নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম
স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আহত শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা।
রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় এ তথ্য জানান চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বেলায়েত হোসেন। তিনি জানান, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৩ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। আরও অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস থেকে একে একে নামানো হয় আহত শিক্ষার্থীদের। এদের অনেককে স্ট্রেচারে করে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। আবার স্ট্রেচার ছাড়াও শিক্ষার্থীরা কোলে করে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীদের জরুরি বিভাগে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ক্যাজুয়ালিটিসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এদের কারও মাথায় জখম, কারও শরীর রক্তাক্ত, কেউ হাতে কিংবা শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন আরবি বিভাগের ফুয়াদ হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শাওন, ইতিহাস বিভাগের তাহসান হাবিব, লোকপ্রশাসনের আশরাফ রাতুল, গণিতের লাবিব, ইংরেজির হাসান জুবায়ের হিমেল, অর্থনীতির নাহিন মুস্তফা, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আল-মাসনুন, ইসলামিক স্টাডিজের আশিক মিয়া, দর্শনের মাহিন ও তামিম, সমাজতত্ত্বের হুমায়ুন কবির, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের রিদুয়ান, অ্যাকাউন্টিংয়ের রিফাত ও রিপন, বাংলার সাইদুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইয়েন।
তাদের অনেকে হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কেউ কেউ অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছেন। এদের মধ্যে রাজিউর রহমান রাজু, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আল মাসনূন ও ইমতিয়াজ হোসেনসহ অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক সাব্বির হোসেন জানান, মাসনূনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নাম্বার রাস্তা স্থানীয়দের দখলে ছিল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিজাউর রহমান বলেন, সংঘর্ষে ৬০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ধারালো অস্ত্রের কোপ খেয়েছেন। কেউ কেউ চোখের নিচে ঘুষি ও আঘাতের কারণে রক্তপাত হচ্ছে। তাদের ক্ষতস্থানে সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. কোরবান আলী ও নাজমুল হোসেইন এবং নিরাপত্তা প্রধান আহত হয়েছেন।
আহতদের সঙ্গে থাকা চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন উর রশীদ মামুন বলেন, স্থানীয়দের হামলায় ৬০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অনেকে চবির হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

চবি মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান ঢাকা মেইলকে বলেন, বহু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অবস্থা গুরুতর আমরা তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
গতকাল শনিবার (৩০ আগস্ট) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় জোবরা গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ, চবির নিরাপত্তা বাহিনীর এবং প্রক্টরের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এর জের ধরে রোববার (৩১ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেইট এলাকায় স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। শুরুতে গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীরা পরম্পরকে ধাওয়া পালটা ধাওয়া হয়। উভয় দিক থেকে মুহুর্মুহু ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
পরে গ্রামের লোকজনকে রড, রামদাসহ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করে। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। কয়েকজন ছাত্রকে কুপিয়ে একটি ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়। আহত শিক্ষার্থীদের প্রথমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে গুরুতর আহত অনেককে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস, অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের চমেক হাসপাতালে আনা হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষ শুরুর প্রায় তিন ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুরু থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকলে গ্রামের লোকজন শিক্ষার্থীদের এভাবে আক্রমণ করতে পারতো না।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুরে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এরপরও ঘটনাস্থলের দুই পাশে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী পরম্পরের মুখোমুখি অবস্থান রয়েছে। সেখানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। থেমে থেমে সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে বলে জানান স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আইকে/জেবি