images

শিক্ষা

এমপিও বাতিল হচ্ছে প্রশ্নফাঁসে জড়িত শিক্ষকদের

সেলিম আহমেদ

০৩ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৪৮ পিএম

করোনা ও বন্যার কারণে নির্ধারিত সময় থেকে প্রায় সাড়ে আট মাস পর শুরু হয়েছে এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। তবে প্রশ্নফাঁস, প্রশ্ন বিতরণে ভুল করাসহ নানা অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আর এ কারণে প্রশ্নফাঁসে জড়িত শিক্ষকদের এমপিও বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে এবার যেসব পরীক্ষাকেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, আগামী বছর থেকে সেই কেন্দ্রগুলো ব্যবহার না করে নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে কেন্দ্র স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা সচিব মো. আবু বক্কর সিদ্দীক। ওই সভার শুরুতেই তিনি প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী শিক্ষকগণ তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় পরীক্ষা গ্রহণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ওই সভায় উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তারাও জানান, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এবং পরিচালনায় দায়িত্ব-কর্তব্যে যারা অবহেলা করছেন, তাদের এমপির স্থগিত থাকবে।

Examসভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে দুই সেটে পরীক্ষা গ্রহণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা/শিক্ষক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষক/কর্মচারীদের এমপিও স্থগিত করতে হবে।

এতে আরও সিদ্ধান্ত হয়, যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন নড়াইলের কালিয়া প্যারী শংকর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও বাঐসোনা কামশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব এবং ট্যাগ অফিসারকে ভবিষ্যতে পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত দায়িত্ব প্রদান না করাসহ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও যে সমস্ত কেন্দ্রে অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে, সে কেন্দ্রগুলো পরবর্তী বছরে কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার না করে নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে কেন্দ্র স্থানান্তর করতে হবে।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে- দেশে ২০১৯ সালের আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। তার আগের বছরও এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যারমধ্যে ছিল পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে প্রশ্নপত্রের ‘সেট’ (যে প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে) জানানো, দায়িত্বপ্রাপ্তদের মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, ইন্টারনেটের গতি কমানো ইত্যাদি।

Examঅন্যদিকে, এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছিল- এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নেই। তবে দিনাজপুর বোর্ডের ঘটনায় দেখা যায়- পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেই প্রশ্নফাঁস হয়েছে।

এ বিষয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, কাউকে না কাউকে দিয়ে তো কাজটি করাতে হবে। আমি কার ওপর বিশ্বাস রাখব? তদন্তে বেরিয়ে আসবে কীভাবে কী হলো, দুর্বলতা কোথায় ছিল। পুলিশের তদন্ত চলছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এই সচিব বলেন, অন্যবারের থেকে এবার ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রশ্নফাঁস হয়েছে। পরবর্তী পরীক্ষা শুরুর আগে আরও কীভাবে মনিটরিং বাড়ানো যায়, সেই ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গে সব শিক্ষা বোর্ডগুলোকে আরও তৎপর থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা হয়। তবে করোনার কারণে এবারও পেছানো হয় বড় এই পাবলিক পরীক্ষা। পরবর্তীকালে গত ১৯ জুন পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কারণে তা আবারও পিছিয়ে যায়। সবশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর সারাদেশে একযোগে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়।

এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দুই ঘণ্টা পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। এরপর ১০ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এসএএস/আইএইচ