বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
১৭ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আজ ফ্যাসিস্ট রূপ ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. মির্জা গালিব।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কনসোর্টিয়াম (আইআরডিসি) আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের চেতনার ওপর দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ যেভাবে ফ্যাসিবাদী ধারায় প্রবেশ করেছে, তেমনি ভবিষ্যতে জুলাই বিপ্লবের আদর্শকেও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে এনসিপি ফ্যাসিস্ট রূপ নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র রাজনীতি যদি শুধুই পেশিশক্তি নির্ভর হয়ে পড়ে, তবে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আদর্শবিহীন রাজনীতি ছাত্র সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
ড. গালিব বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ— বাইরের কোনো শক্তি নয়।
সেমিনারে জুলাই বিপ্লবকে জাতীয় রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় গুরুত্বে আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের সামনে এগোতে হবে এর ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে। কিছু রাজনৈতিক দল এখনও এই ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি, যা দুঃখজনক বিষয়।
ড. গালিব বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার জরুরি বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে নিজস্ব নেতৃত্ব নির্বাচন অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের মাধ্যমে করতে হবে। মনোনয়ন ভিত্তিক নয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কমিটি গঠন করতে হবে।
ভোটের সংস্কৃতি পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, মার্কা দেখে নয়, যোগ্যতা দেখে ভোট দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নির্ধারণে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান হলো রাজনৈতিক অনিবার্যতা। ৫২, ৭১ এর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমরা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আরেকটি গণঅভ্যুত্থান দেখলাম। ২০২৪ এর নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার হরণ করা হয়েছিল তাই এর চূড়ান্ত পরিণতি হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল যুবক, ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীরা। এই আন্দোলনের হাত ধরে ফ্যাসিবাদ থেকে এ দেশ মুক্ত হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক সমাজের উত্তরণ ঘটাতে চাই। এই আন্দোলনে সবারই মূল লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানো। আগামীর বাংলাদেশে আমরা প্রচলিত ধারার রাজনীতির সংস্করণ চাই।
তিনি সংস্কার সম্পর্কে বলেন, জুলাই বিপ্লবে আপনি অংশগ্রহণ করেছিলেন; এখন নতুন বাংলাদেশ গড়তে আপনাকে অংশগ্রহণ করতে হবে। যদি আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গড়তে পারি; তবে আমাদের চূড়ান্ত অর্জন সফল হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ২০০৮ সালের নির্বাচন আমার মতে স্বচ্ছ ছিল না। বিভিন্ন সময়ে আমাদের সুযোগ এসেছে যা আমরা হারিয়েছি তার থেকে শিক্ষা নিয়ে জুলাইয়ের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের মূলত ভালো শাসক, ভালো লোক ও ভালো নাগরিক দরকার। যাতে ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনগুলো।
অনুষ্ঠানটি আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় আইআরডিসি’র সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হেসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জবি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমীন, জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।