images

শিক্ষা

‘অবসর সুবিধার টাকা না পাওয়ায় বাবার চিকিৎসাটাও হচ্ছে না’

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)

১৩ মে ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম

হাতে কয়েকটি ফটোকপি করা কাগজ, চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। একা বসে সম্ভবত নিজের সঙ্গেই আলাপ করছেন। কামরুল হাসান নামের এই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয় রাজধানীর পলাশী-নীলক্ষেতের রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে। তিনি বরিশাল সদর থেকে ঢাকায় এসেছেন বাবার কল্যাণ সুবিধার টাকার খোঁজ নিতে। এর আগেও কয়েক বার এসেছেন, তবে এখনো টাকা পাওয়ার সুখবর মেলেনি।

কামরুল একা নন, এমন অনেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা হয় বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ভবনে কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ডের কার্যালয়ে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে কামরুল তার বাবার কল্যাণ সুবিধার জন্য আবেদন করেন। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো টাকা পাওয়ার কোনো সুখবর মেলেনি।

কামরুল বলেন, ‘বাবা দীর্ঘদিন মাদরাসায় শিক্ষকতা করে অবসর নিয়েছেন। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। বিভিন্ন অসুস্থতায় চলাফেরা সেভাবে করতে পারেন না। আমাদের সংসারের অবস্থা এমন যে, বাবার ভালো চিকিৎসা করাবো সেই টাকাও নেই। টাকার বড় উৎস বলতে এই কল্যাণ সুবিধার অর্থটাই। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও টাকা না পাওয়ায় বাবার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন

উপাচার্য ছাড়াই চলছে সরকারি-বেসরকারি ৪১ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম

গত বুধবার (৮ মে) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, অফিসের শুরুতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর তালিকা। আরেকটু সামনে গিয়ে হাতের ডানে গ্রন্থাগার ও বামে কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড। সামনে বসা ব্যক্তিদের বেশির ভাগ বয়স্ক শিক্ষক অথবা শিক্ষক পরিবারের কেউ। সবাই মূলত এই ভাতার আবেদন জমা দিতে এবং খোঁজখবর নিতে এসেছেন।

অবসরের পরপরই কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবতা হলো শিক্ষক-কর্মচারীদের এই সুবিধা পেতে দেড় থেকে দুই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কেউ কেউ আরও বেশি সময় অপেক্ষা করেও সেই সুবিধা পাচ্ছেন না।  

Teacher3
দিনের পর দিন ঘুরেও মিলছে না টাকা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) বলছে, বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষকের আবেদন জমা পড়ে আছে। সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রায় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে আছে, ২০২২ সালের মে পর্যন্ত জমা পড়ে থাকা আবেদনগুলোর বিপরীতে টাকা অনুমোদন দেওয়া সম্ভব। এছাড়া অসুস্থতা ও হজে যাবেন এমন বিশেষ ক্যাটাগরিতে প্রায় এক হাজার শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টাকার অনুমদোন দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

চার বিসিএসের চাপে বিপর্যস্ত পিএসসি

সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ৪ শতাংশ চাঁদার অর্থে পরিচালিত সরকারের আর্থিক এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। দেশের প্রায় ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর সময়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট আর্থিক সেবা দিয়ে থাকে। এককালীন তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা দরকার। এরপর প্রতিবছর সরকার ২০০ কোটি টাকা দিলে তা স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) শরিফা নাছরীন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের সব টাকা ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে একটু সমস্যা থাকায় টাকা দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আমরা সব টাকা সোনালী ব্যাংকে ট্রান্সফার করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আশা করি দ্রুতই আবার শিক্ষকরা টাকা পাবেন।’

দেড় বছরেও টাকা না পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের যে পরিমাণ টাকার চাহিদা তার চেয়ে অনেক কম টাকা রয়েছে ফান্ডে। ফলে চাইলেও সময়মত সব শিক্ষককে আবেদনের পরই টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে অনুদান চেয়েছি। সেটা পেলে হয়ত সব শিক্ষককে দ্রুত টাকা দেওয়া সম্ভব হবে।’

ধারাবাহিক সিরিজের প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এএসএল/জেবি