পিয়াস সরকার
১৮ মার্চ ২০২৩, ১০:৩৯ এএম
কতভাবেই না দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন তারা। কখনো মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, স্মারক লিপি প্রাদান এমনকি রাস্তাতেও অবস্থান নিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু কোনো লাভই যে হচ্ছে না সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষকের। দীর্ঘ দিন ধরেই এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন বেসরকারি কলেজসমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকগণ। তারা বলছেন, দীর্ঘ ৩০ বছর বঞ্চনায় পর্যবসিত তারা।
এই শিক্ষকরা বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও পাচ্ছেন না এমপিওভুক্তি। শিক্ষকরা বলছেন, বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সরকার শিক্ষার জন্য অনেক পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু সামান্য ৫ হাজার ৫০০ শিক্ষকের এমপিওভুক্তির দাবি মেনে নিচ্ছে না। কিন্তু আমরা বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত।
প্রায় ১২ বছর ধরে গাইবান্ধার একটি কলেজে শিক্ষকতা করছেন আলেয়া রহমান। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা প্রশ্ন করে, মা তুমি কেন কলেজে যাও। যে কয় টাকা বেতন দেয় এই টাকার জন্য কি দরকার যাওয়ার? আমি উত্তর দিতে পারি না। চাকরির ১২ বছর হলো শুধু আশায় আছি যদি সরকারি বেতন পাই।
দিনাজপুরের এক শিক্ষক বলেন, করোনাকালে কলেজ বন্ধ ছিল। কোনো বেতন পাই নাই। কয়েকটা টিউশনি ছিল সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। আমি শিক্ষক হয়ে অটোরিকশা চালিয়েছি। আমিতো কোনো কাজ পারি না। ধার দেনা করে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে ছিলাম। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের অপরাধটা কোথায়? আমরা কেন বেতন পাব না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নানা ধরনের অহিংস আন্দোলন করার পরও আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। আমরা এনটিআরসিএ থেকে সনদধারী। একই প্রতিষ্ঠানে কেউ সরকারি বেতন ভাতা পাবেন আবার একই যোগ্যতা নিয়ে আরেক শিক্ষক অনাহারে দিন কাটাবেন এটা মেনে নেওয়া যায় না।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা আগে যে স্বল্প বেতন পেতাম সেটাও বন্ধ হয়েছে। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীও কমে গেছে। যার ফলে আমরা সেই বেতনটুকুও পাচ্ছি না। এই শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা না হলে তারা কোথায় যাবেন? আমরা সামান্য ৫ হাজার ৫০০ শিক্ষক। আমাদের এমপিওভুক্ত করতে বছরে মাত্র ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয় করলেই বেঁচে থাকার পথ হবে।
দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেও সুফল মেলেনি এই শিক্ষকদের। অনেকেই কোনো সুবিধা না পেয়ে গেছেন অবসরে। অনেকের হয়েছে মৃত্যুও। এবার দাবি আদায়ে একাট্টা হয়েছেন তারা। ১২ মার্চ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রয়োজনে আমরণ অনশনের ডাক দেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা আন্দোলনের বিষয়ে অবগত আছি। আমাদেরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। আমরা এই দাবির বিষয়ে আলোচনা করব। আমরা চাইনা শিক্ষকরা পথে কষ্ট পাক।
পিএস/এমএইচএম