বিনোদন ডেস্ক
২০ মে ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম
হাসপাতালে শয্যাশয়ী কবর খোদক মনু মিয়ার ঘোড়া হত্যার ঘটনাটিতে হতবাক নেটিজেনরা। অনেকে প্রকাশ করেছেন শোক। বিষয়টি নাড়িয়ে দেয় অভিনেতা খায়রুল বাসারকেও।
মনু মিয়াকে ঘোড়া কিনে দেবেন জানিয়ে গতকাল সোমবার সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন অভিনেতা। ওই পোস্টে মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করে যোগাযোগ করিয়ে দিতে নেটিজেনদের সহযোগীতা কামনা করেন। অতঃপর কবর খোদক মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছে খায়রুল বাসারের। মহান হৃদয়ের মানুষটির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুভূতি সামাজিক মাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেতা।
খায়রুল বাসার লিখেছেন, মনু চাচা দোয়া ছাড়া কিছু চান না আপনাদের কাছে। উনি আপনাদের জন্য দোয়া করেন আপনারা ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
আরও লেখেন, মনু চাচা বললেন ঘোড়ার জন্য তার কষ্ট নাই। কষ্ট নাই কারা তার ঘোড়াকে হত্যা করেছে তা নিয়েও। মনু চাচা মনে করেন তার ঘোড়ার সাথে তার যাত্রা এ পর্যন্তই রাখছেন আল্লাহ। ঘোড়াটার কপালে আল্লাহ সময় সীমা এই রাখছিলেন। বললেন সে মারা গেছে তো চোখে দেখি নাই তাই কষ্ট যেটুক হবার তাও হচ্ছে না। আসলে আর কতটা অভিনয় করলে সন্তানের প্রতি মায়া আড়াল করতে পারবেন; মনু চাচা ভেবে পাচ্ছেন না!
খায়রুল বাসার যোগ করেন, আবার জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি ফিরে ওকে ছাড়া শূন্য শূন্য লাগবে না? বললেন ১০ মণ খড় আর ১০ মন কুড়া কিনেছিলেন ওর জন্য। অল্প খাইয়ে ঢাকায় এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। এই খড় কুড়া ওর রিজিকে থাকলো না, তার আগেই সে চলে গেল! বাড়ি ফিরে এই খড় কুড়া দেখে কষ্ট হবে। বাড়ি ফিরে যে ঘোড়াটার জন্য কষ্ট হবে; এই ভেবেই মনু চাচার চোখ ভিজে উঠল! আমি একটু থামলাম। ভাবলাম কত আর শক্ত থাকা যায়! মায়া তো মনু চাচার আছে।
অভিনেতার কথায়, মনু চাচার অসুস্থতা বলতে ডায়বেটিস আর কোমর ব্যথা। কথাবার্তায় যা বুঝলাম খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম করেন খুব। ফজরের নামাজ পড়ে বেরিয়ে পড়েন ওনার দায়িত্বে, জোহরের নাম শেষে দাফন শেষ হয়, তারপর বাড়ি ফিরতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা বা রাত। সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবার খাওয়া হয় না। এমনটা প্রায়ই ঘটে, কারণ মৃত ব্যক্তির বাড়িতে উনি কখনও কিছু খান না। কবর খোঁড়া কাজে উনি কোনোদিন কারও থেকে এক পয়সা নেন নাই। নিঃস্বার্থভাবে নিরলসভাবে উনি মানুষের প্রতি উনার মহৎ দায়িত্বটাকেই এগিয়ে রেখেছেন!
তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই ঘোড়াটা কতদিন ছিল আপনার সাথে? উনি বললেন মুক্তির সময় থেকে উনি ঘোড়ায় চড়েন। ৭১-এ বয়স কত ছিল জিজ্ঞেস করলে বললেন মুক্তিদের বয়সের সমানই। ১৩-১৪? হেসে বললেন বয়স তখন ১৭-১৮-ই হবে মনে হয়। হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলাম এই কাজ কবে থেকে করেন? উনিও হেসে বললেন তখন বাবাজি তোমরা জন্মাও নাই।
তার ভাষ্য, মানুষের বাইক-সাইকেলের শখ থাকে। আমি যতটা বুঝলাম ওনার শখ ছিল হাতেম তাই হওয়া। মানুষের প্রয়োজনে ঘোড়ার পিঠে চড়ে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া। উনি ওনার সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে মহৎ কাজটিই করে গেছেন আজীবন। উনি সুস্থ হয়ে আবার ওনার শখের কাজে ফিরতে চান দ্রুত। আপনাদের দোয়ায় নিশ্চয়ই আল্লাহ উনাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলবেন। উনি কারও কাছে ঘোড়া চান না, দোয়া চান। ওনার কারও প্রতি অভিযোগ-অনুযোগ নেই। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে প্রয়োজনে ৭ টা ঘোড়া কিনতে পারবেন বলেছেন। যা হওয়ার হয়ে গেছে , আল্লাহ যা নির্ধারণ করতে চান তাই হবে। উনি মনে করেন সবই নসিব।
সবশেষে লিখেছেন,কতটা কদর বুঝি আমরা এমন মানুষদের! কি প্রতিদান পেল এই মানুষটা? হাঁটছি আর ভাবছি... মুক্তার মালা গলায় দিয়ে ঘুরে কপাল পুড়া! না কিনে উপায় কি কিনতে চাইলে ঘোড়া? মনু মিয়ার ঘোড়া তার জীবন দিয়ে আমাদের সাথে এক নায়কের পরিচয় করিয়ে দিল! আমাদের শেখা উচিত এই সমাজের মানবিক আদর্শ, সম্মান ও গর্ব আমাদের মনু মিয়া।