রাফিউজ্জামান রাফি
০৬ মে ২০২২, ০২:৫৪ পিএম
লম্বা বিরতির পর অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসলেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। মাঝের সময়টায় উপস্থাপনা নিয়ে আলোচনায় থাকলেও তিনি যে একজন অভিনেতা, সেটা অনেকেই ভুলতে বসেছিলেন। কিন্তু ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘৭ নাম্বার ফ্লোর’ ওয়েব ফিল্মে অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, তিনি আসলেই জাত অভিনেতা। এতে তার চরিত্রটি আলাদাভাবে প্রশংসিত হওয়ায় যারপরনাই উচ্ছ্বসিত তিনি। ঢাকা মেইলকে জানালেন সেই ভালো লাগার কথা।
ফিল্মটি ভালো হবে জানতাম। কেননা, ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল ‘৭ নাম্বার ফ্লোর’ নিয়ে। নির্মাণে যত্নের কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু আমার অভিনয় যে এত প্রশংসিত হবে সেটা বুঝতে পারিনি। সবাই বেশ প্রশংসা করছেন। প্রচুর ফোন আসছে। অনেক রিভিউ পড়ছি। সবই পজিটিভ।
একদমই মনে হচ্ছে না। কারণ, আমি এখন উপস্থাপনা করছি। আমি মনে করি, এখানে অনেক বেশি সফল। অভিনয় আমার আগের পেশা এবং অভিনয়টা আমি জানি। অভিনয়ের প্রতি আমার মায়া ও প্রেম আছে। দুটোই আমার কাজ, দুটোর প্রতিই ভালো লাগা রয়েছে। কিন্তু উপস্থাপনায় আমি সুন্দর একটি ক্যারিয়ার পেয়েছি। তাই আফসোস বোধ কাজ করছে না।
এর কৃতিত্ব পুরোটাই নির্মাতা রায়হান রাফির। এর মধ্যে টুকটাক প্রস্তাব তো পেয়েছি। কাজও করেছি। কিন্তু রায়হান রাফির প্রস্তুতি, অ্যারেঞ্জমেন্ট আর তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক— এই তিন কারণই আমাকে ‘৭ নাম্বার ফ্লোরে’র সঙ্গে যুক্ত করেছে।
আসলে হঠাৎ বলে কিছু নেই। যার মেধা আছে সে সব ক্ষেত্রেই সফলতা লাভ করে। যেমন, আমি ভালো লিখতে পারি। এ দেশে লেখালেখিতে ভবিষ্যৎ থাকলে আমি বড় লেখক হতাম। মেধার জয় সবসময়ই। আপনি আজ সাংবাদিক। এমনও হতে পারে মেধার জোরে আপনি কাল বড় ব্যবসায়ীও হয়ে যেতে পারেন। মেধাবী মানুষ সব জায়গায়ই রাজত্ব করেন। আল্লাহর যদি রহমত থাকে, তাহলে তারা ঠকেন না। আমার অভিনয়ের চর্চা নেই বহুদিন হলো। আমি যদি চর্চা করে অভিনয় করতাম তাহলে আরও ভালো করতাম। তাই না?
সমালোচনা খুব সুন্দরভাবে গ্রহণ করি। বর্তমান সময়ে যেকোনো কাজে আলোচনার সঙ্গে সমালোচনাও থাকবে। এখন ইন্টারনেটের যুগ। মানুষের সর্বত্র অবাধ বিচরণ। আগে সমালোচনা শুধু সাংবাদিকরা করতেন। দেখা হলে অন্যান্যরাও করতেন। এখন জিনিসটা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যে কেউ যখন-তখন সমালোচনা করতে পারেন। ১৮ কোটি মানুষের দেশে সব আপনার মনমতো কেন হবে? সব মানুষ আমার উপস্থাপনা কেন পছন্দ করবে? আমার অভিনয়ই বা কেন পছন্দ করবে? সবার কাছে সব ভালো লাগবে না এটা মাথায় রেখে চলতে হবে।
হানিফ সংকেত কালজয়ী উপস্থাপক। প্রচণ্ড মেধাবী। তিনি কালকে অতিক্রম করেছেন। যিনি কালকে অতিক্রম করেন তার সঙ্গে আসলে প্রতিযোগিতার কিছু থাকে না। তিনি প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে। এখন যদি কেউ মনে করেন, তিনি হানিফ সংকেতের সমকক্ষ হবেন কিংবা তাকে ছাড়িয়ে যাবেন; তবে ভুল করবেন। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার, ফজলে লোহানী আর হানিফ সংকেত এ দেশে উপস্থাপনাকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর আগে উপস্থাপনা যে একটা শিল্প তা কেউ উপলব্ধি করতেন না। দেখা যেত চেহারা সুন্দর কাউকে ধরে এনে দাঁড় করিয়ে দিতেন। যাকে খুশি তাকে দিয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়াতেন। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বড় বড় ব্যক্তিরা বুঝিয়ে দিয়েছেন উপস্থাপনা মেধার কাজ। কাজ শুরুর পর আমিও সেটা বুঝিয়ে দিয়েছি। সে কারণে এখন দেখবেন বাজারে নারী উপস্থাপক খুব একটা পাওয়া যায় না, গ্ল্যামার ও স্ক্রিপটেড শো ছাড়া। এখানে আসলে প্রতিযোগিতার কিছু নেই। এটা মেধা প্রমাণের জায়গা।
দেখুন, আমি আসলে উপস্থাপনা জিনিসটা এনজয় করি। শুধু যে, টেলিভিশনে উপস্থাপনা করি তা কিন্তু না। আমার ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত উপস্থাপনা করে থাকি। এটা আল্লাহ আমাকে যতদিন বাঁচিয়ে রাখবেন ততদিনই করব। বিভিন্ন মানুষের ইন্টারভিউ নিচ্ছি। ভবিষ্যতেও নেব। এর কোনো শেষ নেই। আমি যদি মনে করি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ইন্টার্ভিউও করব, সেটাও হয়ত একদিন পারব। নিজেকে যদি ওই মাপে নেওয়া যায় তবে সেটা তো সম্ভব। তাই না? আর আমার অনুষ্ঠানে তো অতিথি হয়ে সব সেক্টরের বিখ্যাত ব্যক্তিরা এসেছেন। আমি তাদের ইন্টারভিউ করেছি। প্রিয় ব্যক্তিত্বদের অনেকের সঙ্গেও কথা হয়েছে। বাকি যারা আছেন, তাদের যাকে চাব তাকেই পাব। তাই আলাদা করে বলার কিছু নেই।
এখন আর ওভাবে নাটক দেখা হয় না। আসলে দেখার সময় হয়ে ওঠে না। তবে অবসর পেলে মাঝে মাঝে দেখি। তবে খুব কম।
নাটকের অবস্থা এখন ভালো। দর্শকের আগ্রহও আগের চেয়ে বেড়েছে। কারণ, এখন সবার হাতেই মোবাইল ফোন আছে। তারা চাইলেই প্রিয় নাটক দেখে নিতে পারছেন। ফলে বলতে পারি, নাটকের দর্শক আগের চেয়ে বেড়েছে। পাশাপশি নাটকের মানেরও উন্নতি হয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রিতে তো কারও আপন হয়ে লাভ নেই। যাকে দরকার হবে তাকে কাছে নেবেন। যাকে দরকার হবে না ছুড়ে ফেলে দেবেন। আপনার সঙ্গে সবাই এটা করলে, আপনিও সবার সঙ্গে এটা করবেন। তবে আমার অনেক ঘনিষ্ঠজন আছেন এখানে। কিন্তু আমার পরিকল্পনা শুধু আমিই জানি। আমি কীভাবে এগিয়ে যাব— তা আমি ছাড়া কেউ জানে না।
এখনও তো নির্মাণ শুরুই করিনি। হাত পাকাচ্ছি মাত্র। যখন সফল হওয়ার প্রয়োজন মনে করব তখন সফল হব। জায়গাটা বুঝলাম। ব্যাটে-বলে মিললে ঠিকই শুরু করব। আপনাকে আগেই বলেছি, মেধা থাকলে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। আমি ট্রাই করেছি, আমি পারব। কিন্তু কখন জ্বলে উঠব সেটা বলা মুশকিল।
আমি আসলে সবসময় আল্লাহর রহমতে বিশ্বাস রাখি। যতক্ষণ আমার ওপর আল্লাহর রহমত থাকবে, ততক্ষণ আমি পারব। আল্লাহ রহমত উঠিয়ে নিলে আমার ভিতর আর কিছুই থাকবে না।
আগের মতো আর ৩০ দিন অভিনয় করব না। তবে আমি কিছু ভালো কাজ করতে চাই। সেটা উপস্থাপনার পাশাপাশি মনের মতো গল্পে কাজের ইচ্ছা সবসময় থাকবে।
আরআর/আরএসও