নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৩ পিএম
৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর)। কিন্তু ক্যাম্পাস যেন নিঃশব্দ। প্রার্থীদের নির্বাচনি পোস্টার নেই, ব্যানারগুলো ধুলোর আড়ালে ঢাকা। হল ও একাডেমিক ভবনে শিক্ষার্থীদের হট্টগোলও নেই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু, জাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন সরগরম ছিল, তার তুলনায় রাবি ক্যাম্পাস অনেকটা নীরব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ বাতিল হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে ভোটের উত্তেজনা কমে গেছে। সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল নানা উদ্দীপনা। বিভিন্ন হল ও একাডেমিক ভবন পোস্টার এবং ব্যানারে সাজানো হয়েছিল। তখন শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে প্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নেয়। এখন নির্বাচনের আগের দিন সেই উচ্ছ্বাস ম্লান হয়ে গেছে।

ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশ পেতো। দীর্ঘদিন পর হলেও নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কারণে এখন সেই উচ্ছ্বাস কমে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাশরুর হাসান জানান, প্রার্থীদের প্রচারকাজ শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। ক্লাস না থাকায় অনেকে হল থেকে বের হননি। গত মাস নির্বাচনের আগের দিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক উৎসমুখর ছিল। এখন ক্যাম্পাসে উত্তেজনা অনেক কম।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান বলেন, ক্লাস বা পরীক্ষা না থাকায় সবাই হল থেকে বের হচ্ছে না। তবে সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বাড়তে পারে এবং ভোটের সময় কিছুটা উত্তেজনা বাড়তে পারে।
নির্বাচন কমিশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাকসুতে একজন প্রধান রিটার্নিং অফিসার এবং ছয়জন রিটার্নিং অফিসার রাতদিন কাজ করছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ছয়জন নির্বাচন কমিশনার ভোটের পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করছেন।
রাবি ক্যাম্পাসে বুধবার শিক্ষার্থীরা সাধারণত ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও প্রকাশ্য উদ্দীপনা বা নির্বাচনি প্রচার কার্যক্রম দেখা যায়নি। নির্বাচনের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে যে ভোট প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে ভোট দিতে পারবেন।
প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনের আগের দিন বুধবার ক্যাম্পাসে নীরবতা বিরাজ করলেও ভোটের দিন ভোটাররা সক্রিয়ভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এই নির্বাচনের ফলাফল শিক্ষার্থীদের রাজনীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন, যার মধ্যে ৩৯.১ শতাংশ নারী এবং ৬০.৯ শতাংশ পুরুষ। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি ভোটকেন্দ্রে। কেন্দ্রীয় রাকসুর ২৩টি পদে ৩০৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য পদ। সিনেটে পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
একইভাবে ১৭টি হল সংসদের ২৫৫টি পদে মোট ৫৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটারদের মধ্যে ১৭ হাজার ৫৯৫ জন পুরুষ। ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় রাকসু এবং হল সংসদে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন।
এএইচ/ক.ম