images

শিক্ষা

ডাকসু নির্বাচনে নারী প্রার্থীরা কতটা নিরাপদ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:২১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নেওয়া নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে চলমান হেনস্তা, সাইবার বুলিং ও ধর্ষণের হুমকির ঘটনায় উঠেছে নিন্দার ঝড়। বিভিন্ন প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া একাধিক নারী প্রার্থী নিয়মিতভাবে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, ভয়ভীতি এবং অনলাইনে যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নয়, ইনবক্সেও আসছে হুমকি। এমনকি তাদের ছবি এডিট করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে।

নারী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন উমামা ফাতেমা, ফাতেমা তাসনিম জুমা, উম্মে সালমা তামান্না, ইসরাত জাহান ইমু, আফসানা আক্তার, ফারিয়া মতিনসহ আরও অনেকে। তাদের প্রত্যেকেই নানা রকম মানসিক নির্যাতনের মুখে পড়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি তাদের রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করছে।

বিশেষ করে শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে প্রার্থী হওয়ায় ফাতেমা তাসনিম জুমা এবং উম্মে সালমা সবচেয়ে বেশি অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জুমা অভিযোগ করেন, তাকে অন্তত ৬৯৩ বার ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের প্রোফাইল ছবি বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ পেজে ব্যবহার করে বানানো হচ্ছে অশ্লীল কনটেন্ট। একই অভিযোগ করেছেন উম্মে সালমাও।

বিষয়টি নিয়ে শিবির-সমর্থিত জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই দুই নারী প্রার্থীর ওপর হওয়া প্রতিটি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও হুমকির স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তারা সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন। তিনি সরাসরি এসব ঘটনার জন্য ছাত্রদল-সমর্থিত নেতাকর্মীদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, ফেসবুক আইডিগুলোতে ছাত্রদল ও বিএনপির পদবিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে একই ধরনের অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন বামধারার নারী প্রার্থীরাও। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসরাত জাহান ইমু, ফারিয়া মতিন, নুজিয়া হাসিন রাশাসহ আরও অনেকে। তারা অভিযোগ করেন, তাদের ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে অনলাইনে।

chatradal

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটেছে এক রিটকারী নারী শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে। ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জিএস পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করার পর আলী হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে তাকে ‘গণধর্ষণের পদযাত্রা’ দেওয়ার হুমকি দেন। এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ছড়ায় সামাজিক মাধ্যমে। আলী হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র।

ছাত্রদলের দাবি, আলী হোসেন ছাত্রশিবিরের নেতা। যদিও শিবির এই অভিযোগ অস্বীকার করে তার পক্ষে প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। তারা দাবি করে, ছাত্রদলের এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরে আলী হোসেন নিজেই একটি ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন, তিনি কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নন। তবে তিনি নিজের মন্তব্যের দায়ও অস্বীকার করেননি।

এই ঘটনার প্রতিবাদে টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। মিছিল শেষে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর লাগাতার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও হুমকি আসছে। চলাফেরা, পোশাক, মতপ্রকাশ— সব কিছুর স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। অথচ প্রশাসন এখনো অভিযুক্ত আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সে এখনো ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করেছে। প্রথমটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ের অধীনে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষ কমিটি, যার আহ্বায়ক করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ মাহবুব কায়সারকে। অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া এবং মো. রেজাউল করিম সোহাগ। দ্বিতীয় কমিটি গঠন করেছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশন। দুই সদস্যের এই তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক কাজী মোস্তাক গাউসুল হক এবং সদস্য করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর জাহাঙ্গীর আলমকে। দুই কমিটিকেই আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, এসব ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই ঘটছে। প্রশাসন যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত, তাহলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। তিনি এসব ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন।

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদপ্রার্থী উম্মে সালমা বলেন, ছাত্রশিবিরের প্যানেলে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই আমরা নানাভাবে হেনস্তা হচ্ছি। যেসব আইডি থেকে এসব কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের পরিচয় জড়িত। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এইউ