images

শিক্ষা

ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা কী

১৭ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৫ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু) বলা হয় দেশের দ্বিতীয় সংসদ। এখান থেকেই যুগে যুগে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দেশের নেতৃত্বে গেছেন এবং সাধারণ মানুষের পথ দেখিয়েছেন। ডাকসু ও হল সংসদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। স্বাধীনতার পর ৫২ বছরে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৮ বার। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ২০১৯ সালে, সেটিও শেষ হয়েছিল বিতর্কের মধ্য দিয়ে; সুষ্ঠু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে যেন অলীক স্বপ্ন হয়ে উঠেছিল।

সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ ছয় বছর পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ডাকসুর তফসিল ঘোষণা, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ও মনোনয়ন গ্রহণের শেষ পর্যায় শেষ হয়েছে। প্রার্থীরা ভোট পেতে প্রচারণা চালাচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপ করছেন এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইছেন। ইতিমধ্যেই অনেক প্রার্থী নিজেদের ইশতেহার প্রকাশ করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আশার বাণী দিয়েছেন।

ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী আশা করছে এবং কেমন ডাকসু চাইছে, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ডজনখানেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা মেইল ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী নুজাইমা নার্গিস প্রিয়ন্তী বলেন, ‘আমরা চাই এমন একটি ডাকসু, যা সত্যিই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে। প্রার্থীদের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা শুধু প্রতিশ্রুতির বন্যা নয়, বরং বাস্তব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ। আবাসন সংকট, লাইব্রেরির সীমাবদ্ধতা, ক্লাসরুম ও শিক্ষা সুবিধার অভাব নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখতে চাই।’

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে যুক্ত হলো নতুন দুটি ভোটকেন্দ্র

‘আমরা চাই তারা ক্যাম্পাস রাজনীতির সহিংসতা বন্ধ করে সংলাপ ও সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলুক। সবচেয়ে বড় কথা, তারা যেন দলীয় স্বার্থ নয়, ছাত্রস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। আমাদের আশা, নতুন ডাকসু হবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য।’

অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেধা হোসাইন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে চলাফেরায় যেন আর কোনো ভয় বা অনিশ্চয়তা না থাকে। হোস্টেল থেকে লাইব্রেরি, টিউশন থেকে বাসায় ফেরার পথে—সব জায়গায় নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা, প্রার্থীরা নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবে সহায়ক ব্যবস্থা ও সেল গঠন করবে। আমরা চাই এমন এক ডাকসু, যেখানে নারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ মনে করবে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম বলেন, ‘ডাকসু-কেন্দ্রিক অনেক প্রার্থীর ইশতেহার দেখছি। সবার ইশতেহারে প্রায় একই ধরনের কথাবার্তা এসেছে—যেমন: খাবার-দাবারের মান, আবাসন, নিরাপদ ক্যাম্পাস। এগুলো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর পাশাপাশি আমরা চাই, একাডেমিক এক্সিলেন্সে মনোযোগ দেওয়া হোক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা হোক। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আশা রাখি, ডাকসুতে নির্বাচিতরা একাডেমিক উন্নয়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেবে।’

আবাসিক হলের সিট সংকট নিয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী রামিসা রহমান বলেন, ‘সত্যিকারের শিক্ষার্থীবান্ধব আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক। হলগুলোতে সিট বণ্টনে স্বচ্ছতা থাকবে, যাতে কেউ দলীয় পরিচয়ের কারণে বঞ্চিত না হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন ন্যায্যভাবে থাকার সুযোগ পায়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন: ষষ্ঠ দিনে মনোনয়নপত্র নিলেন ৬৪ জন

নির্বাচনী প্রার্থীদের ইশতেহার নিয়ে রামিসা বলেন, ‘খাবার, আড্ডাবাজি, পড়াশোনার পরিবেশ—সবকিছু নিয়েই ডাকসুর নজর থাকা জরুরি। হলের অব্যবস্থাপনা, দখলবাজি ও সিন্ডিকেট রাজনীতি বন্ধ করতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা চাই প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে সত্যিকারের শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব গড়ে তুলুক।’

এমআইএস বিভাগ ও বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শেখ সামিদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয় তারা মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি। আমরা তাদের কাছে ক্যাম্পাসকে রাজনৈতিক বলয় থেকে সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি চাই। অতীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন, আবাসিক হলে গণরুম-গেস্টরুম নামে অপসংস্কৃতির প্রচলন—সবই হুমকিস্বরূপ। ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আমরা এই বিষয়গুলোর স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশা করি।’

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যা বললেন ঢাবি উপাচার্য

ডাকসুর প্যানেল কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে মু. নাসরুল্লাহ ফাহিম বলেন, ‘ডাকসু যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করে, তাই এই সংসদ অরাজনৈতিক হওয়া উচিত। যদি কোনো রাজনৈতিক প্যানেল নির্বাচিত হয়, তাহলে অন্যান্য দল ও মতের শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়, তা নিশ্চিত করে যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা উচিত।’

ডাকসুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি শিক্ষার্থীদের গবেষণা, লেখা ও সম্পাদনায় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ও শিল্পের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার জন্য কাজ করা উচিত।’