পিয়াস সরকার
১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৭ এএম
প্রতি বছরের জানুয়ারি মাস এলেই আলোচনায় আসে নতুন বই, খাতা, পোশাক, জুতা, ব্যাগ। সরকারি-বেসরকারি স্কুলশিক্ষার্থীদের নতুন পোশাক বানানোর ধুম পড়ে যায়। স্কুলগুলোতে পোশাক বাধ্যতামূলক হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা ছুটতে থাকেন দর্জিপাড়ায়। কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় দর্জিদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না। দর্জির দোকানে সেলাই মেশিনের শব্দই বলে দেয় তাদের মহাব্যস্ততার কথা। প্রয়োজনীয় মাপ নিয়ে কারিগররা দিনরাত বিরতিহীন কাজ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পোশাক দিয়ে দেন।
কিন্তু এবারের চিত্রটা কিছুটা হলেও ভিন্ন। অন্যান্যবার বছরের এই সময়ে দর্জিদের ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেলেও এবার সেই তুলনায় ভিড় কিছুটা হলেও কম। বানানোর পরিবর্তে অভিভাবকরা সন্তানদের জন্য রেডিমেট পোশাক কেনায় বেশি আগ্রহী হওয়ায় দর্জিপাড়ায় ব্যস্ততা কম দেখা গেছে।
জানা যায়, অনেকদিন ধরেই নিত্যেপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে বই, খাতা ও পোশাকের দাম। খরচের লাগাম টানতে নানা হিসাব-নিকাশ করছেন অভিভাবকরা। তাইতো বানানোর চেয়ে স্কুলগামী সন্তানদের রেডিমেট পোশাকে নজর তাদের বেশি।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি টেইলার্স ঘুরে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় ফুল সেট পোশাকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি লাগছে এবার। ফুলসেট পোশাক বানাতে এবার খরচ হচ্ছে ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর রেডিমেড পোশাক কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা নিউমার্কেট ও ফার্মগেটের টেইলার্সগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুল শিক্ষার্থীদের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) বাবার সঙ্গে সাদা শার্ট ও নেভি ব্লু প্যান্ট কিনতে এসেছে ওয়ালি ফয়সাল। ৩০০ টাকায় শার্ট ও ৪০০ টাকায় ওয়ালিকে প্যান্ট কিনে দেয় তার বাবা রফিকুল।
সন্তানকে তৈরি পোশাক কিনে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে রফিকুল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আগেতো টেইলার্সে পোশাক বানিয়ে দিতাম। কিন্তু এবার টেইলার্সে ১২০০ টাকা চায়। তাই ভাবলাম রেডিমেড কিনি। এখানে ৭০০ টাকায় হয়ে গেল। ফিটিংও ভালোই হয়েছে।’
নিউ মার্কেটের ‘নিউ ঢাকা টেইলার্সে’ তৈরি পোশাক বিক্রি ও বানানোও হয়। দোকানের ম্যানেজার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘কাপড়ের দাম বেশি। মোটামুটি স্ট্যান্ডার্ড মানের ড্রেস বানাতে ছেলেদের সব মিলিয়ে খরচ রাখা হয় ১২০০ টাকা। সাইজ বুঝে কিছু কম বেশি হয়। আর মেয়েদের পোশাকে খরচ হয় ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা।’
এবার তৈরি পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেদের রেডিমেড পোশাকে লাগছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর মেয়েদের ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।’
নিউ ঢাকা টেইলার্সের ম্যানেজার আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকটা স্কুলের পোশাক বানিয়ে রাখি। কয়েকটা সাইজের। অভিভাবকরা আসেন কেনেন। তবে এবারই মানুষ ড্রেস বানাচ্ছে কম। তৈরি পোশাক কিনতে বেশি ঝুঁকছেন তারা’।
ফার্মগেট এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল থাকায় ওই এলাকায় পোশাক বানানোর চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এবারও চাহিদা থাকালেও তুলনামূলক কম।
ফেমাস স্টাইল টেইলার্স এন্ড ফেব্রিক্সে মালিহা আমিন নামে এক শিক্ষার্থী বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছেন। সোমবার পোশাক দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি প্রস্তুত হয়নি। তার মা আঞ্জুমান আরা বলেন, এবার মেয়ের ড্রেস বানাতে ১৬০০ টাকা লাগল। অনেকেই রেডিমেড কিনছে কিন্তু ওর সাইজে না পাওয়াতে বানাতে দিয়েছি।
পাশের দোকান এশিয়ান টেইলার্সে দেখা যায় মেয়েদের পোশাক বানানোর পাশাপাশি তৈরি পোশাকও আছে। মেয়েদের পোশাকের জন্য রাখা হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। দোকানদার বলেন, এখানে মূলত হলিক্রস ও তেজগাঁও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পোশাক বেশি পাওয়া যায়। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন সাইজের পোশাক বানিয়ে রাখি। একসঙ্গে বানানোয় আমাদের খরচ কম হয়। তবে রাজধানীর অনেক স্কুল আছে যেগুলোতে ভর্তির সময় স্কুলের পোশাকের দাম রাখা হয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রেইনবো কিন্ডারগার্টেন্সে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছে পোশাকের জন্য রাখা হয় ১৮০০ টাকা। নির্ধারিত টেইলার্সে গিয়ে মাপ দিয়ে আসেন অভিভাবকরা। এরপর সেখান থেকে সংগ্রহ করতে হয় পোশাক।
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে অন্যায় দাবি করে ইমরুল আহমেদ নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘পোশাকের জন্য বাড়তি টাকা রাখছে তারা। যেখানে ১০০০-১২০০ টাকায় ড্রেস বানানো যায়। এই প্রতিষ্ঠানের মতো রাজধানীর অনেক প্রতিষ্ঠানই এভাবে অর্থ রাখে অভিভাবকদের কাছে। এনিয়ে অভিভাবকদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের।’
পিএস/এমআর