নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম
৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। দীর্ঘ সময় পর এমন আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সকাল থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে, তবে বাইরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও হলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে ভোট দিচ্ছেন। দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা মেইনগেট, তালাইমারি, বিনোদপুর, অক্ট্রোয় মোড়, বুধপাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন ও কড়ইতলা ওভারপাস এলাকায় সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখা গেছে। কাজলা গেটের উল্টো পাশে যুবদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়, তাদের কাছাকাছি কাজলা পানির পাম্প এলাকায় অবস্থান করে জামায়াত-শিবিরের সমর্থকরা। বিশ্ববিদ্যালয় মেইনগেটের কাছে দেখা যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকাগুলোয় মানুষের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। অনেকেই দলীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই ছোট ছোট দলে অবস্থান করেন। কেউ কেউ রাস্তার পাশে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়গামী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সাধারণ মানুষও কৌতূহলবশত থেমে থেমে এসব দৃশ্য দেখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, রাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন রাখতে প্রতিটি কেন্দ্রে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই ভোট দিতে আসছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। অনেকে একে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গণতান্ত্রিক চর্চার পুনরুজ্জীবন হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, ক্যাম্পাসের বাইরের পরিবেশে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক টিম কাজলা, তালাইমারি ও বিনোদপুর এলাকায় টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বহিরাগতদের প্রবেশ সীমিত রাখতে গেটগুলোয় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে প্রত্যাশা ও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তা প্রশাসনকে উৎসাহিত করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে।
তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোটগণনা ও ফলাফল ঘোষণার সময় বাইরের এলাকাগুলোতে রাজনৈতিক সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিতে পারে। এজন্য বিকেলের পর থেকে পুলিশি উপস্থিতি আরও জোরদার করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এখনও উৎসবের আবহ বজায় রয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসন আশা করছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে এবং রাকসু পুনরায় ছাত্র প্রতিনিধিত্বের কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, বহিরাগতদের ব্যাপারটা আমাদের ইউনিভার্সিটির এখতিয়ারের বাইরে। ক্যাম্পাসের বাইরে কি হচ্ছে, না হচ্ছে ওইখানে আমাদের কোনো জুরিসডিকশন নেই। এই কাজটার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছি, তারা যেন একটু নজরদারি রাখেন। যেন বাইরে থেকে কোনো ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়। আমি যেটুকু জেনেছি তারা আন্তরিকতার সঙ্গে সেই চেষ্টা করছেন।
এএইচ/এফএ