images

শিক্ষা

এইচএসসিতে দুই দশকের সবচেয়ে নিম্ন ফলাফল, বোর্ডের দাবি রিয়েল ফলাফল

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)

১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। বিগত ২০ বছরের মধ্যে এবার পাশের হার সবচেয়ে কম। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাশের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছর পাশের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০০৪ সালে ছিল এবারের চেয়ে কম পাশের হার। তাই বিগত ২০ বছরের ইতিহাসে এবার পাশের হার সবচেয়ে কম। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।

শিক্ষাবিদ ও সাবেক বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফলাফল বেশ বিপর্যয় হয়েছে। তবে কেন এমন হয়েছে, সেটি নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। তাঁদের মতে, শিক্ষার্থীদের এমন ফলাফল জাতির জন্য শুভ নয়।

বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবিরের দাবি, যে ফলাফল হয়েছে, সেটাই বাস্তব। পূর্ণ সিলেবাস, পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়াসহ শিক্ষা এখন স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে।

বিগত ২০ বছরের ফলাফলের পরিসংখ্যান
২০০৪ সালে ৪৭ দশমিক ৭৪, ২০০৫ সালে ৫৯ দশমিক ৭৪, ২০০৬ সালে ৬৩ দশমিক ৯২, ২০০৭ সালে ৬৪ দশমিক ২৭, ২০০৮ সালে ৭৬ দশমিক ১৯, ২০০৯ সালে ৭২ দশমিক ৭৮, ২০১০ সালে ৭৪ দশমিক ২৮, ২০১১ সালে ৭৫ দশমিক ০৮, ২০১২ সালে ৭৮ দশমিক ৬৭, ২০১৩ সালে ৭৪ দশমিক ৩০, ২০১৪ সালে ৭৮ দশমিক ৩২, ২০১৫ সালে ৬৯ দশমিক ৬০, ২০১৬ সালে ৭২ দশমিক ৪৭, ২০১৭ সালে ৬৮ দশমিক ৯০, ২০১৮ সালে ৬৬ দশমিক ৬৪, ২০১৯ সালে ৭৩ দশমিক ৯৩, ২০২০ সালে ৯৯ দশমিক ৯০, ২০২১ সালে ৯৫ দশমিক ২৬, ২০২২ সালে ৮৫ দশমিক ৯৫, ২০২৩ সালে ৭৮ দশমিক ৬৪ এবং ২০২৪ সালে ৭৭ দশমিক ৭৮।

দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেননি। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার শূন্য। গত বছর শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৫টি। আবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে এক হাজার ৪৩টি। সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে এবার ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটেছে।

ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এইচএসসির এমন ফলাফলের পেছনে কয়েকটি কারণ দায়ী বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। বিগত কিছু বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ ফলাফল কমেছে—এটা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। তাঁদের মতে, শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ এবারের ফলাফলে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগের সময়ে সম্ভবত খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় নির্দেশনা ছিল, যার ফলে ভালো ফলাফল দেখা গিয়েছিল। তেমন নির্দেশনা থাকলে তা জাতির জন্য ক্ষতিকর ছিল। আগে অনেকেই ৩০ বা ৩১ নম্বর পেলে বিশেষ বিবেচনায় পাশ করিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল, ফলে পাশের হার বেশি হতো। এখন যে ফলাফল এসেছে, সেটাই বাস্তব ফল। তবে পাশের হারে এত বড় পার্থক্যের কারণ নিয়ে গবেষণা করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, কিছু শিক্ষক খুব ভালো হলেও অধিকাংশ শিক্ষকের পাঠদানের মান ভালো নয়। তবুও তাঁদের পড়ানোয় আগের ফল ভালো হয়েছিল। তাই এবার ফলাফলের পার্থক্য কেন হলো, তা একটি নিরপেক্ষ সংস্থা দিয়ে গবেষণা করে দেখা উচিত। তাহলে ফলাফল বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপক দাস বলেন, গত দুই বছরের আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা ঘটনার প্রভাব পড়েছে শিক্ষায়। তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এইচএসসির ফলাফলে। এছাড়া বর্তমানে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ঠিকভাবে ক্লাস নেন না, আর সরকারি কলেজে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে পড়াশোনার মান কমে গেছে। এসবের সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে এইচএসসির ফলাফলে।

এদিকে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল সবাইকে বিস্মিত করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেন, এতদিন ফল ভালো দেখাতে গিয়ে শিক্ষার প্রকৃত সংকট আড়াল করা হয়েছে। এই ফলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এবারের ফলকে আমরা আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে দেখছি। ফলাফল কেন খারাপ হলো, তা পর্যালোচনা করে বের করা হবে। শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য এবার প্রাপ্য নম্বরই দেওয়া হয়েছে।

এএসএল/এআর