জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৪:২৪ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী লিমন কুমার রয়ের বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল আজ। এজন্য একজন রুমমেটকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সাতসকালে হলের দশ তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা যান ঢাবির আইইআর (ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ) বিভাগের শিক্ষার্থী লিমন। তার এমন মৃত্যুতে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন তার রুমমেট থেকে শুরু করে সহপাঠীরাও। লিমন কীভাবে ছাদ থেকে পড়ে গেলেন তার হিসাব মেলাতে পারছেন না তার বন্ধু ও পরিচিতজনরা।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ছাদ থেকে পড়ে মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।
লিমটের সহপাঠী ও রুমমেট জানান, ব্যক্তিজীবনে বেশ চঞ্চল ছিলেন লিমন। কিছুদিন ধরে পড়াশোনা নিয়ে কিছুই সমস্যার মধ্যে আছেন বলে রুমমেটকে জানিয়েছিলেন তিনি।
লিমন কুমারের একজন রুমমেট বলেন, ‘আমরা রুমে আটজন থাকি। লিমন খুব চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ছিল। ফেসবুকে তার ফানি ভিডিও আছে। লিমন রুমে খুব বেশি থাকত না। সে প্রায় সময় রিডিং রুমেই থাকত। রাতে সে রুমে পড়ছিল। বিভিন্ন কথার ফাঁকে সে বলেছে, কী যে করি পড়া মনে থাকছে না। এই দিকে পড়লে এই দিকে ভুলে যাচ্ছি।’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় আমি ঘুম থেকে উঠি। ৯টা থেকে ক্লাস থাকায় আমি ফ্রেশ হচ্ছিলাম। এ সময় লিমন বেডে শুয়ে ফোন চাপছিল। তাকে জিজ্ঞেস করেছি, কী রে পরীক্ষা না তোর? পরীক্ষা দিতে যাবি না? সে বলেছে যাব। কিছু মনে থাকছে না। এরপর আমি আচ্ছা বলে রুম থেকে বের হয়ে যাই। তখন রুমে লিমন ছাড়াও আর দুইজন ঘুমিয়ে ছিল। পরে ক্লাসে এসে শুনি সে মারা গেছে।’
জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ বলেন, ‘লাস্ট কয়েকদিন নাকি সে ডিপার্টমেন্ট নিয়ে একটু চাপে ছিল। এরপর সকাল নয়টায় সে ছাদে উঠেছে। এরপর এই ঘটনা।
ছাদ থেকে নিচে পড়ে আহত লিমন যখন কাতরাচ্ছিলেন তখন বিষয়টি নজরে আসে কয়েকজনের। তারা দ্রুত লিমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
হলের অ্যাথলেটিক্স বেয়ারা মানিক কুমার দাস বলেন, ‘আমরা হলের কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের জার্মানির পতাকা লাগানোর জন্য অন্য একটি ভবনের নিচে কাজ করছিলাম। এ সময় একটা ছেলে দৌড়ে এসে আমাকে বলে, মানিকদা একটা ছেলে পড়ে গেছে। আমি রিকশার জন্য যাচ্ছি। আপনি একটু দেখেন। এরপর আমি দৌড়াইয়ে সেখানে গেছি। অনেক ছাত্র দাঁড়িয়ে ছিল। কেউ হয়তো ভয়ে উঠাচ্ছে না। এরপর আমি এবং আরেকজন কর্মচারী তাকে তুলে রিকশা করে মেডিকেলে নিয়ে যাই।’
মানিক কুমার আরও বলেন, ‘আমি যখন তাকে তুলছি তখন সে জীবিত ছিল। চোখ একবার বন্ধ করছিল আবার খুলছিল। তখন তার সারা গায়ে রক্ত। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
বিইউ/এমআর