images

বিনোদন

১০ বছরে ১০০ ক্যানসার-কিডনি রোগীর চিকিৎসা করিয়েছি: জুনায়েদ ইভান

রাফিউজ্জামান রাফি

২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম

ঘড়ির কাঁটা বলছিল, আজকের মতো সময় শেষ। বাড়ি ফিরতে হবে। উঠি উঠি করতেই চোখ আটকে যায় জনপ্রিয় ব্যান্ড অ্যাশেজের গায়ক জুনায়েদ ইভানের কয়েক লাইনের একটি পোস্টে। 

নিজের ফেসবুকে ইভান লিখেছেন, ‘কোনোরকম ফেসবুক লাইভ কিংবা সংগঠন না খুলে, অ্যাওয়ার্ড, গণমাধ্যম, প্রচারণা ছাড়া গত ১০ বছরে চিকিৎসা করিয়েছি ১০০ জন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী অথবা জটিল কিডনি রোগীদের। যাদের অনেকে বেঁচে আছেন। অনেকে মারা গেছেন। 

এরপর গায়ক লিখেছেন, ‘অ্যাশেজ এমন একটি ব্যান্ড যারা প্রত্যেকটি কনসার্ট থেকে উপার্জিত টাকার একটি ভাগ খরচ করে মানুষের জন্য। এটা চলতে থাকবে। গ্রাম থেকে গ্রামে। শহর থেকে শহরে।

1636643332300

বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হয় জুনায়েদ ইভানের সঙ্গে। ঢাকা মেইলের কাছে মানবিক হৃদয়ের অধিকারী ইভান মনের আগল খোলেন। শোনান মানবতার সেবায় তার নিয়োজিত হওয়ার শুরুর গল্প। 

তিনি বলেন, ‘আমরা কখনও চাইনি কোনো ব্যানারের মাধ্যমে কাজটি করতে। যখন কনসার্ট করতাম তখন অনেকেই এসে বলতেন একজনের ক্যানসার হয়েছে কিংবা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। আপনি যদি কনসার্টটি করে দেন তাহলে ওই রোগীর চিকিৎসার খরচ তোলা সহজ হয়। তখন মনে হয়েছে কাজটি আমার জন্য সহজ। এরপর থেকে প্রতিমাসে এক-দুটি করে চ্যারিটি শো করতে থাকি। অনেক সময় নিজেই অ্যারেঞ্জ করতাম। কনসার্ট থেকে টাকা তুলতাম। একইসঙ্গে দেশজুড়ে যারা বিচ্ছিন্নভাবে ক্যাম্পেইন করেন তাদের বলতাম অর্থ সংগ্রহ করে ওই ব্যাক্তিকে (রোগী) সহায়তা করতে।’ 

তবে স্বচ্ছতায় যেন ঘাটতি না থাকে সেজন্য কিছু বিষয় মেনে চলতেন ইভান। তিনি বলেন, ‘সততার জায়গাটি ঠিক রাখতে আমরা কখনও নিজেদের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতাম না। রোগীর বাবা-মা, ভাই-বোন, অর্থাৎ তার আত্মীয় স্বজনের কাউকে মুখপাত্র বানাতাম। তিনি ক্যাম্পেইন কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আমি শুধু এখানে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করতাম। সারাদেশের মানুষজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা দিত। এরকম অনুরোধ বাড়তে থাকে।’ 

146127284_2641068282850629_3748961124993580429_n

ইভান বলেন, ‘আমরা সবসময় মানুষের কাছে টাকা না চেয়ে মাঝে মাঝে নিজেরাই কনসার্ট থেকে আয়ের একটা অংশ দেওয়া শুরু করি। চ্যারিটি করা শুরু করি। ওইসব কনসার্ট থেকে পাওয়া আমার পারিশ্রমিকের পুরোটাই দিতাম। পাশাপাশি সাউন্ডের লোকজনসহ আরও যারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাদেরও চ্যারিটি কনসার্টগুলো থেকে পারিশ্রমিক কম নিতে বলতাম। তারাও হাসিমুখে কম নিতেন। সেসময় আমাদের সঙ্গে অন্য যে ব্যান্ডগুলো গান করত তারাও এ ব্যাপারে সাহায্য করত। নামেমাত্র পারিশ্রমিক নিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড় একটা অংশ ভালো অংকের অর্থ সাহায্য করত। তখন আমার মনে হয়েছে মানুষ আসলেই অনেক ভালো।’ 

প্রচারবিমুখতার কারণ ব্যখ্যা দিতে গিয়ে ইভান বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সালের দিকে শুরু করি। সেসময় সামাজিক মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করার কমিউনিটি সবে গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা প্রচার বিমুখ ছিলাম। কারণ এখানে অর্থের ব্যাপার আছে। কখন আবার কে প্রশ্ন তোলেন, নেতিবাচকভাবে দেখেন এই ভয়ে আমরা প্রচারে আসিনি তখন। পরে ভাবলাম আমরা যদি কাজ বন্ধ করি তাহলে যে লোকটি অসুস্থ তার ক্ষতি। পরে একসময় আমরা আনঅফিসিয়ালি কাজ শুরু করি।’

424928941_941232324040984_1028515469887616691_n

কেটে গেছে এক দশক। কতজনকে সাহায্য করলেন গুনে দেখেননি ইভান। তিনি বলেন, ‘এভাবেই কাজ করে আসছি। গুনে দেখিনি সংখ্যাটা কত। তবে সংখ্যাটা এরকমই (পোস্টে উল্লেখিত) হবে।’

চিকিৎসা ব্যবস্থা করেই থেমে যাননি অ্যাশেজের গায়ক। সুস্থ হয়ে ওঠার পরও রোগীদের খোঁজ নিয়েছেন আপনজনের মতো। ফলে রোগীদের অনেকেই আপন করে নিয়েছেন ইভানকে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু চিকিৎসাকালীন খোঁজ নিয়েই থেমে যাইনি। চিকিৎসা পরবর্তীকালেও রোগীর খোঁজ-খবর রেখেছি। কোনো এক ক্যানসারের রোগীর চিকিৎসা করিয়েছিলাম। সুস্থ হয়ে চার বছর পর ওই আপু আমাকে খুঁজে বের করেছেন তার বিয়ের দাওয়াত দিতে। বুঝতেই পারছেন সম্পর্কটা কোথায় গিয়ে পৌঁছায়। এর বাইরে একই উদ্দশ্যে অন্যদের আয়োজিত কনসার্টও আমরা করে দিয়েছি। তবে অধিকাংশ কনসার্টই আমাদের অ্যারেঞ্জ করা।’ 

নিজের প্রতিটি কনসার্ট থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশ এই কাজে ব্যয় করছে অ্যাশেজ। তবে এতদিন তা পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি। এবার মানবিক একই কাজটি ইভান করতে চাচ্ছেন একটু গুছিয়ে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক কনসার্ট থেকেই একটি নির্দিষ্ট অংশ এই কাজে খরচ করি। ভেবেছি এখন থেকে আরও গুছিয়ে করব। প্রতি কনসার্ট থেকে নির্দিষ্ট একটি অংশ রাখব। আলাদা অ্যাকাউন্ট করব। যেন আমাদের নির্দিষ্ট অংশ ওই অ্যাকাউন্টে জমা হয়। জমাকৃত ওই টাকা থেকেই কাজটি করব।’ 

unnamed_(2)

আজকাল যেখানে কেউ কাউকে বিন্দু পরিমাণ সাহায্য করে সিন্ধুসম আয়োজন করে প্রচার করে। সেখানে ইভানের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই প্রচারে। আগের মতোই প্রচার বিমুখ থাকতে চান। সুরে সরব হয়ে শ্রোতাদের আত্মিক প্রশান্তি দেওয়ার পাশাপাশি নীরবে হতে চান অসহায়ের সহায়।