বিনোদন প্রতিবেদক
১১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪৩ পিএম
তাসনুভা শিশির নামটির সঙ্গে মিশে আছে প্রতিবন্ধকতা, ভেঙে পড়া, ঘুরে দাঁড়ানো এবং সবশেষে জয়ের গল্প। ট্রান্সজেন্ডার এ নারী ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন দেশের প্রথম রূপান্তরিত নারী সংবাদ পাঠক হিসেবে। এর বাইরে একজন শিল্পী তিনি। থিয়েটার থেকে চলচ্চিত্র সর্বত্রই বিচরণ তার।
সময় মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়, সে নিজেও জানে না। সংবাদ পাঠকের জীবন বেছে নেওয়ার পর শিশিরও সময়ের পরিক্রমায় ঘুরতে ঘুরতে দেশ ছেড়েছেন। থিতু হয়েছেন যুক্তারাষ্ট্রে। তবে জীবন যাপনের জন্য অন্য কোনো পেশা বেছে নেননি। সাহস ও আত্মবিশ্বাসে ভর করে সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার গিয়েও যাপন করছেন একজন অভিনয় শিল্পীর জীবন। যুক্ত আছেন থিয়েটারের সঙ্গে।
আগামী ১৩ নভেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে মঞ্চস্থ হতে চলেছে ‘পাবলিক অবসিনিটিস’ নামের একটি নাটক। এতে শিশির অভিনয় করবেন সৌ নামের একটি চরিত্রে। নাটকটির গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র সৌ।
এ প্রসঙ্গে শিশির বলেন, ‘‘ওয়াশিংটন ডিসির মতো জয়গায় ‘পাবলিক অবসিনিটিস’ মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। এটি আমার জন্য বেশ ভালো লাগার। আমি এতে সৌ চরিত্রে রয়েছি। চরিত্রটিতে একজন নন বাইনারিকে নারীতে রূপান্তরিত হওয়ার আগের স্তরগুলোতে চলার পথে যে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয় তা মোটা দাগে উঠে এসেছে। আপাতত রিহার্সেল চলছে নাটকের।’’
শিশির আরও বলেন, ‘আর একটি কথা হচ্ছে, আমি একজন শিল্পী। শিল্পকে ঘিরেই আমার বেঁচে থাকা। যুক্তারাষ্ট্রে এসেও আমি একজন শিল্পী হিসেবে জীবন যাপন করছি। আমার জন্য আনন্দের।’
এ নাটকটির রচিয়তা শায়খ মিশা চৌধুরী। নির্দেশকও তিনি। এ প্রসঙ্গে মিশা চৌধুরী বলেন, ‘নাটকটিতে দেখা যাবে, ছোটন একজন বাঙালি আমেরিকান। সে পিএইচডির ছাত্র। তার আফ্রিকান আমেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার বয়ফ্রেন্ড রাহিমকে নিয়ে কলকাতায় ফেরে। দেয়ালে টাঙানো ওর দাদুর ছবির দৃষ্টি ওকে বিবৃত করে। বাংলা ও ইংরেজির ভাষান্তর সহজ হয়ে আসে ছোটনের কাছে। কলকাতার কুইয়ার বাসিন্দা আর রাহিমের জগতের মধ্যে ছোটন হয় অনুবাদক। কিন্তু দাদুর পুরোনো ক্যামেরার লেন্স দিয়ে রাহিম কিছু নতুন জিনিস দেখে যা ছোটন দেখতে পায় না।’
এরপর তিনি বলেন, ‘নাটকটি বলতে পারেন আমার নিজের জীবন থেকে নেওয়া। আমি খুব ছোট বেলায় দেশ থেকে আমেরিকায় চলে এসেছি, কিন্তু নিজের মাতৃভাষাকে বহু কষ্টে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আমেরিকায় বড় হয়েছি। আমার মা বাবার কাছে প্রকাশ করেছি যে আমি সমকামী। আমার পরিবার চিরকাল আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। সেদিক দিয়ে আমি খুবই ভাগ্যবান। বড় হয়ে দেশে ফিরে বাঙালি কুইয়ার মানুষদের সাথে আলাপ করেছি, বন্ধুত্ব করেছি। অনেকে ধরে নেয় যে, যেহেতু আমি সমকামী, আমেরিকায় আমার জীবনটা বেশি সহজ। এক দিক দিয়ে সেটা ঠিক। কিন্তু আরেক দিক দিয়ে, দেশের পরিবেশে যেন আমি নিজেকে আরও সহজে খুঁজে পাই।’
এ সময় তাসনুভাকে নিয়ে মিশা বলেন, ‘তাসনুভা একটি অনুপ্রেরণার নাম। তার সাবলীল অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
নাটকটিতে তাসনুভা শিশির ছাড়াও অভিনয় করেছেন আবরার হক, জাকিম ডেন্ট, গার্গী মুখার্জি, দেবাশীষ রয় চৌধুরী, নাফিস ও গোলাম সরয়ার হারুন। ওয়াশিংটন ডিসিতে ওলি ম্যামাত থিয়েটারে ১৩ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাটকটি চলবে সেখানে। এর আগেও নাটকটি ষাট বারের বেশি প্রদর্শিত হয়েছে।