images

শিক্ষা

কুবি ছাত্রদলের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

২৯ মে ২০২৫, ০৫:০৬ পিএম

মব সৃষ্টি করে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তারা শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর অনুসারী বলে জানা গেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৮ মে) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টে মার্কেটিং বিভাগ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। 

এসময় সংঘর্ষে অংশ নেওয়া সাদেক সরকার ও সাখাওয়াত অরণ্য নামে দুই ছাত্রদলের কর্মীকে এক পাশে নিয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। তখন ঢাকা মেইলের প্রতিনিধি চৌধুরী মাছাবিহ্ এবং দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি আবু শামা তাকে প্রশ্ন করেন, ‘হামলায় অংশ নেওয়া এই ছেলে আপনার কর্মী নাকি?  আপনি এখানে তাকে শেল্টার দিচ্ছেন নাকি?’ তখন শুভ সাংবাদিক আবু শামাকে ধাক্কা দেন।  

এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাফায়েত সজল সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে বাধা দেন। পাশাপাশি শুভর নির্দেশে ছাত্রদল কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের উপর হামলা করেন। ‘সাংবাদিকদের আগে মার’ বলে ধাক্কাতে ধাক্কাতে মুক্তমঞ্চ থেকে গোলচত্বরের দিকে নিয়ে যান। 

এসময় ছাত্রদল কর্মী ও বাংলা বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল মালেক আকাশ, ইংরেজি বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম জয়, মার্কেটিং ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাওহিদ রহমান সাকিব ও তাজওয়ার তাজসহ ২০-২৫ জন হামলায় অংশ নেন। এসময় ঢাকা মেইলের প্রতিনিধি চৌধুরী মাছাবিহ, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি আকাশ আল মামুন হামলার শিকার হন। 

হামলার ভিডিও ফুটেজ নিতে চাইলে চৌধুরী মাছাবিহ’র মোবাইল ছুড়ে ফেলেন বাংলা বিভাগের ছাত্রদলকর্মী সাইফুল মালেক আকাশ। এছাড়া সাংবাদিকদের মারমুখী ভঙ্গিতে ধাক্কা দেন মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রদল কর্মী তাওহিদ রহমান সাকিব। 

ভুক্তভোগী সাংবাদিক চৌধুরী মাছাবিহ্ বলেন, ‘আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রশ্ন করলে ছাত্রদলের সদস্যসচিব শুভ আমাকে ফোনের ভিডিও অফ করতে বলেন এবং তার কর্মী সাইফুল মালেক আকাশ হামলা চলাকালীন আমাকে ধাক্কা দিয়ে মোবাইল টান দিয়ে ফেলে দেন। এতে আমার মোবাইলের ডিসপ্লে ভেঙে যায়।’

ভুক্তভোগী আরেক সাংবাদিক আবু শামা বলেন, ‘আমি মোস্তাফিজুর রহমান শুভকে প্রশ্ন করতে গেলে আমাকে ধাক্কা মারেন। সঙ্গে সঙ্গে অন্য কর্মীরাও আমার উপর হামলা চালান।’

শিক্ষার্থীকে বেল্ট দিয়ে মারা ছাত্রদল কর্মীকে শেল্টার দেওয়ার বিষয়ে সদস্যসচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পেছনে মারামারি হচ্ছিল। আমরা সামনে ছিলাম। এখানে উপস্থিত শিক্ষকরা আমাদের বিষয়টি দেখতে বলেন। যেই ছেলেটি মেরেছিল, তাকে সেখানে আটকে রাখা হয়।’ 

কোন শিক্ষকরা বিষয়টি ছাত্রদলকে সামলাতে বলেছেন- এমন প্রশ্নে তিনি অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ড. শরীফুল করীম ও ছাত্র পরামর্শক ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মাহবুবের কথা জানান। 

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে কমিটির আহ্বায়ক ড. শরীফুল করীম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমার না। আমি কাউকে দায়িত্ব দিইনি এসব করার। আমার কাজ ছিল সকল বিষয় কোঅর্ডিনেট করা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা।’ 

সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা ও তাদের ওপর হামলার নির্দেশ ও ইন্দনের বিষয়টি সদস্যসচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ অস্বীকার করেন। তবে ভিডিও ফুটেজে সরাসরি হামলার সত্যতা রয়েছে। 

এ বিষয়ে মুস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন,  ‘কেউ হামলা করে থাকলে তাদের বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম এম শরিফুল করিম বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে সংবাদ সংগ্রহ করা, সেখানে এ ধরনের ঘটনা কোনো ভাবেই কাম্য না।’

সাংবাদিকদের উপর হামলার বিষয়ে প্রক্টর আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব।’

এই বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এএইচ