বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
১৫ জুন ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম
র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস ও জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
রোববার (১৫ জুন) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষা ও সন্ত্রাস, একসাথে চলে না’; ‘ট্যাগিং এর রাজনীতি, বন্ধ করো করতে হবে’; ‘লীগের কমিটি
মানি না, মানব না’; ‘ফ্যাসিবাদের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো—
১. বাস ও ক্যাম্পাসে র্যাগিংমুক্ত, শিক্ষার্থী বান্ধব উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
২. তথাকথিত জেলা ছাত্রকল্যাণ কমিটির নাম অপব্যবহার করে শিক্ষার্থী হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৩. জুলাই যোদ্ধাদের হুমকিদাতা ও হেনস্থাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
কর্মসূচিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন পরিবেশ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার। কিছু গোষ্ঠী ছাত্রকল্যাণ কমিটির নাম ব্যবহার করে তা হরণ করছে। আন্তঃজেলা বাসগুলোতে জেলা ছাত্রকল্যাণ কমিটিগুলোর যে আধিপত্য রয়েছে তা বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ও ছাত্রকল্যাণের কমিটিগুলোকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করতে হবে।
ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, কোনো শিক্ষার্থী অপরাধ করলে তার বিচার করার অধিকার কেবল প্রশাসনের। কিন্তু এখন বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ভিত্তিক ছাত্রকল্যাণ কমিটির নামে কিছু নেতা নিজেরাই বিচার কাজ শুরু করে দিয়েছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায়।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘ছাত্রলীগ ট্যাগিং’ দিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে। একটি জেলা ছাত্রকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি বা সেক্রেটারি কি কোনো শিক্ষার্থীকে ‘বাসে অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করতে পারেন? এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমেস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাহফিম রাফি বলেন, ১৮তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফয়সাল কামাল ও তানজিম আহমেদ মিথিলকে গত ১৩ জুন নরসিংদী জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘নোঙর’ বাস থেকে বহিষ্কার করার বিষয়টি জানানো হয়। যা একটি স্বেচ্ছাচারমূলক ও ফ্যাসিবাদী আচরণ। শুধু নোঙ্গর বাস নয় আরও অনেক বাসে এই বিষয়গুলো কম-বেশি হচ্ছে। তাই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ এই সমস্যাগুলো দূরীকরণে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছি।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আতাউল্লাহ আহাদ বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যরা এখনও গোপনে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখোশ পরিধান করে বিভিন্ন সংগঠনে প্রবেশ করে ট্যাগিং ও নিপীড়নের সংস্কৃতি চালু করেছে। প্রশাসনকে সোচ্চার হতে হবে এবং এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ভুক্তভোগী গণিত বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানজিম আহমেদ মিথিল বলেন, আমার বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির নাম ব্যবহার করে প্রচারিত ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সামাজিকভাবে অনেক হেনস্তার শিকার হয়েছি। শুধু অভিযোগ নয় নিজ এলাকা ও বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে আমাকে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আবেদন জানাচ্ছি এ সকল কর্মকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
গত ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংদী জেলা ছাত্রকল্যাণ সংগঠনের এক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রকল্যাণ সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় বাস পরিবহন ‘নোঙর’ থেকে দুই শিক্ষার্থীকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নামে বহিষ্কার করা হয়। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এফএ