারা পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইরান থেকে পানাহি এবং তার সঙ্গীদের সংগ্রামকে তুলে ধরে, এই ছবিটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রতি এক গভীর বার্তা পাঠিয়েছে।
এতদিন পরে কানে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি তার জন্য অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। ২০০৩ সালে ক্রিমসন গোল্ড ছবির জন্য কান-এ প্রথমবার এসেছিলেন তিনি। সেই সময় তার সৃষ্টিকর্মকে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র দুনিয়ায় প্রচারের সুযোগ হয়েছিল। এরপর তিনি একাধিকবার ইরানি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে গোপনে ছবি তৈরি করেছেন। তার ‘এই ইজ নট আ ফিল্ম’ ২০১১ সালে কান-এ প্রদর্শিত হয়েছিল, যা অনেকের চোখে এক সাহসিকতার নিদর্শন।
কান ফেস্টিভ্যালের এই সাহসী প্রত্যাবর্তন জাফর পানাহি’র চলচ্চিত্রজীবন এবং তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনরায় একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন—
পানাহির বার্তা
পানাহি বলেন, ‘আমি যখন ইরানে ফিরে যাবো, তখন পরের সিনেমার জন্য নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। আমি আমার কাজ চালিয়ে যাবো, যেমন আগে করেছি।’ তার কথা থেকেই স্পষ্ট, তিনি কোনো প্রতিবন্ধকতার সামনে মাথা নত করতে চান না, বরং তার সিনেমা এবং শিল্প’র মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে চান।
//