বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
২১ মে ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় শিক্ষার্থী সমাজের কাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের লক্ষ্যে ‘জকসু কী, কেন ও কীভাবে?’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২১ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে আয়োজিত এই সভায় বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ অধ্যাপক রইস উদ্দিন, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির আহমেদ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রফিকউজ্জামান ফরিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জবি শাখার আহ্বায়ক ইভান তাহসিভ।
সভায় বক্তারা দীর্ঘ দিন ধরে জকসু নির্বাচন না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- আবাসন সংকট, পরিবহন সমস্যা, ক্লাসরুমের অপ্রতুলতা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগের অভাবের কথা তুলে ধরেন।
অধ্যাপক রইস উদ্দিন বলেন, জকসু নেই বলেই জবি বঞ্চনার শিকার হয়েছে। এটি না থাকার কারণে প্রশাসন বিভিন্ন সুযোগ পেয়ে দুর্নীতি করেছে। জকসু সকলের প্রাণের দাবি। জকসু গঠন হলে যারা প্রতিনিধি হবে তারা সকল শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করবে তাদের মাধ্যমে সবার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
সহকারী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের বৈধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অবিলম্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জকসু নির্বাচনের প্রয়োজন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জবি শাখার আহ্বায়ক ইভান তাহসিব বলেন, আরেকটা ছাত্রলীগ যেন না জন্মাতে না পারে তার জন্য জকসুর কোনো বিকল্প নেই। জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে এবং সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করতে অপরিহার্য।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জবি শাখার সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ২৪ পরবর্তী চিন্তার বিকাশ ছাত্র সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নেতৃত্ব তৈরির জন্য ছাত্র সংসদ একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। অবাধ চিন্তার মাধ্যমে সাম্য ধারার সমাজ গড়তে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা জরুরি। কেননা ছাত্র নেতারাই পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। আমাদের চিন্তা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে, তবে আমাদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে অন্যান্য জবি ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখানে রাজনৈতিক সহাবস্থান বিরাজ করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ছাত্র সংসদের মাধ্যমে ছাত্ররা কথা বলার অধিকার পায়। ছাত্র সংসদ দেশের দ্বিতীয় সংসদ, যার মাধ্যমে ছাত্ররা ভবিষ্যত রাজনীতিবিদ হওয়ার প্রস্তুতি পায়। ছাত্র সংসদ কোনো নির্দিষ্ট দল বা ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করে না। নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থান থেকে ২৪ এর জুলাই আন্দোলনে ছাত্র নেতারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তাই ছাত্র সংসদের কোনো বিকল্প নেই। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন অঙ্গনে নেতা তৈরি করতে পারবো। বাংলাদেশকে উন্নত করতে দেশের সকল ছাত্র সংসদ কার্যকর করা জরুরি।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সংগঠক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল মুরাদ বলেন, জকসু না থাকার কারণে ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ধুয়াশার সৃষ্টি হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার জন্য ছাত্র সংসদের কোনো বিকল্প নেই। ছাত্র সংসদ কার্যকর থাকলে সন্ত্রাস এবং দখলদার মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে উঠবে।
এছাড়াও অন্যান্য বক্তারা জকসু নির্বাচনের পক্ষে তাদের বক্তব্য পেশ করেন।
সভায় অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরাও জকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থী।
২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে জকসু নির্বাচনের দাবি তোলা হয়।
এএইচ