নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪১ এএম
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল, বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর)। এই নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা ও প্রত্যাশা। নেতৃত্ব বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়া যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার, স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের প্রতিফলন হয়— এমনটাই বলছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাই নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
জাকসুর এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন মোট ১১ হাজার ৯১৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ছাত্রী। ভোটগ্রহণ হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ২১টি হলে ২২৪টি বুথে ভোট নেওয়া হবে। প্রতি ২০০ ব্যালট পেপারের জন্য থাকবে একটি করে ব্যালট বাক্স। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের ব্যালট বাক্স আলাদাভাবে চিহ্নিত থাকবে।
নির্বাচন ঘিরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৬৭ জন পোলিং অফিসার ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং অফিসার। নির্বাচনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ২১ জন রিটার্নিং অফিসার। নিরাপত্তায় থাকবে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও সেনাবাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি গেটে এক হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি বুথের আশেপাশে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা।
ভোটগ্রহণের দিন যেসব শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে, তাদের দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ২১ জন অধ্যাপকের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং টিমও গঠন করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে একটি বিশেষ কমিটিও।
এবার কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। হল সংসদের জন্য প্রার্থী সংখ্যা ৪৪৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন এবং জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) পদে ৮ জন। তবে শেষ মুহূর্তে জিএস পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া। অন্যদিকে, আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়।
তবে দুইটি হলে (বেগম সুফিয়া কামাল হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল) হল সংসদের নির্বাচন হচ্ছে না। কারণ, এই দুই হলে অধিকাংশ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সুফিয়া কামাল হলে ১৫টি পদের মধ্যে ১০টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন, বাকি পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ছয়টি পদে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং বাকি নয়টি পদেও কোনো প্রার্থী নেই। তাই এই দুটি হলে কেবল কেন্দ্রীয় সংসদের ভোটগ্রহণ হবে।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের প্রার্থীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কেন্দ্রীয় সংসদের ১৬৩ জন এবং হল সংসদের ৪০৩ জন প্রার্থী ডোপ টেস্টে অংশ নিলেও ৫৬ জন প্রার্থী নমুনা জমা দেননি। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এদিকে, ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনা ও অতিরিক্ত ব্যালট সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বেশ কয়েকটি ইশতেহার বাস্তবতাবিবর্জিত এবং নকলপ্রবণ।
নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা পাঁচ সদস্যের কমিশন ইতোমধ্যে প্রার্থীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। তারা জানিয়েছে, ব্যালট পেপারে টিক চিহ্ন দিয়ে ভোট দিতে হবে। এবং যথাযথভাবে গণনার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিন দশকের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও আগ্রহ অভাবনীয়। এই নির্বাচন শুধু নেতৃত্ব তৈরির জায়গা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভেঙে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের একটি নজির হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
এইউ