images

শিক্ষা

২০০ কোটির তহবিলেও দুঃখ ঘোচেনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)

৩১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৯ এএম

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর কল্যাণ সুবিধা বোর্ডে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষকের আবেদন জমা রয়েছে। শিক্ষকদের আবেদন নিষ্পত্তি হতে আড়াই বছরের মতো সময় লাগে। এই বোর্ডের মাসিক চাহিদা ৬৫ কোটি টাকা হলেও প্রতি মাসে তহবিলে জমা হয় ৫৫ কোটি টাকা। প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ১০ কোটি টাকা এবং বছরে ১২০ কোটি টাকা। 

সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ২০০ কোটি টাকার একটি স্থায়ী তহবিল বরাদ্দ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। তবে এর মাধ্যমে খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বোর্ড সচিব জানান, শিক্ষকদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন তরল অর্থ। স্থায়ী তহবিল গঠনের অল্প টাকা দিয়ে খুব বেশি সুবিধা করা সম্ভব নয়। 

বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘ দিনের জমা পড়া আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় বর্তমানে বোর্ডে বড় অংকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের আগে বিভিন্ন অনিয়মও হয়েছে। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৩০ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। এসব কারণে অবসর গ্রহণের পরপরই কল্যাণ সুবিধার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকদের কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে গত কয়েক মাস ধরে আইবাস ও ইফটির মাধ্যমে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ হারে টাকা প্রদান করছে বোর্ড। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ৪৮ হাজারের বেশি শিক্ষকের আবেদন জমা পড়ে আছে। সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে আছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত জমা পড়ে থাকা আবেদনগুলোর বিপরীতে টাকা অনুমোদন দেওয়া সম্ভব। এছাড়া অসুস্থতা ও হজে যাবেন এমন বিশেষ ক্যাটাগরিতে নিয়মিত আবেদনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। 

আসলাম হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমার বাবার কল্যাণ সুবিধার আবেদন আরও তিন বছর আগে করেছি। কিন্তু টাকা পাইনি। বিভিন্ন সময় বোর্ডে এসে খোঁজ নিয়েছি। তারা বলে এখনো সিরিয়াল আসেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ৪৮ হাজারের বেশি শিক্ষকের আবেদন জমা পড়ে আছে। সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে আছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত জমা পড়ে থাকা আবেদনগুলোর বিপরীতে টাকা অনুমোদন দেওয়া সম্ভব। এছাড়া অসুস্থতা ও হজে যাবেন এমন বিশেষ ক্যাটাগরিতে নিয়মিত আবেদনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। 

আসলাম হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমার বাবার কল্যাণ সুবিধার আবেদন আরও তিন বছর আগে করেছি। কিন্তু টাকা পাইনি। বিভিন্ন সময় বোর্ডে এসে খোঁজ নিয়েছি। তারা বলে এখনো সিরিয়াল আসেনি।

 তিনি আরও বলেন, আসলে অবসর নেওয়ার পর বয়স্ক চাকরিজীবীরা নানা সমস্যায় পড়েন। বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। এদিকে সারা জীবনের ত্যাগ ও কষ্টের টাকা সঠিক সময়ে পাচ্ছে না। অনেকে মারা যায় তারপর টাকা পায়। এই বোর্ডের দিকে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা খুবই জরুরি। 

পাবনার শিক্ষক রহিম মিয়া। তার ছেলে রফিক প্রায় পাঁচ বার ঢাকা এসেছেন আবেদন নিষ্পত্তির খোঁজ নিতে। কিন্তু গত আড়াই বছরেও তাদের সিরিয়াল আসেনি। বিরক্তি নিয়ে রফিক বলেন, ‘শিক্ষকদের কষ্টের টাকা পেতে এত ভোগান্তি কেন? এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।’ 

অবসর বোর্ডের টাকা যেভাবে তহবিলে জমা হয়
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ৪ শতাংশ চাঁদার অর্থ একটা তহবিলে জমা হয়। সেটির লভ্যাংশসহ সরকারের বিভিন্ন সময়ের অনুদান এই তহবিলে জমা হয়। দেশের প্রায় ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সময়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট আর্থিক সেবা দিয়ে থাকে। 

২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ, সংকট দূর হবে অল্প 
গত ২৮ মে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে মূলধন তহবিল গঠনে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে এই টাকা সরাসরি ব্যয় করতে পারবে না বোর্ড। এই টাকার একটি বন্ড কিনে সেটির লভ্যাংশ ব্যয় করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। 

বর্তমানে ২০০ কোটি টাকার একটি বন্ড কিনে সোনালী ব্যাংকে স্থায়ী তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই বন্ড থেকে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার মতো পাবে কল্যাণ বোর্ড। কিন্তু বোর্ডের বার্ষিক ঘাটতি ১২০ কোটি টাকা। এই টাকা পেলে খুব সামান্য ঘাটতি মিটবে। তবু বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঘাটতি থেকেই যাবে।  

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) শরিফা নাছরীন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের বোর্ডের আর্থিক সংকট কাটানোর জন্য আগে প্রয়োজন একটা বড় অংকের তরল টাকা। তারপর স্থায়ী তহবিল গঠন করলে শিক্ষকদের জন্য ভালো হবে। এতে আমরাও শিক্ষকদের আবেদনের পরপরই টাকা দ্রুত দিতে পারব।’

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৩০ কোটি টাকা আটকা
কল্যাণ সুবিধা বোর্ডের সব টাকা ও লেনদেন হতো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়েছে। এতে কল্যাণ বোর্ডের ৩০ কোটি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ব্যাংকটি। যার ফলে সমস্যায় ভুগছেন শিক্ষকরা।

এই ব্যাংকে এখনো কিছু এফডিআর রয়েছে, সেগুলোর লভ্যাংশ দিলেও বোর্ডের জমা থাকা ৩০ কোটি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে বলে জানান কল্যাণ বোর্ডের সচিব। 

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে। তাই অনেক গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরকারি সহায়তা পেলে সকল গ্রাহকদের টাকা দেওয়া হবে।’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) শরিফা নাছরীন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ব্যাংকে যতক্ষণ টাকা রয়েছে আমরা আবেদন নিষ্পত্তি করছি। গত কিছু দিন আগেই অসুস্থ ৪২০ জন শিক্ষকের একটা লটের অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া আইবাস প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাতশ শিক্ষকের আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে।’

শরিফা নাছরীন বলেন, ‘আমাদের বোর্ড থেকে সব সময় শিক্ষকদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকার থেকে বন্ড কেনার জন্য যে টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটি দিয়ে আসলে আমাদের এত বড় আর্থিক সংকট সমাধান করা কঠিন। কারণ বর্তমানে আমাদের প্রয়োজন তরল টাকা। তারপর টাকার প্রয়োজন হিসেবে একটি তহবিল গঠন করলে শিক্ষকরা নিয়মিত টাকা পাবেন।’ 

এএসএল/জেবি