images

শিক্ষা

ঢাবি শিক্ষার্থীদের রমজান কাটছে যেভাবে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

২৬ মার্চ ২০২৩, ০৪:৩৪ পিএম

বছর ঘুরে আবারও এসেছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। পবিত্র মাসটি এলেই দেশজুড়ে অন্যরকম এক আবহের সৃষ্টি হয়। রমজান মাসজুড়ে থাকে নানা আয়োজন। ব্যতিক্রম নয় দেশের সেরা বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। রমজান মাস আসতেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদালয়েও বিরাজ করছে ধর্মীয় আবহ।

রমজান মাসের কারণে কমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের শিডিউলে আনা হয়েছে পরিবর্তন। অফিস ঘণ্টাতেও পরিবর্তন এসেছে। প্রকাশ করা হয় নতুন সিডিউল। রোজা রেখেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন।

পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পড়ার পরই ক্যাম্পাসে ধারণ করে এক নতুন রূপ। দুপুরের পর থেকেই সব হলের ভেতরে বাইরে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে দোকানগুলোতে রাখা হয় ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, বুন্দিয়া, বেগুনী ও চপ। এছাড়া অনেকে এসব খাবারের পাশাপাশি কলা, আনারস, তরমুজ, বেলসহ নানান মৌসুমি ফল রাখেন ইফতার আয়োজনে।

যাদের সামর্থ বেশি তাদের অনেকে ছুটে যান পুরান ঢাকার চকবাজারে। বেলা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়তেই ইফতারের পসরা নিয়ে সাজানো দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বিকেলের দিকে উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়। খাবার কিনে কেউ ছুটে যায় গণরুমে। কেউ ছুটে যায় সবুজ চত্বর, মল চত্বরে সহপাঠীদের সঙ্গে ইফতার করতে।

রমজান আসার পর বিকেল থেকে মল চত্বর, সবুজ চত্বর, টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া, ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, আদ্রে মার্লো বাগান, বটতলাসহ ক্যাম্পাসের সকল অডিটোরিয়াম দখলে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, জেলাভিত্তিক সংগঠনঠনের ব্যানারেও অনেকে ইফতার আয়োজন করে। সিনিয়র, জুনিয়রের এক হয়ে গোল হয়ে বসে ইফতার আয়োজনের অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের অবতারণা হয় ঢাবি ক্যাম্পাসে।

বন্ধু ও সহপাঠীদের সঙ্গে ইফতার করতে আনন্দ থাকালেও অনেকের মাঝে কষ্টও আছে। পরিবারের সঙ্গে ইফতার বা সাহরিতে অংশ নিতে না পারায় অনেকে কষ্টের কথা জানান।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই পরিবার ছাড়া প্রথম ইফতার ও সাহরি করছেন। এজন্য তারা কষ্টের কথা জানান। অনেক শিক্ষার্থী রোজার মধ্যে ক্লাস থাকায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

কথা হয় সদ্য স্নাতক শেষ করা ফজলে আজমের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করা ফজল স্বপ্ন দেখছেন দেশের প্রশাসনিক পর্যায়ে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে।

রমজানে কেমন কাটছে দিন জানতে চাইলে অস্বস্তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে তত যেন হতাশা বাড়ছে। কোনো উৎসব, আনুষ্ঠানিকতা বা সময় অন্য সবার কাছে যেমন হয়ে ধরা দেয়, চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সেগুলোর প্রতি তেমন বিশেষ কোনো ভাবাবেগ থাকে না। কারণ তাদের অন্য সকল আনন্দ, সুখ, অভিমান সব অনুভূতিবোধ দুর্বল হয়ে পড়ে। সকল অনুভূতি শক্তি আটকে থাকে ‘কবে একটা জব কবে?।

du-2

দ্বিতীয় রোজার দিন ইফতারি শেষে দেখা হয় প্রথম বর্ষের ছাত্র তারেকের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হলে উঠেই তার জায়গা হয় গণরুমে। তবে তাতে কোনো আক্ষেপ নেই তার। হলে ওঠার দুই মাস হলেও নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়নি তার। তবে এই প্রথম পরিবার ছাড়া ইফতার করেছেন। তাইতো ইফতার শেষ করেই হল মাঠে বসে মায়ের কাছে পুরো দিনের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করছেন।

ক্যাম্পাসে রমজান কেমন কাটছে জানতে চাইলে তারেক বলেন, পরিবার ছাড়া প্রথম রমজান বেশ অস্থিরতা এবং একাকিত্বে কেটেছে। কী খাবে, কোথায় খাবে, কার সঙ্গে খাবে এমন চিন্তা কাজ করছিল।

তিনি আরও বলেন, নতুন ক্লাস রুটিন অনুযায়ী সকাল দশটায় ক্লাস হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি আছে। সেহরি খাওয়ার পর ঘুমানোর অনেকটা সময় পাওয়া যায়। কিন্তু ইফতারের পর শরীরে ক্লান্তি চলে আসায় পড়ালেখায় কিছু হলেও বিঘ্ন ঘটে। এরপর এশা-তারাবির নামাজ। তারপরেও রোজা রাখতে পেরে ভালোই লাগছে।

তার কিছুদূরেই অট্টোহাসিতে মেতেছেন সিয়াম, মিনহাজ, মাহদি, নাহিদ, জোবায়েরসহ কয়েকজন বন্ধু। গোল হয়ে বসে তারা বিভিন্ন আলাপ করছেন আর অট্টহাসি দিচ্ছেন।

ক্যাম্পাসে রমজান কেমন কাটছে জানতে চাইলে কিছুটা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলেন তারা। প্রথমে খাবারের দামের চড়া মূল্যের অভিযোগ দিয়ে শুরু করেন।

তারা বলেন, রমজান মাস এলেই হল ক্যান্টিনে খাবারের দাম বাড়ে অস্বাভাবিক হারে। রাতে সাহরি খেতে দেখি ৪০ টাকার মাছের দাম বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা। গরুর দাম ৯০ টাকা; ৫ টাকার সবজি কোথাও ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক দিনে যেখানে ১০০ টাকা খরচ হয় রমজানে সেখানে শুধু সাহরিতেই গুণতে হচ্ছে ৭০-৯০ টাকা।

মাহদি বলেন, খাবারের এমন উচ্চমূল্যে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে কমদামি খাবারের প্রতি ঝুঁকছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা বাড়ছে। খাবারের পুষ্টিমান অক্ষুণ্ণ রেখে স্বল্পমূল্যে শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।

প্রতিনিধি/এমএইচএম/এমআর