images

বিনোদন

জেদ্দায় একই দিনে ক্যাটরিনা ও ইয়াসমিন উন্মাদনা

আলমগীর কবির

০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২২ পিএম

জেদ্দার আবহাওয়াটা এখন বাংলাদেশের মতোই। শীত আর গরমের মাঝামাঝি এই অবস্থা বেশ আরমদায়ক। শুক্রবার জুম্মার নামাজ থাকায় অনুষ্ঠানের মূল কেন্দ্র রিটজ কার্লটনে প্রবেশ করেছি একটু বিলম্বে। জেদ্দার সবচেয়ে বিলাসবহুল এই হোটেলে প্রবেশের তিনটি পথ। আমি যে গেইট দিয়ে ভেতরে এসেছি তার পাশেই বক্স অফিস ইনফরমেশন ডেস্ক। কোনো তারকার সাক্ষাৎকার গ্রহণের ইচ্ছে পোষণ করলেন এই ডেস্ক থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। লম্বা এক লাইনের পেছনে গিয়ে দাড়ালাম। পাশের আরো চার-পাঁচটি লাইনে একই রকম অবস্থা।

এত ভিড়ের কারণ শুক্রবার একই দিনে বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ আর মিসরের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ইয়াসমিন সাবরির সাক্ষাৎকার পর্ব। ইয়াসমিন সাবরি বাংলাদেশিদের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়, তাই আরবদের ওনাকে নিয়ে যে উন্মাদনা তা বোঝাতে একটু কষ্ট হবে। তবে সহজ করে বলা যায়, উপমহাদেশে ঐশ্বরিয়ার গ্লামার নিয়ে যে চর্চা হয়, আরবদের কাছে ইসমিন সাবরি অনেকটা সে রকমই। বিশ্বজুড়ে সেলিব্রিটিদের চেহারা মূল্যায়নকারী আন্তর্জাতিক স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম ‘টিসি ক্যালেন্ডার’ ২০১৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল ওনাকে। সাক্ষাৎকার পর্বের টিকিট ২৪ ঘণ্টা আগে বুক করে রাখা যায়। আমি সর্বশেষ ব্যক্তি হিসাবে ওনার টিকিট সংগ্রহ করলাম। আর ক্যাটরিনা কাইফের টিকিট আগে থেকেই ঢাকা মেইলের নামে বরাদ্ধ করে রেখেছিল উৎসব কর্তৃপক্ষ। দুই টিকিট হাতে নিয়ে রিটজ কার্লটনের সামনে সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্ধ একটি জায়গায় গিয়ে বসলাম।

Catrina

এখান থেকে বাইরে চোখ মেলে তাকালে লোহিত সাগর আর সারি সারি ইয়ট— এ দুইয়ের সম্মিলনে জেদ্দার নায়নাভিরাম সৌন্দর্যে মন ভরে যায়। আগেই ভেবে রেখেছিলাম, বিকাল ৪টার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে রেড সি মলের বক্স সিনেমার এক নম্বর থিয়েটারে যেতে হবে। সেখানে প্রথমে ইয়াসমি সাবরি, পরে ক্যাটরিনা কাইফ আড্ডা দিতে আসবেন।

রিটজ কার্লট থেকে রেড সি মলের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। তবে আয়োজক কর্তৃপক্ষের গাড়ি থাকায় সেখানে পৌঁছাতে খুব একটা সময় লাগেনি। থিয়েটারে সময় মতো পৌঁছে গেলেও ইয়াসমিন সবরি আসলেন কিছুটা বিলম্বে। ছবি থেকে সামনাসামনি বেশি প্রাণবন্ত এবং সুন্দর মনে হয়েছে ওনাকে। ৪৫ মিনিটের আলোচনায় ইয়াসমিন তার শৈল্পিক কর্মজীবন, পূর্ববর্তী কাজ, শিল্পী ও কলাকৌশলীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেছেন। এরমধ্যে বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন মিসরীয় অভিনেতা মোহাম্মদ রমজান ও মোহাম্মদ ইমামের কথা। ইয়াসমিন বলেন, তাদের দুজনের সঙ্গে আমার আলাদা রসায়ন রয়েছে। ক্যামেরার সামনে ও পিছনে তারা আমাকে কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়। তাদের সঙ্গে আমার দুটি সিনেমা ‘আবু’ ও ‘নাসাব’ শিগগিরিই মুক্তি পাবে। আশাকরি এগুলো আমার ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবে সব সময়।

‘মাই ওয়ে’ সিরিজে যুক্ত হওয়াকে নিজের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট মনে করেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, কোনো কিছু নিয়ে তাড়াহুড়ো করা আমার পছন্দ নয়। আমি মনে করি পরিশ্রম করে গেলে প্রাপ্যটা সঠিক সময়ে হাতের নাগালে ধরা দিবে। রেড সি’র আয়োজকদের কাছে তার প্রত্যাশা কি? জানতে চাইলে ইয়াসমিন বলেন, যেসব সিনেমায় উপার্জন বেশি হয়, দর্শক প্রিয়তা বেশি থাকে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিলে উৎসব সবার কাছে অর্থপূর্ণ মনে হবে। যে চলচ্চিত্রে আয় বেশি হয় ব্যক্তিগতভাবে আমি সেসব চলচ্চিত্র করতে আগ্রহী। প্রতি বছর আমি একাধিক বিশ্বমানের কাজে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকি।

ইয়াসমিন সাবরির আড্ডা শেষ হওয়ার পর ২০ মিনিট সময় চেয়ে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বাইরে বের হয়ে দেখি ক্যাটরিনা কাইফের সাক্ষাৎকার পর্বে প্রবেশের লম্বা লাইন। আমি লাইনে অপেক্ষা না করে চলে গেলাম গেইটে। কাকতালিয়ভাবে ওখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি কালো গাড়ি থেকে নামলেন বলিউড অভিনেত্রী। সব্যসাচীর ডিজাইন করা কালো রঙের শাড়ি পরেছেন। নাম ধরে ডাক দেওয়ার পর পর প্রশ্ন করলেন, ইউ কাম ফ্রম ইন্ডিয়া? উত্তরে ‘বাংলাদেশ’ বলার পর হাসি দিয়ে এগোলেন সামনে। এক ভদ্রলোক তার মেয়ের সঙ্গে ছবি তোলার আর্জি জানালে, কাছে নিয়ে ছবির জন্য পোজ দিলেন। বড় তারকা হতে হলে মানবিক গুণ থাকা লাগে। সেটাই যেন বুঝিয়ে দিলেন এই অভিনেত্রী।

আমন্ত্রিত সাংবাদিক হওয়ার কারণে উৎসব কেন্দ্রের সর্বত্রই বিচরণ করা যাচ্ছে। তবে প্রতিবার সেখানে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তার আনুষ্ঠানিকতা কিঞ্চিৎ বিরক্তিকর লাগে। পকেটে যা কিছু থাকে সবই ট্রলিতে রেখে কাঁধের ব্যাগ খুলে সব কাগজপত্র দেখাতে হয় নিরাপত্তা কর্মীদেরকে। অবশ্য সুষ্ঠুভাবে উৎসব আয়োজনে এর বিকল্পও নেই।

শুধু ভবনের ভেতরেই নয়, আশপাশের এলাকাগুলোতে সশস্ত্র হয়ে টহল দিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উৎসবে অংশগ্রহণকারী তারকাদের ঢোকা ও বের হওয়ার নির্ধারিত স্থানের সামনে দিয়ে তাদের একটি দলকে যেতে দেখলাম। এখানেই ইয়াসমিন সাবরিকে আবার সামনে পেয়ে গেলাম। তিনি বিদায় নিচ্ছেন অনুষ্ঠান স্থল থেকে। ওনার সাক্ষাতকারের সময় সামনের দিক থেকে দ্বিতীয় সারিতে থাকায় কিছুটা পরিচিত তখন আমি। তাই যাওয়ার সময় বললেন, সি ইউ নেক্সট টাইম।

Yasmin

ক্যাটরিনার সাক্ষাৎকার পর্বের জন্য এরই মধ্যে সবাই থিয়েটারে প্রবেশ করেছেন। আমি কিছুটা বিলম্বে ভেতরে যাওয়ায় বসতে হলো পেছনের সারির মাঝামাঝি একটি সিটে। ক্যাটরিনা প্রবেশ করতেই দর্শক সারি থেকে একজন বলে উঠলেন ‘আই লাভ ইউ ক্যাটরিনা’। জবাবে তিনি বললেন, আই লাভ ইউ টু। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ‘টাইগার থ্রি’ পর্যন্ত সময়ের গল্পটা শেয়ার করেছেন সবার সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনার পর বিয়ের আনুষ্টানিকতা। সব মিলিয়ে লম্বা বিরতি দিয়ে মুক্তি পেয়েছে নতুন সিনেমা ‘টাইগার থ্রি’। এখন পর্যন্ত প্রত্যাশার চেয়ে ভালো সারা পাচ্ছি। দর্শক সাড়ি থেকে তখন একজন বললেন ‘টাইগার-৪’ হবে সৌদি আরব থেকে। ক্যাটরিনা বলেন, আমি কাজ শুরু করেছিলাম একজন ভালো মডেল হওয়ার লক্ষ্যে। মাধুরী দীক্ষিত, মালাইকা আরোরা ছিলেন আইডল। অভিনেত্রী হতে আমাকে সহযোগিতা করেছেন যশ চোপড়া।

সৌদি আরব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারই প্রথম আমি সৌদি আরবে এসেছি। এখানকার সব কিছু এত সুন্দর যে বারবার এখানে আসতে চাইব। নতুন চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে গল্প বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটা কি ভাবে করা হয় জানতে চাইলে ক্যাটরিনা বলেন, আমার মনে হয় চলচ্চিত্রের গল্প বাছাইয়ের কোনো ফর্মুলা নেই। এটা আসলে সময়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরী হয়ে যায়। একটি বিষয় পর্দায় কিভাবে উপস্থাপন করলে ভালো লাগবে তা বুঝতে ক্যামেরাম্যান থেকে শুরু করে সবার দায়িত্বশীল সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনি যখন ক্যামেরার পেছনে থাকবেন তখন মাথায় থাকতে হবে যে দর্শক কিন্তু বিষয়টা আমার মতো করেই দেখবে। আরেকটা বিষয় হলো ‘স্মার্ট লুকিং’ দর্শক কিন্তু প্রত্যেকটা বিষয় সুন্দরভাবে দেখার প্রত্যাশা করে। এ জন্য ভালো একজন পরিচালক গুরুত্ব পূর্ণ। কারণ পরিচালক যখন একটি বিষয় সহজ করে বুঝবেন তখন অন্যদেরও সহজে বুঝিয়ে দিতে পারবেন।’ তিনি বলেন, আমি যখন ‘নিউইয়র্ক সিনেমার শুটিং শুরু করেছিলাম। তখন সবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল পরিবারের মতো। যে কারণে সিনেমাটি দর্শকও গ্রহণ করেছিলেন সাদরে।