images

শিক্ষা

পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হলো শহীদ আনাসের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১২ পিএম

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের লেখা একটি চিঠি সংযুক্ত করা হয়েছে। বইটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর শেষ প্রচ্ছদে শহীদ আনাসের হাতে লেখা চিঠিটির একটি ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ছবিটির নিচে ক্যাপশন হিসেবে লেখা রয়েছে ‘মা-কে লেখা জুলাই আন্দোলনে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠি’।

জানা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ৫ আগস্ট শাহরিয়ার খান আনাস একটি চিঠি লিখে আন্দোলনে যোগ দেন। সেদিনই রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। একটি বুলেট তার বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। শহীদ হওয়ার পরপরই তার লেখা চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত চিঠিতে আনাস লিখেছেন, ‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয়, সে-ই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই। —আনাস।’

শহীদ আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। পাঠ্যবইয়ে আনাসের চিঠি স্থান পাওয়ায় তারা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, এটি শুধু আনাসের ব্যক্তিগত চিঠি নয়, বরং জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত সকল মানুষের কণ্ঠস্বর ও আকুতি।

এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা তুলে ধরতেই শহীদ আনাসের চিঠিটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার নির্দেশনায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তার মতে, শাহরিয়ার খান আনাসের মতো শত শত তরুণের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই দেশ ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে। এ কারণে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে চিঠিটি ছাপানো হচ্ছে।

এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ে ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ‘স্বাধীন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান’ শিরোনামের নতুন অধ্যায়ে এসব বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অষ্টম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বই থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়া হয়েছে।

এম/এফএ