মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)
০৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:২২ এএম
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া পাঠ্যবইয়ের মান যাচাইয়ে পরিদর্শন এজেন্সি নিয়োগ দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে গত বছরের পাঠ্যবই ছাপিয়ে কোটি টাকা লুটপাটসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ফলে এবার এনসিটিবি নিজেও মাঠ পর্যায়ে মান যাচাইয়ের কাজ করে। এবার ১৫টি প্রেসের বিরুদ্ধে নিম্নমানের বই ছাপানোর রিপোর্ট দেয় ইন্সপেকশন এজেন্ট। অন্যদিকে ৩০টির বেশি প্রেসে নিম্নমানের বই ছাপানোর প্রমাণ পেয়েছেন এনসিটিবির কর্তকর্তারা। ফলে ইন্সপেকশন এজেন্ট ও এনসিটিবির কর্তকর্তাদের তদন্তে প্রেসের সংখ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
কিছু প্রেস মালিক ইন্সপেকশন এজেন্টদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। অর্থ চাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন তারা।
গত ১৮ জুন এনসিটিবির কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে হাইটেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিস এজেন্সি। তাদের রিপোর্টে ১৫টি প্রেসের নাম রয়েছে। যারা দরপত্রের স্পেসিফিকেশন (নির্ধারিত মান) অনুযায়ী পাঠ্যবই ছাপায়নি। নিম্নমানের কাগজের বই ছাপানোয় অভিযুক্ত প্রেসগুলোর বিরুদ্ধে অর্থদণ্ডসহ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি।
রিপোর্টে ত্রুটিপূর্ণ বইয়ের সংখ্যা হিসেবে বলা হয়, আনন্দ প্রিন্টার্স লি. ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৩০০টি ত্রুটিপূর্ণ, অক্সফোর্ড প্রেস অ্যান্ড পাব. ইবতেদায়ি তৃতীয় শ্রেণির বিজ্ঞান বই ২৪ হাজার ৩৯৭টি, শাফিন প্রেস অ্যান্ড পাব. ভোকেশনাল সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ২৩ হাজার ৬৪৯টি, আমিন আর্ট প্রেস ষষ্ঠ শ্রেণির হিন্দুধর্ম ৪০ কপি, সরকার প্রেস অষ্টম শ্রেণির কৃষি শিক্ষা (ইংরেজি ভার্সন) ১৫ কপি, রেদওয়ানীয়া প্রেস অ্যান্ড পাব. ৯ শ্রেণির ভোকেশনালের ৪৫ হাজার ৪২১, দি গুডলাক প্রিন্টার্স ইবতেদায়ি চতুর্থ শ্রেণির কোরআন মাজিদ ৩০ হাজার ৬৭৬টি, লেটার এন কালার লি ইবতেদায়ি প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩১৪টি, অ্যারিস্টোক্র্যাটস সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং দাখিল ষষ্ঠ শ্রেণির আকাইদ ও ফিকাহ ৪৯ হাজার ৬৬২টি, অনুপম প্রিন্টার্স লিমিটেড মাধ্যমিক নবম শ্রেণির রসায়ন বই ১৯ হাজার ৫৯৫টি, মিলন প্রিন্টিং প্রেস ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত (ইংরেজি ভার্সন) ৩১ হাজার ৬৬৯টি, বর্ণমালা প্রেস নবম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ ৯ হাজার ৫০০টি এবং জীববিজ্ঞান ৩৪ হাজার ৬৫০টি, সুবর্ণা প্রিন্টিং প্রেস নবম শ্রেণির গণিত ২৯ হাজার ৭৫৫টি, মেসার্স ন্যাশনাল প্রেস নবম শ্রেণির গণিত ১৪ হাজার ৫১৫টি ও দোয়েল প্রিন্টার্স দাখিল ভোকেশনাল ১০ম শ্রেণির রসায়ন ৪ হাজার ৯৯৮টি।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, গত বছর মাধ্যমিক স্তরে ১১৬টি প্রেস বই ছাপার কাজ পায়। যাদের মধ্যে বেশিসংখ্যক বই যেসব প্রেস ছাপিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সেভাবে অভিযোগ নেই। কিন্তু ছোট ও মাঝারি মানের প্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে ইন্সপেকশন এজেন্ট।
এদিকে ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে প্রায় ৮ কোটিই নিম্নমানের এমন তথ্য পেয়েছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা। তারা যেসব প্রেসের বই নিম্নমানের পেয়েছেন, এজেন্সির প্রতিবেদনে তাদের নাম নেই। ইন্সপেকশন এজেন্ট অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে বইয়ের মানে ছাড়পত্র দিয়েছে বলে অভিযোগও পাওয়া গেছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, এবারের ইন্সপেকশন এজেন্টেদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রেস মালিক ঢাকা মেইলকে বলেন, ইন্সপেকশন এজেন্টদের সঙ্গে অর্থ লেনদেন না করায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা সঠিকভাবেই বইয়ের কাজ করেছি। এ বিষয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি।
হাইটেক সার্ভের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, ইন্সপেকশন এজেন্টেদের তদন্তের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ প্রেসের বইয়ের মান নিম্ন পেয়েছেন আমাদের কর্মকর্তারা। কিন্তু নিয়োগধারী এজেন্ট দিয়ে যেসব প্রেসের ছাপানো বই নিম্নমানের হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এছাড়া ইন্সপেকশন এজেন্টেদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলোর ব্যাপারেও কাজ চলমান রয়েছে।
চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সদস্যরা শুধু বইয়ের মান নয়, আরও অনেক বিষয় নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। তাদের তথ্যের আলোকে আমরা আগামীতে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারব। এছাড়া ইন্সপেকশন এজেন্ট ভবিষ্যতে কাজে লাগানো হবে কি না সেটার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করছি।
এএসএল/জেবি