বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
২৮ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৩ পিএম
বিকেল হতেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ও ভবনের নিচে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বসে পড়েন তারা। উদ্দেশ্য একটাই- সবাই মিলে একসাথে ইফতার করা। ইফতারের আইটেম সাজানো-গোছানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। কেউ ফল কাটাকাটি করছেন, কেউ শরবত বানানোর কাজে লেগে পড়েন; কেউ ছোলা-মুড়ি মাখানোর কাজ করছেন। এমনই ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে।
ইফতার আয়োজন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন বেশ সরব। পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূরে পড়াশোনার জন্য অবস্থান করতে হচ্ছে নিজ ক্যাম্পাসের আঙ্গিনায়। পরিবারের সাথে থাকলে মায়ের হাতের বাহারি আয়োজনে হয়তো জমে উঠতো ইফতার। রমজানে ক্লাস-পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা মেসগুলোতে। তাই রমজানে ইফতার করতে হচ্ছে বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাস আঙ্গিনাতেই। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসের ইফতারে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন সবাই। নিয়মিত এই কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো।

ক্যাম্পাসে রমজানের ইফতার যেন ভ্রাতৃত্বের প্রাণবন্ত বন্ধন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিল্ডিং, শহীদ মিনার, ক্যাফেটেরিয়া, মসজিদ, কাঁঠাল তলা, শান্ত চত্বর, বিজ্ঞান ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসের কোণে কোণে সবাই দলবেঁধে সেরে নিচ্ছেন নিজেদের ইফতার। বাইরে থেকে ইফতারের যাবতীয় সামগ্রী ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, শরবত, তরমুজ, আনারস, পেয়ারা, কমলা, আঙ্গুর, মাল্টাসহ বিভিন্ন আইটেমের আয়োজন করে সবাই একসাথে বসে সেরে নিচ্ছেন প্রতিদিনকার ইফতার।
সকলের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করছে ইফতারের। সেখানে তাদের সংগঠনের সদস্যসহ সকলকে নিয়ে আয়োজন করছে এক প্রাণবন্ত ইফতারের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনে সাংবাদিক সমিতি, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, সাংস্কৃতিক সংসদ, আবৃত্তি সংসদসহ যেসব অঙ্গসংগঠন আছে তারা তাদের প্রতিদিনকার ইফতার সেরে নিচ্ছেন তাদের কার্যালয়েই।
ইফতারগুলোতে যে শুধু মুসলিমরা অংশগ্রহণ করছেন তা নয়। অনেক হিন্দু শিক্ষার্থীও অংশগ্রহণ করছেন ইফতারে। আর বন্ধু বড় ভাই সবাই তাদের গ্রহণ করে নিচ্ছেন স্বাচ্ছন্দে, যা রূপ নিচ্ছে এক সম্প্রীতির বন্ধনে।
ইফতারে অংশগ্রহণ করা ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মুইন শেখ ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রতি রোজায় বাসায় থাকা হয়, এবার পরীক্ষার কারণে বাড়িতে যাওয়া হয়নি। তারপরও ক্যাম্পাসে প্রতিদিনের ইফতার করছি, এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। বন্ধু বড় ভাই ছোট ভাই সবাই মিলে ইফতার করছি, যা আমাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও মজবুত করছে। পাশাপাশি পরিবার থেকে দূরে থাকার আক্ষেপ কিছুটা হলেও দূর করছে।

রাজন নামে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের যেহেতু হল নেই আমরা সবাই মেসেই থাকি। সবার একসাথে থাকা হয়ে উঠে না। এই প্রথম পরিবারের বাইরে ইফতার। তাই ক্যাম্পাসে ইফতার করতে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। পরিবারের কাছ থেকে বাইরে ক্যাম্পাসের বন্ধু, সিনিয়র সবাইকে পরিবারই মনে হয়।
সজীব নামে এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের হল নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ৫০ টাকায় যে মানের খাবার দেওয়া হচ্ছে তা আসলে রুচিসম্মত নয়। ৫০ টাকায় আরও ভালো ইফতারি পাওয়া যায়। এ খাবারের দাম আরও কম। প্রশাসনের খাবারের জন্য ভর্তুকির কোনো উদ্যোগ দেখি না।
প্রসঙ্গত, ক্যাফেটেরিয়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে ৫০ টাকায় আট আইটেমের ইফতার। সেখানেও অনেক শিক্ষার্থীকে ইফতার করতে দেখা যায়।
প্রতিনিধি/জেবি