নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৭ পিএম
ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের প্রস্তাবিত খণ্ডিত অধ্যাদেশ বাতিল ও পূর্বের মতো কলেজিয়েট মডেলে রাখার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন জানিয়েছেন সাত কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং সচেতন অভিভাবকবৃন্দ।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দেশের দৈনিক পত্রিকায় এই আবেদন প্রচারিত হয়।
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও মিরপুর বাংলা কলেজকে নিয়ে প্রস্তাবিত খণ্ডিত অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকরা।
আবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব, প্রশাসনিক জটিলতা ও একাডেমিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে পরবর্তীতে একটি স্বতন্ত্র অ্যাফিলিয়েটেড বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি বাস্তবায়নে নানা অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, নতুন করে খণ্ডিত কাঠামো তৈরি করলে উচ্চশিক্ষা আরও সংকটে পড়বে।
আবেদনকারীরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে সাত কলেজকে খণ্ডিত করার সুপারিশ করে। অথচ সাত কলেজের অবকাঠামো, শিক্ষকসংখ্যা, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, লাইব্রেরি ও আবাসন সুবিধা পৃথক পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
আবেদনে আরও বলা হয়, একক ক্যাম্পাসে দুটি ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। একই স্থানে প্রশাসন, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, লাইব্রেরি, আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভাগাভাগি করতে গিয়ে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আবাসন ব্যবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে পরীক্ষাকেন্দ্র, ক্লাস ও প্রশাসনিক কাজের জন্য তাদেরকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে হবে, যা সময়, অর্থ ও নিরাপত্তা—সব দিক থেকেই ক্ষতিকর। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অতিরিক্ত যাতায়াত ব্যয় বহন করা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাত কলেজে বর্তমানে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তাদের বড় একটি অংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, যারা সীমিত আয়ের মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। খণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো চালু হলে ফি বৃদ্ধি, আবাসন সংকট ও প্রশাসনিক ব্যয়ের চাপ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ার ঝুঁকি বাড়াবে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, সাত কলেজ দেশের উচ্চশিক্ষায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ নারী শিক্ষায় বিশেষ অবদান রেখেছে। এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে খণ্ডিত করে নতুন সংকট তৈরি না করে পূর্বের মতো কলেজিয়েট মডেলে রেখে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাফিলিয়েটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালনার দাবি জানান তারা।
আবেদনে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, দেশের উচ্চশিক্ষার স্থিতিশীলতা এবং নারী শিক্ষার অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত খণ্ডিত অধ্যাদেশ বাতিল করা হোক। পাশাপাশি সাত কলেজের বিদ্যমান কাঠামো, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে পূর্বের মতো কলেজিয়েট মডেলে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাফিলিয়েটেড বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
আবেদনকারীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নিলে দীর্ঘদিনের শিক্ষা সংকট নিরসন হবে এবং শিক্ষার্থীরা স্বস্তির সঙ্গে তাদের শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারবে।
এম/জেবি