images

বিনোদন

নাট্যকারদের মূল্যায়ন হচ্ছে না: বিপাশা হায়াত

রাফিউজ্জামান রাফি

১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৪:০১ পিএম

শিল্পাঙ্গনে বিপাশা হায়াত যেন রঙিন প্রজাপতি। অভিনয়, ছবি আঁকা কিংবা লেখালেখি— শিল্পের সকল শাখায় উড়ে বেড়ান। দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছেন তিনি। তাই অভিনয়ে দেখা যায় না তাকে। এখন তার সময় কাটে ছবি এঁকে। নিজের আঁকা সেইসব ছবির একক প্রদর্শনীর জন্য সম্প্রতি ঢাকায় এসেছেন এ অভিনেত্রী। প্রদর্শনী ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটছে তার। ব্যস্ততার মাঝে বিপাশা কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি তার অভিনয় ক্যারিয়ার, চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা বিষয়ে মনের আগল খুলেছেন। 

আড়াই বছর পর দেশে ফিরলেন। বিশেষ কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ল?

কিছু পরিবর্তন তো হবেই। পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে বিশেষ পরিবর্তনের কথা বলতে হলে বলব, আমি গাড়ি চালাই দীর্ঘদিন হলো। সেই একুশ বছর বয়স থেকে। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেও নিজে ড্রাইভ করি। আড়াই বছর পর দেশে এসেও গাড়ি চালাচ্ছি। এবার একটা জিনিস আমার বারবার মনে হচ্ছে, কেন আমরা স্টপ সাইন ব্যবহার করছি না? কেন আমরা বিভিন্ন সড়কে গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণ করছি না? প্রতিটি সড়কের বিভিন্ন স্থানের জন্য স্টপ সাইন ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি কোন রাস্তায় গাড়ির গতিসীমা কত হবে— তাও নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের দেশের চৌরাস্তাগুলোর ক্ষেত্রে তো অবশ্যই। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন নিয়মের ভেতর গাড়ি চালিয়ে আমি অভ্যস্ত হয়েছি। আগে দেশে এভাবে গাড়ি চালানো স্বাভাবিক মনে হত। তবে দীর্ঘদিন নিয়মের মধ্যে থেকে এখন এসব অস্বাভাবিক লাগছে।  স্টপ সাইন ও স্পিড লিমিট স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট আমি আকুল আবেদন জানাই। এটা তেমন কঠিন কিছু না। এজন্য শুধু একটি নির্দেশনাই যথেষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আপনি। দেশ ছেড়ে বিদেশ থিতু হওয়ার কারণ?

আসলে এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। সব ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ হওয়া জরুরি মনে করি না। তবে আমি যেটা বলব, মানুষ সময়ের ওপর নির্ভরশীল। সময়ই নির্ধারণ করে দেয় ভবিষ্যতে কে কোথায় থাকবেন। আমার ক্ষেত্রেও সেরকম ধরে নিতে পারেন।

Bipasha Hayat

বাংলাদেশের প্রথম প্যাকেজ নাটক ‘প্রাচীর পেরিয়ে’র অভিনেত্রী ছিলেন। শ্যুটিংয়ের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে?

আমি আসলে বর্তমানে বিশ্বাসী মানুষ। ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে যাই। পেছনের দিনগুলো সামনে এলে সেই সময়টাকে সম্মান করি। সেই মানুষগুলোকে সম্মান করি। কিন্তু অতীতের মুহূর্তগুলো আঁকড়ে ধরে বসে থাকতে চাই না।

আপনার সময়ের সঙ্গে এখনকার নাটকের কোনো পার্থক্য দেখেন?

ত্রিশ বছর আগের নাটকের সঙ্গে এখনকার নাটকের পার্থক্য তো থাকবেই। থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আমি যেটা বলব, নব্বইয়ের দশকে যারা নাট্যকার ছিলেন তাদের আমরা ঠিক সম্মানটা করতে পারছি না। তাদের থেকে গল্প প্রত্যাশা করছি না। এটা খুব দুঃখজনক। তাদের আবার নতুন করে মূল্যায়ন করা হোক। ওনাদের নিকট নাটকের স্ক্রিপ্ট চাওয়া হোক। দেখবেন যে পুরো দৃশ্যটাই বদলে যাবে।

খুব বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি আপনি। তবে যে কয়েকটা করেছেন, তার সবগুলোই সমাদৃত হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতেন?

আসলে সিনেমা কখনও আমাকে ওভাবে টানেনি। বিশেষ করে এর মেকিং সিস্টেমটা। তবে শুধু সিনেমা না। নাটকসহ আমি সমাজের যেখানেই যুক্ত হই সেখানেই দেখতে চাই, মেসেজটা আসলে কী? সেজন্যই বললাম স্ক্রিপ্টের কথা। কারণ গল্প ভালো না হলে সোফিয়া লরেন এসে অভিনয় করলেও ভালো লাগবে না। সেজন্যই সিনেমা বা নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে আমি সবসময় গল্পটা খেয়াল করতাম।

Bipasha Hayat

‘প্রস্তরকাল’ শিরোনামের একক চিত্রপ্রদর্শনীর জন্য এবার আপনার দেশে আসা। এই নামের তাৎপর্য কী?

ইতোমধ্যে আমরা একটি কঠিন সময় পার করেছি। সেই সময়টা ছিল করোনাকাল। পৃথিবীতে একযোগে কেমন যেন একটা স্থবিরতা ভর করেছিল। মনে হয়েছিল সময় যেন পাথর হয়ে গেছে। আমি নিজেও সেসময় আট মাস একা ছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে। আমার সঙ্গে কেউ ছিল না। ওই পাথর বা স্থবির সময়ের কথা ভেবেই নাম দিয়েছি ‘স্টোন টাইম’ বা ‘প্রস্তরকাল’।

এর আগে এসিড আক্রান্ত নারীদের সাহায্যার্থে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীতে নিজের আঁকা ছবি দান করেছিলেন। এই সময়ে এসে এসিড আক্রান্তের হার অনেক কমেছে। নিজেকে কি সার্থক মনে হচ্ছে?

বিষয়টা আসলে এমন নয়। হ্যাঁ, এসিড আক্রান্ত নারীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীতে আমার ছবিগুলো দিয়েছিলাম। কিন্তু এটাকে দান বলব না। সেই আয়োজনটা একটি মহৎ কাজ ছিল। আমি তাতে শামিল হয়েছি মাত্র। কিন্তু তাকে দান বলার ‘ধৃষ্টতা’ দেখাব না। আর এর সঙ্গে সার্থকতার কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমি মনি করি না।

ছবি আঁকার জন্য কোন সময়টা বেছে নেন?

আমি রাতেও ছবি আঁকি, দিনেও আঁকি। আগে রাতে অনেক বেশি আঁকতাম। তখন বাচ্চারা ছোট ছিল। তাদের পেছনে সময় দিতে হত। এখন বাচ্চারা বড় হয়েছে। তাদের ব্যস্ততার জায়গা বেড়ে গেছে। সেকারণে এখন রাতের পাশাপাশি দিনেও ছবি আঁকা হয়।  

Bipasha Hayat

আবার অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতকে আমরা কবে পাব?

ভালো কাজ পেলেই করব। সে অভিনয় হোক বা ছবি আঁকা। ভালো গল্প পেলে অভিনয়ের ইচ্ছা আছে। আমি জানি না, কবে মনের মতো ভালো লাগার গল্প পাব! তবে অপেক্ষায় আছি।

তাহলে চিত্রকর্ম নিয়ে কি বৃহৎ পরিসরে কাজের পরিকল্পনা আছে?

আসলে পরিকল্পনা করে কিছু হয় না। কারণ পরমুহূর্তে কী হবে আমরা কেউ জানি না। ভবিষ্যতে আমার সিদ্ধান্তও বদলাতে পারে। আর ছবি আঁকা আসলে সাধনার বিষয়। আমার বাবাকে দেখুন, তিনি যে কাজটি করছেন সেটাও কিন্তু সাধনার বিষয়। আমিও তেমন মনে করি। আমি আমার কাজটাকে আরাধনার জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।

আরআর/আরএসও